ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাত মাস সামনে রেখে বাজেট বাস্তবায়নে জোর দিচ্ছে সরকার

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২৬ নভেম্বর ২০১৪

সাত মাস সামনে রেখে বাজেট বাস্তবায়নে জোর দিচ্ছে সরকার

এম শাহজাহান ॥ সাত মাস সামনে রেখেই চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নে জোর দিচ্ছে সরকার। বছর শেষে শতভাগ বাজেট বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে ইতোমধ্যে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) বাস্তবায়নের ওপর জোর দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পণ্য ও সেবা সংগ্রহে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী বিভাগগুলোর সচিবদের অর্থবছরের শুরুতেই ক্রয় পরিকল্পনা নিতে হবে। পাশাপাশি বাজেট বাস্তবায়নে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণেও জোর দিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর ও ভ্যাট আদায় পদ্ধতিকে শতভাগ ডিজিটালাইজেশন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। সূত্রমতে, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৯ শতাংশ। এই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকায় এই হার আরও বেশি হতে পারত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি সরকারের আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হারসংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকেও এই বিষয়টি নজরে আনা হয়েছে। এ নিয়ে অর্থ বিভাগের এক চিঠিতেও বলা হয়েছে, বিশ্ব ও জাতীয় অর্থনীতিতে এরই মধ্যে সূচিত পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরসহ মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোর সূচকগুলোর প্রক্ষেপণের ওপর আলোচনা ও অনুমোদন দেয়া হবে। এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছর রাজস্ব আদায় বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। গত অর্থবছরের বাজেটে কিছু খাতে অগ্রিম আয়কর আরোপ করা বা বিদ্যমান হার বাড়ানো হয়েছে। সরকারী স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে করের আওতায় আনা হয়েছে। মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও শুল্কের ক্ষেত্রেও অনুরূপ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ বিবেচনায় চলতি অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে বলেই মনে করছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোঃ গোলাম হোসেন। তিনি সম্প্রতি একটি সেমিনারে জানান, ‘ভিশন ২১’ এবং দেশকে মধ্য আয়ের দেশে নিয়ে যেতে হলে আগামী চার বছরের মধ্যে ৩ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে হবে। এনবিআর এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। তিনি বলেন, আগামী চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে সরকার নিজস্ব অর্থায়নেই বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে পারবে। এনবিআর প্রকাশিত পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা গেছে, জুলাই ও আগস্টে আয়কর এবং অন্যান্য করের আদায় বেড়েছে ১৩ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ৪ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা আয়কর আদায় হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫১৪ কোটি টাকা বেশি। ভ্যাট আদায় বেড়েছে ১৪ দশমিক ২৮ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ৬ হাজার ৫৭১ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৮২১ কোটি টাকা বেশি। অন্য দিকে শুল্ক আদায়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ২ হাজার ২৯০ কোটি টাকার শুল্ক আদায় হয়েছে। এদিকে প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখতে এডিপি বাস্তবায়নের ওপর তাগিদ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সম্প্রতি বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশের সময় এ তাগাদা দিয়েছিল সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, ২০১৫ সালে সার্বিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ব্যাংক ঋণের বেশিমাত্রার সুদের হার, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় ও রাজস্ব আদায় বাড়াতে হলে ভ্যাট আইন দ্রুত পাস করানো। সেই সঙ্গে রাজস্ব সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানোসহ এডিপির গুণগত বাস্তবায়ন বাড়ানো একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। আইএমইডির (বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ) প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শতকরা হিসেবে এডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। ৫৮২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দের বিপরীতে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ব্যয় হয়েছে ২৭৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা। তিন মাসে বরাদ্দের ৪৭ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। তিন মাসে ৩৪ শতাংশ অর্থ ব্যয় করে তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বেসরকারী বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। সর্বমোট ২৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ১০ শতাংশ বা এর বেশি এডিপি বাস্তবায়ন করেছে। জানা গেছে, বাজেট বাস্তবায়নে সরকার আন্তরিক হলেও প্রশাসনিক অদক্ষতা, অর্থের প্রতুলতা ও কাক্সিক্ষত বৈদেশিক সহায়তা না আসায় বাজেট বাস্তবায়নের দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস হিসেবে জুলাইয়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) বাস্তবায়ন হয় মাত্র ২ শতাংশ। এ নিয়ে কিছুটা বিব্রত সরকার। এ জন্য ওই সময় বাজেট ব্যবস্থাপনার দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করে তা দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার মনে করছে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে স্থিতিশীলতা ফিরে আসায় চলতি অর্থবছর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর বাজেট শতভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব। ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়ন, ক্রয় প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এবং নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন।
×