ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হিউজেস

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২৭ নভেম্বর ২০১৪

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হিউজেস

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কেমন আছেন ফিল হিউজেস? বিশ্বজুড়ে অগণিত ক্রিকেটপ্রেমীর উৎসুক জিজ্ঞাসা। কোমায় শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন অসি ব্যাটসম্যান। এতেই উত্তরটা পরিষ্কার। মাথায় অস্ত্রপচার শেষে সেন্ট ভিন্টসেন্ট হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (কোমা) লাইফ সাপোর্টে ২৫ বছর বয়সী হিউজেস। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) ডাক্তার পিটার ব্রুকনার বলেন, ‘হিউজেসের অবস্থা স্থিতিশীল, বিপদ কাটেনি।’ বক্তব্যে ‘স্থিতিশীল’ শব্দটিই কোটি অস্ট্রেলিয়ানের হৃদয়ে আশার সঞ্চার করছে। তাৎক্ষণিকভাবে জটিল অস্ত্রপচারের মাধ্যমে মাথায় জমে যাওয়া রক্ত অপসারণ করা হয়। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের মতে, দুই ঘণ্টাব্যাপী শল্যবিদের ছুরির নিচে সেটি ছিল এক রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি। কারণ মাথায় বলের আঘাত লাগার পর হিউজেস ছিলেন ‘কার্যত ক্লিনিক্যাল ডেড!’ হাসপাতাল থেকে সংবাদ মাধ্যম কোন খবরও উদ্ধার করতে পারছে না। কারণ ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তথ্য গোপন রাখার অনুরোধ জানিয়েছে, যাতে হিউজেসের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন ও বিশ্বব্যাপী অগণিত ভক্ত ভেঙ্গে না পড়ে। এই মুহূর্তে প্রয়োজন কেবলই সহযোগিতা, ঈশ্বর সবা প্রার্থনা। ঘটনা মঙ্গলবার স্থানীয় শেফিল্ড শিল্ডের ম্যাচে। ১৪০ কিলোমিটার গতিতে ধেয়ে আসা পেসার সিন এ্যাবটের বাউন্সারটা হুক করতে গিয়ে চোখ সরিয়ে নিয়েছিলেন বাঁ-হাতি হিউজেস। মাথা ঘুরে গিয়েছিল পেছন দিকে। লাফিয়ে ওঠা বল এসে লাগে ঠিক হেলমেটের নিচে, কানের পেছন দিকে। কয়েক সেকেন্ড হাঁটুতে দু’হাত রেখে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে থাকার পর মুখ থুবড়ে পড়ে যান সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের পিচের ওপর। মিনিট পনেরোর মধ্যে হেলিকপ্টারে করে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। মাইকেল ক্লার্কের ইনজুরিতে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে দলে সুযোগ পাওয়াটা প্রায় নিশ্চিত ছিল। তাই প্রথম শ্রেণীর হলেও গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে হিউজেসের পরিবারের লোকজন উপস্থিতি ছিলেন। তাদের সামনেই মাটিতে লুটিয়ে পড়া, সেখান থেকে কোমায় সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় ...। এই পরিস্থিতিতে দ্রুতগতির বোলিংয়ের বিরুদ্ধে হেলমেট কতটা নিরাপত্তা দিতে পারে, তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। অতীতে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও রয়েছে। বাংলাদেশের ঘরোয়া এক ম্যাচে শর্ট ফরোয়ার্ড লেগে ফিল্ডিং করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন সাবেক ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটার রমন লাম্বা। ১৯৬২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসার চার্লি গ্রিফিথের বল মাথায় লাগায় সাবেক ভারতীয় নরি কন্ট্রাক্টরকে হাসপাতালে টানা ছয় দিন অচেতন থাকার পর ক্রিকেটই ছেড়ে দিতে হয়েছিল। আছে চোখে বলের আঘাতে মার্ক বাউচারের খেলা ছেড়ে দেয়া, আরও বেশি কিছু মারাত্মক দুর্ঘটনার ইতিহাস। কন্ট্রাক্টর বলেন, ‘গা শিউড়ে ওঠে, নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আমি কষ্টটা বুঝি। হিউজেস তুমি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠ।’ অস্ট্রেলিয়া কোচ ড্যারেল লেহম্যান, অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক ও সতীর্থ ব্র্যাড হ্যাডিন হাসপাতালে ছুটে যান, বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক সব তারকা ক্রিকেটার হিউজেসের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি ব্রায়ান লারা বলেন, ‘ক্রিকেট এমন ধরনের খেলা যেখানে সবসময় বিপদের ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে ব্যাটসম্যানদের। এই অবস্থায় আমরা কেবল প্রার্থনাই করতে পারি।’
×