ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাবুই বৃত্তান্ত

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ২৫ নভেম্বর ২০১৪

বাবুই বৃত্তান্ত

‘বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই/কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই...’ কবিতাটি প্রায় সবার জানা। বাবুই পাকি যে ‘কুঁড়ে ঘর’ তৈরি করে তা নিঃসন্দেহে গর্ব করার মতো পক্ষী জাতীয় প্রাণিকুলের মধ্যে বড়াই করার মতোই। বাবুই এদেশের প্রায় সকলেরই পরিচিত একটি পাখি। এরা নিজেরা থাকার জন্য তৈরি করে নিজেদের বাসা। এ বাসা মূলত তৈরি করা হয় তালগাছের ডালে বা খেজুর গাছে। পাতা চিরে চিরে জাল বোনার মতো করে এরা গড়ে তোলে এদের খোপওয়ালা ঝুলন্ত বাসা। রাতে, ঝড় বৃষ্টিতে তারা সেখানে আশ্রয় নেয়, কোন দুর্যোগে তাদের ক্ষতি হয় না। আবহমানকাল ধরে বাবুই পাখি বসবাস করে আসছে এ ধরনের বাসা তৈরি করে। এই পাখির সংখ্যা কমে আসছে। সম্প্রতি এ ধরনের একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে সহযোগী এক দৈনিকে। তাতে বলা হয়েছে, উত্তরাঞ্চল থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখি। এরা ঘর বাঁধা তথা বাসা তৈরির সুনিপুণ কারিগর। তাই এদের কোথাও কোথাও বলা হয় ঘরামি বাবুই। বলা হয়েছে তাদের আবাস ক্রমাগত কমে যাওয়ায় তাদের সংখ্যা দিন দিন কমছে, তাদের আর যেখানে সেখানে আগের মতো দেখা যায় না। কমে গেছে তালগাছ, খেজুরগাছ ইত্যাদি উঁচু গাছ। এগুলোই তাদের ঘর বাঁধার অবলম্বন। বাসের নিরাপদ আশ্রয়স্থল না থাকায় চমৎকার এই সুন্দর পাখির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এখন আর তাদের কিচিরমিচির শব্দ শোনা যায় না। আগে গ্রামাঞ্চলে অনেক মা তাদের শিশুদের কান্না থামানোর জন্য বাবুই পাখির চমৎকার সেই সুনিপুণ বাসা দেখাতেন। সবুজ শ্যামল গাছপালা শোভিত আমাদের এই দেশে সেই শ্যামল পরিবেশ এখন আর তেমন নেই। আমাদের একদা গ্রামে গ্রামে ছিল প্রচুর গাছপালা, লতা-গুল্ম। দেশে ছিল ছোট-বড় বহু বন-উপবন। কালে কালে সেসব হারিয়ে গেছে। এ সবের জন্য মূলত দায়ী মানুষের কর্মকা-। গ্রামে-গঞ্জে কাটা হয়েছে বহু গাছ, উজাড় করা হয়েছে বহু ঝোপঝাড়। বহু বন ধ্বংস করা হয়েছে, কাটা হয়েছে বহু গাছ। এসব কারণে গাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। শুধু বাবুই পাখিই নয় অনেক জাতের জংলি পাখি, বন্যপ্রাণী হারিয়েছে তাদের আবাস। তারা চলে গেছে অন্যত্র বা কোন কোনটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাই আজ দেশে বহু স্থানেই অনেক জাতের পাখি দেখা যায় না, দেখা যায় না বহু জাতের বণ্যপ্রাণী। তাই এখন বহু গ্রাম আর সকাল-সন্ধ্যায় নানা জাতের পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয় না। এখনও বহু এলাকায় শোনা যায় না শেয়ালের ডাক। ‘বৃক্ষ কমে যাওয়ার কারণে মানুষেরও ক্ষতি কম হয়নিÑ বদলে গেছে প্রাকৃতিক পরিবেশও। কোন দেশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য সে দেশের ভূ-ভাগের অন্তত ২৫ শতাংশ সবুজ এলাকা থাকা দরকার। তা না হলে ব্যাহত হয় পরিবেশের ভারসাম্য। আমাদের বনের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। বন তথা গাছপালার অভাবে কি ক্ষতি হতে পারে তা আমরা ভালভাবেই জানি, তাই কিছুকাল ধরে চলছে বৃক্ষরোপণ অভিযান। চলছে বন সৃষ্টির কার্যক্রম। আমাদের বন বাড়াতে হবে। বাড়াতে হবে গাছপালার সংখ্যা। অপ্রয়োজনে কোন গাছ কাটা উচিত হবে না, রোপিত গাছকে যতেœর সঙ্গে রক্ষা করতে হবে। আমাদের দেশের মাটি অত্যন্ত উর্বর। বীজ মাটিতে পড়লেই গাছ হয়। এ জন্য খুব বেশি কষ্টও করতে হয় না। আমাদের এই সুবিধাকে কাজে লাগাতে হবে। গাছপালা তথা বন ধ্বংসের চেষ্টা সম্পূর্ণ বন্ধ করে গাছের যতœ করতে হবে। গাছের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে। গ্রামে গ্রামে, শহরে শহরে প্রতিটি ফাঁকা জায়গায় লাগাতে হবে গাছ। পরিকল্পিতভাবে তাল ও খেজুর গাছের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বাড়াতে হবে ছায়াদানকারী এবং ফলদ বিভিন্ন গাছের সংখ্যা। এতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে। ফিরে আসবে বন্যপ্রাণী, বন্যপাখি, ফিরে আসবে আবার বাবুই পাখিও। বসবাসের নিরাপদ স্থান পেলে আবার মুখরিত হয়ে উঠবে বন-জঙ্গল নানা জাতের পাখির ডাক, তালগাছে বাসা বাঁধবে বাবুই পাখি, তাদের কিচিরমিচির শব্দ তথা কলকাকলিতে আগের মতোই ভরে উঠবে পরিবেশ।
×