ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মূল : ফে চোপেন অনুবাদ : এনামুল হক

জুকারবার্গ হতে না পারলেও ক্ষতি নেই

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ২৬ নভেম্বর ২০১৪

জুকারবার্গ হতে না পারলেও ক্ষতি নেই

মানবজীবনে সিদ্ধি লাভের ক্ষেত্রে আপনার মানদ-টা যদি উঁচু না হয়ে নিচু হয় তাহলে ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জুকারবার্গের সেই ভিডিওটি না দেখাই সম্ভবত সর্বোত্তম যেখানে তিনি বেজিংয়ের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গোটা প্রশ্নোত্তর পর্বটা ম্যান্ডারিন ভাষায় চালিয়েছিলেন। আপনি যে এই প্রশ্নোত্তর পর্বের কোনকিছুই সম্ভবত বুঝতে পারবেন না কেবল তাই নয় উপরন্তু আপনি হয়ত দেখতে পাবেন যে এই পর্বটি আপনাকে এক অদ্ভুত প্রভায় ভাস্বর অথচ অক্ষমতার ক্ষোভে পরিপূর্ণ করে তুলবে। জীবনে সুবিশাল সাফল্য যাঁরা অর্জন করেছেন জুকারবার্গ নিঃসন্দেহে তাঁদের একজন। মাত্র ত্রিশ বছর বয়স তাঁর। ইতোমধ্যে তিনি শত শত কোটি ডলারের মালিক। উপরন্তু তিনি মানুষ হিসেবে চমৎকার। জনহিতকর কাজে টাকা পয়সা দান করেন। তিনি বিবাহিত। বিয়ে করেছেন মেডক্যাল স্কুল গ্র্যাজুয়েট প্রিসিলা চানকে। ধূসর রঙের ক্যাজুয়েল টি শার্ট পরিধান করেন যা ভালমতই তাঁর লৌকিকতাবর্জিত আটপৌরে হাসির অনুপূরক। এ পর্যন্ত ঠিক আছে। আমরা নিজেদের যথাসম্ভব সর্বোত্তম সেরা সংস্করণে পরিণত হবার চেষ্টা করছি। আমরা সফল ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে, সুখী পরিবার রচনা করতে এবং নিবিড় বন্ধুত্ব সৃষ্টি করতে চাই। আমরা প্রতিদিন সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠে কর্মজীবন শুরু করতে এবং সময়মতো আমাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে চাই। এবং তারপরও কিছু কিছু লোক জীবনটাকে আরও এগিয়ে নিতে চায়-তারা কোম্পানি চালু করে, বই লিখে, পুরস্কার জিতে এবং জর্জ কুলনিকে বিয়ে করে। এসব উঁচু মার্গের কৃতিত্ব অর্জনকারীরা সারাজীবন আমাদের জ্বালিয়ে মারে। ওরা আছে স্কুলে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের, ক্রীড়াঙ্গনে সর্বত্র। এরা হলো চৌকস ধরনের লোকজন। এরা পুরস্কার দিতে, প্রশংসা অর্জন করে। এরা শিক্ষাবহির্ভূত কর্মকা-ে তাক লাগিয়ে দেয় এবং তারপরও ক্লাসে সবার শীর্ষ আসনটিও দখল করে নেয়। এরা কর্মক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে। ব্যবসায় প্রকাশনাগুলো এমন সব নিবন্ধে পরিপূর্ণ সেখানে আমাদের মতো নশ্বর মানুষদের উদ্দেশ্যে জানান হয় কি কি অভিন্ন বৈশিষ্ট্য এসব বিস্ময়কর ব্যক্তিত্বদের ধারণ করে থাকার কথা। যেমন ধরুন এমনি একটি নিবন্ধ হলোÑ “কি করে অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জন করতে হয়Ñ যে ১০টি গুণ না থাকলেই নয়” (তার মধ্যে একটি হলো ‘দৈনন্দিন সংগ্রামের প্রতি অনুরাগ,’ বাহ্যত ভয়ঙ্কর শোনায় কথাটা) প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো হলো সেই সব স্থান যেখানে এই অসাধারণ সফল ব্যক্তিরা অনেক সময় লুকিয়ে থাকেন। যেমন শেরিল স্যান্ডবার্গ। একদা ছিলেন গুগলের ভাইস প্রেসিডেন্ট। এখন ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। মহিলাদের প্রতি স্যান্ডবার্গের একটা বিখ্যাত পরামর্শ হলোÑ ‘নিজেদের ক্যারিয়ারের দিকে হেলান দিয়ে থাকুন।’ দারুণ উপদেশ, তবে তা মানতে যাওয়া কতকটা কষ্টকরও বটে। তার চেয়ে পিছন দিকে হেলান দিয়ে থাকাটা অধিকতর স্বস্তিদায়ক এবং কাউচের ওপর আনুভূমিক ভঙ্গিতে দিতে পারলে তো আরও ভাল। এ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক শোনা যায় ভোর সাড়ে চারটায় ওঠেন। আরও অনেক নির্বাহী কর্মকর্তার ভোরে ওঠার অভ্যাস বলে দাবি করেন। এর কারণ আছে। প্রযুক্তির বদৌলতে আজ কাজ বন্ধ করে ঘুমুতে যাওয়ার উপায় নেই। ই-মেইলের স্বেচ্ছাচারিতা এবং সপ্তাহে ২৪ ঘণ্টার কাজের সংস্কৃতির অর্থ হচ্ছে শরীরচর্চার সময়টা বাদে প্রচ- কাজ পাগলা লোকেরা কখনও ক্ষান্ত হয় না। কথাটা ঠিক। আপনি যখন ট্রেড মিল করছেন তখন যদি ই-মেইল চেক করার কথা ভাবেন সেটাকে বাড়তি কৃতিত্ব বলা যায় কিনা ভেবে দেখুন। গুগলের যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা সার্গেই ব্রিনের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করুন। রোলারব্লেডে করে মিটিংয়ে আসার জন্য তিনি সুপরিচিত। ব্রেন দড়াবাজি, কাইটবোটিং এবং হেলিকপ্টার থেকে লাফ দেয়ায়ও উৎসাহী। আমরা কিভাবে জানলাম? কারণ তিনি তার এই অতি রোমঞ্চকর কর্মকা-ের ছবি গুগলের পাতায় পোস্ট করে থাকেন। অতি সাফল্য অর্জনকারী হওয়াটাই যথেষ্ট নয়। সামাজিক মিডিয়াতে এ নিয়ে বড়াই করতে হয়। আর এখানেই হলো সমস্যার মূলকথা। জুকারবার্গের মতো লোকেরা আমাদের নিজেদের অযোগ্য বা অনুপযুক্ত অনুভব করতে শেখায়। কারণ তাদের সাফল্য বা অর্জনের কথা শুনে আমরা সেই মিথ বা কল্পকলা বিশ্বাস করতে শুরু করি, যে আমরাও তাদের মতো হতে পারব। আমরা অনুভব করতে শুরু করি যে কোন না কোনভাবে আমরাও নোবেল পুরস্কার জয় করতে পারব শুধু যদি আমরা একটু আগে শয্যাত্যাগ করি। আমাদের এবং সুবিশাল সাফল্যের মাঝখানে কেবল যে জিনিসটা বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তা হলো সংগ্রামের প্রতি আমাদের অনুরাগের অভাব। তবে সত্য হলো এই যে আমরা সবাই অতিসাফল্য অর্জনকারীদের মতো হতে পারব না। শত ইচ্ছা কঠোর পরিশ্রম করুন। ভোর ৬ টায় উঠে দৌড়ানো শুরু করুন। কিন্তু বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি সম্ভবত আপনি কখনই দাঁড় করাতে পারবেন না। ক্যান্সার নিরাময়ের কোন ওষুধ বের করতে পারবেন না কিংবা পুলিৎজার পুরস্কারজয়ী কোন উপন্যাস লিখতে পারবেন না। কখনও কখনও দিন পার করে দেয়াটাই আপনার জন্য এক মস্ত বিজয়। একথা বলার মানে এই নয় যে আপনার চেষ্টা করা উচিত নয়। আর যাই হোক না কেন, সামান্য একটু আত্মোন্নয়নে তো ক্ষতি নেই।
×