ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ছিটমহলে আনন্দের জোয়ার

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ২৬ নভেম্বর ২০১৪

ছিটমহলে আনন্দের জোয়ার

স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী ও নিজস্ব সংবাদদাতা লালমনিরহাট ॥ ছিটমহল বিনিময়ে ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরার মধ্যে স্বাক্ষরিত স্থল সীমান্ত চুক্তি এবং ২০১১ সালে হাসিনা-মনমোহনের স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রটোকল ভারতের পার্লামেন্টে অনুমোদনের জন্য সংবিধান সংশোধনের জন্য দ্য কন্সটিটিউশন (ওয়ান হান্ড্রেড এ্যান্ড নাইনটিনথ এ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৪ রাজ্যসভায় ২৪ নবেম্বর শুরু হওয়া শীতকালীন অধিবেশনে উত্থাপিত হচ্ছেÑ এই খবরে বাংলাদেশ ও ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত ১৬২টি ছিটমহলের অধিবাসীদের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইতে শুরু করেছে। তারা এখন অধীর আগ্রহে ভারতের রাজ্যসভায় এবং লোকসভায় বিলটি পাস হয়েছেÑ এমন খবর শোনার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। কারণ এক ধরনের বন্দীজীবনের মুক্তির উল্লাসের হাতছানির প্রহর গুনতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ও ভারতের ছিটমহলবাসী। পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিঁড়ে বেরিয়ে আশার অপেক্ষার পালা যেন আর সয় না। ২০১১ সালের জুলাই মাসে হেডকাউন্টিংয়ের পর ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এসে এবার পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। এই ঘোষণা পেলেই ওরা ছিটমহল নামের পরাধীনতার বাঁধন থেকে রক্ষা পাবে। পেয়ে যাবে দেশের নাগরিকত্ব। আর ছিটমহলের ভেতর বসবাসকারীদের যেন আজন্মের পাপ দূর হবে। সূত্র মতে, সোমবার রাজ্যসভার শীতকালীন অধিবেশন শুরু হয়েছে। এই অধিবেশন চলাকালীন ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ভারতের রাজ্যসভায় বিলটি উত্থাপিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এবারের অধিবেশনে উত্থাপনের জন্য প্রস্তুতকৃত বিলগুলোর মধ্যে দ্য কন্সটিটিউশন (ওয়ান হান্ড্রেড এ্যান্ড নাইনটিনথ এ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৪ কার্যতালিকার ৭ নম্বরে রয়েছে। ২০১১ সালের ১৫ জুলাই ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একযোগে ১৬২টি ছিটমহলের হেডকাউন্টিংয়ের (আদমশুমারি) কাজ শুরু হয়ে ১৮ জুলাই শেষ হয়। ভারতের ছিটমহলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রয়েছে নীলফামারীতে ৪টি, পঞ্চগড়ে ১২টি, কুড়িগ্রামে ৩৬টি ও লালমনিরহাট জেলায় ৫৯টিসহ মোট ১১১টি। অপরদিকে ভারতের কুচবিহার জেলার দিনহাটা ও তুফানগঞ্জ মহকুমার অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ছিটমহল রয়েছে ৫১টি। ২০১১ সালের জরিপের সময় ভারতের জরিপ দল বাংলাদেশে আসেন আর বাংলাদেশের জরিপ দল ভারতে গিয়েছিলেন। জরিপ শেষে তারা সংশ্লিষ্টদের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছিলেন। ছিটমহল বিনিময়ে ১৯৫৮ সালে নেহেরুন-নুন চুক্তি হয়েছিল। পরবর্তীতে এই চুক্তি বাস্তবায়নে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এরপর ছিটমহল বিনিময়, অমীমাংসিত সীমান্ত ও অপদখলীয় জমি নিয়ে সমস্যা সমাধানে ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরার মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি বাংলাদেশের পার্লামেন্টে অনুমোদিত হলেও ভারতের সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন দেখা দেয়ায় তাদের পার্লামেন্টে চুক্তিটি অনুমোদন হয়নি। ফলে এই চুক্তির বাস্তবায়ন আটকে পড়ে। এরপর তিন বিঘা করিডর নিয়ে ১৯৯২ সালে খালেদা-রাও চুক্তি হলেও ছিটমহল বিনিময়ের কোন অগ্রগতি হয়নি। এ অবস্থায় ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১৯৭৪ সালের স্থল সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে হাসিনা-মনমোহনের মধ্যে প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়। এরপর ১৯৭৪ সালের স্থল সীমান্ত চুক্তি ও ২০১১ সালে সই করা প্রটোকলের বিধানগুলো কার্যকর করতে পার্লামেন্টে অনুমোদনের জন্য সংবিধান সংশোধন বিল ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি অনুমোদন করে ভারতের মন্ত্রিসভা। তারই ধারাবাহিকতায় সে বছর ভারতের রাজ্যসভায় বিলটি উত্থাপিত হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তা হয়নি। এদিকে বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি, বাংলাদেশ ইউনিটের সাধারণ স¤পাদক মোঃ গোলাম মোস্তফা জানান, ছিটমহল বিনিময়ের জন্য তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। এবার ছিটমহলবাসীদের দীর্ঘদিনের অবরুদ্ধ জীবনের অবসান হবে এ আশায় সবাই বুক বেঁধে আছেন তাঁরা সবাই।
×