ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টাঙ্গাইলে ৮ গ্রামের মানুষের ॥ ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ২৫ নভেম্বর ২০১৪

টাঙ্গাইলে ৮ গ্রামের মানুষের ॥ ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ২৪ নবেম্বর ॥ ‘১০ বছর ধইরা দেখতাছি, হরকারি নোকজুন ফিতা নিয়া শুধু মাফামাফি করে, কিন্তুক পুল তো অয়না। আমাগো নড়বড়া বাঁশের হ্াকু দিয়াই পার অইতে অব। আমরা হেন্দু মানু, তাই হরকার আমাগো দুক্কু দেহেনা।’ চোখেমুখে অনেক হতাশার ছাপ নিয়ে কথাগুলো বললেন, উপজেলার হিন্দু অধ্যুষিত হাতীবান্ধা গ্রামের ৭৫ বছরের বৃদ্ধ যুগলচন্দ্র সরকার। টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার হাতীবান্ধা ইউনিয়নের কামালিয়া চালা থেকে কাঁচা সড়কে হাতীবান্ধা যেতে নরেশ বাবুর বাড়ির পাশের খালে পাকা সেতু না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ওই অঞ্চলের আট গ্রামের মানুষ। জানা যায়, সখীপুর উপজেলা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে সীমান্তবর্তী কামালিয়া চালা-হাতীবান্ধা কাঁচা সড়কের কুড়াতলী খালের ওপর স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ পথচারীদের পারাপারের জন্য একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করে দিয়েছেন। প্রতিনিয়ত ওই সাঁকো দিয়ে হাতীবান্ধা, চাকদহ, মইশাচাঙা, সৈদামপুর, যৌতুকি, পৌলি, তারাবাড়ি ও সিঙ্গারডাক গ্রামের শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ, নারীসহ ওইসব গ্রামের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে। ৪০ হাত লম্বা সাঁকোটির মাঝখানে নিচের দিকে হেলে গেছে, দুইপাশে বাঁশ ও বাঁশের রেলিং (হাতল) না থাকায় শিশু ও বৃদ্ধরা ভয়ে বসে বসে পার হয়। এভাবে গত ছয় বছর ধরে বাঁশের তৈরি সাঁকোতেই লোকজন ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে। এর আগে নৌকা দিয়ে লোকজন পারাপার হতো বলে স্থানীয় লোকজন জানান। বিশেষ করে সাঁকোর পশ্চিম পাশের হিন্দু অধ্যুষিত হাতীবান্ধা ও চাকদহ গ্রামের পাঁচ-ছয় হাজার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে পাকা সেতুর অভাবে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে। ওই দুই গ্রামের লোকজন অভিযোগ করেন, ‘আধুনিক যোগাযোগের যুগেও ওই স্থানে সেতু না থাকায় যানবাহন চলতে না পেরে গত পাঁচ বছরে কমপক্ষে আট ব্যক্তি মারা গেছেন। হাতীবান্ধা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রণজিত কুমার সরকার বলেন, বাঁশের সাঁকোতে পারাপারে ভোগান্তি, যানবাহনের সুযোগ না থাকায় ও সময়মতো হাসপাতালে না পৌঁছানোর কারণে আমার বড় ভাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুকুমার সরকার (৩৫) ২০১১ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাস্তায়ই মারা যান। গ্রামের রমেশ চন্দ্র সরকার বলেন, আমার ভাই নরেশ সরকারও শুধু সেতু না থাকার কারণেই মারা যান। হাতীবান্ধা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নরেশ চন্দ্র বলেন, ওই ভাঙ্গায় সেতু নির্মাণের জন্য গত ছয় বছর ধরে এমপি মহোদয়কে বলে আসছি, অনেকবার মাপামাপিও হয়েছে, তারপরেও কেন যে হচ্ছে না তা বলতে পারছি না। হাতীবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সুকুমার সিকদার বলেন, সমগ্র ইউনিয়নে বাঁশের সাঁকোর জন্য বরাদ্দ হচ্ছে পাঁচ হাজার টাকা। আমার গ্রামেই আটটি বাঁশের সাঁকো। এলাকার মানুষের সহায়তায় ও পকেটের টাকা দিয়ে ওই সাঁকো আমি তৈরি করে দেই। হাতীবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নবীন হোসেন বলেন, ওই সেতুটি নির্মাণে ৫০-৬০ লাখ টাকা লাগবে। ইউনিয়ন পরিষদে এত টাকার বরাদ্দ নেই। স্থানীয় এমপি অনুপম শাহজাহান জয় বলেন, ওই অঞ্চলের ওই স্থানে সেতুর জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রস্তাব দেয়া আছে। আশা করি স্বল্প সময়ের ভেতরেই প্রস্তাবটি পাস হবে।
×