ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বললেন সাকিব আল হাসান

এক ম্যাচে ৫বললেন সাকিব আল হাসান

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৩ নভেম্বর ২০১৪

এক ম্যাচে ৫বললেন সাকিব আল হাসান

স্পোর্টস রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে ॥ ক্রিকেটের বরপুত্র ব্রায়ান লারা। রেকর্ডের বরপুত্র শচীন টেন্ডুলকর। তাহলে কী বলা যায়, বাংলাদেশ ক্রিকেটের বরপুত্র সাকিব আল হাসান? দেশের ক্রিকেটে যে এমন ক্রিকেটার কোনদিন দেখা যায়নি। যে কিনা শুধু রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ে যাচ্ছেন। এ ক্রিকেটারের মুখ থেকে কখনই আফসোস শব্দটি শোনা যায়নি। অবশেষে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডের পর এ ক্রিকেটার ‘আফসোস হচ্ছে’ বললেন। অতীত মনে পড়লে সাকিবের আফসোসই হয়। শুধু কী অতীত, জিম্বাবুইয়ে বিপক্ষে ১০১ রান ও ৪ উইকেট নেয়ার পরও সাকিবের আফসোসের শেষ নেই। দেশের মাটিতে প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে ২০০০ রান ও ১০০ উইকেট নেয়ার রেকর্ড গড়ার পরও ওয়ানডেতে এক ম্যাচে যে এখনও ৫ উইকেট না পাওয়ার আফসোসও রয়েছে সাকিবের। আর ১টি উইকেট পেলেই তা হয়ে যেত। তাই তো সাকিব বলছেন, ‘আফসোসই হচ্ছে।’ অতীতে আরও বুঝে ব্যাট করলে রান আরও যোগ হতো। এ আফসোসের সুর সাকিবের কণ্ঠে, ‘আগের ব্যাটিংয়ের কথা যখন চিন্তা করি, তখন একটু আফসোসই হয়। মনে হয় ব্যাটিংয়ে এখন মাথাটা একটু বেশি কাজে লাগাতে পারছি। যেটা আগে করলে হয় তো টেস্ট এবং ওয়ানডেতে আরও ৫০০, ১০০০ রান বেশি করতে পারতাম।’ সঙ্গে ৫ উইকেট এখন পর্যন্ত নিতে না পারার আফসোসের কথাই জানালেন সাকিব, ‘পাঁচ উইকেট পেলে হয়ত আরও ভাল লাগত। যেহেতু ক্যারিয়ারে ওটা নেই।’ সাকিব আগে মাথা খাটিয়ে ব্যাটিং করতেন না। শান্ত থাকতেন না। এখন করেন। শান্তও থাকেন। এর সুফলও পাচ্ছেন। প্রথম ওয়ানডেতে ৩১ রানে ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর সাকিব ব্যাট হাতে নামেন। এরপর শুরুতেই সপ্তম বলে একটি বাউন্ডারি হাঁকান। সেই যে সাকিব নিজেকে ধরে খেলেন, ২৯ বল পর এলো দ্বিতীয় বাউন্ডারি। দেখে শুনে খেলতে থেকে একটা সময় অর্ধশতক করেন। হয় শতকও। মুশফিককে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন। গড়েন পঞ্চম উইকেটে ১৪৮ রানের রেকর্ড জুটিও। আউট না হওয়ার চেষ্টা থেকেই এগিয়ে যেতে থাকেন। সাকিবই যেমন বললেন, ‘ব্যাটিংয়ে পরিণত হওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারটা আমার ভেতরে এখন ভালভাবে এসেছে। কিন্তু এটা ধরে রাখতে হবে। এমন নয় যে এক-দুই ম্যাচ খেলেই সেটা শেষ হয়ে যাবে। আগে যে ভুলগুলো করতাম, এখন থেকে সেগুলো আর করাই যাবে না। প্রথম ওয়ানডেতে ব্যাটিং নিয়ে কিছু বলার চেয়ে অনুভবটা বেশি করতে পারছি। এখন মনে হচ্ছে, বিশেষ করে ব্যাটিংয়ের সময় অনেক শান্ত ছিলাম। এমনকি পুরো টেস্ট সিরিজে ব্যাটিংয়ের সময়ও অনেক শান্ত ছিলাম। এটাই চোখে পড়ার মতো বিষয়। মাথায় একটা জিনিসই ছিল। ওই সময় কোন উইকেট হারানো চলবে না। সেই সঙ্গে একটা জুটি গড়াও খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’ শুরুতে বেছে বেছে শট খেললেও রান ও বল সমান করার যোগ্যতা যে আছে সাকিবের তা বুঝিয়েছেন। ৫৭ বলে অর্ধশতক করার পর শতক করেছেন ৯৫ বলে। সাকিব বললেন, ‘এই বিশ্বাসটা ছিল যে, উইকেটে লম্বা সময় থাকতে পারলে পুষিয়ে নিতে পারব। কারণ এখনকার দিনে ৩০ গজ বৃত্তের ভেতর একজন বাড়তি ফিল্ডার থাকে। ফলে আরও বেশি গ্যাপ পাওয়া যায়। ভাল উইকেটে সেট হয়ে গেলে সেগুলো কাজে লাগিয়ে রানের গতিও বাড়ানো যায়।’ টেস্টে শতক করার পর সাকিব হাত দিয়ে ‘হার্ট’ বানিয়ে দেখিয়েছিলেন। এবার ব্যাটিংয়ের শ্যাডো করলেন। কিন্তু জানালেন না এবারও কেন এমনটি করলেন, ‘এই যে আপনারা প্রশ্ন করবেন, সে জন্য ওরকম করেছি। বিশেষ কোন ব্যাপার ছিল না।’ সাকিব আর ৬৪ রান করলে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ৪০০০ রান করবেন। আর ১ উইকেট নিলে ওয়ানডেতে বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে ১৭৫ উইকেট নেয়া পেসার মাশরাফি বিন মর্তুজাকে টপকাবেন। উইকেট শিকারের দিক দিয়ে শীর্ষে থাকা আব্দুর রাজ্জাকের (২০৭ উইকেট) পরের অবস্থানটিই থাকবে সাকিবের। তবে এর মধ্যেই জিম্বাবুইয়ে বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেয়ার ক্ষেত্রে রাজ্জাকের সঙ্গে অবস্থান করছেন সাকিব। দুইজনই এখন ৫৬ উইকেট করে নিয়েছেন। আর ১ উইকেট নিলে এ রেকর্ডও ভাঙ্গবেন সাকিব। তবে সাকিব যেন এক ম্যাচে ৫ উইকেট নেয়ার দিকেই বেশি জোর দিচ্ছেন। সেই আশা যে ছাড়ছেন না তাও জানিয়ে দিয়েছেন, ‘শেষ ওভারটা করার সময় আমিই নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম। এবার ৫ উইকেট হয়নি, ইনশাআল্লাহ সামনে হবে। সময় তো আছে।’ সাকিবের হাতে আসলেই সময় আছে এক ম্যাচে ৫ উইকেট নেয়ার। ৫ বার ৪ উইকেট করে নিলেও একবারও পাঁচ উইকেটের দেখা পাননি। আফসোস তাই সাকিবের থাকতেই পারে। সেই সঙ্গে ব্যাটিংয়ে যে আগে শান্ত ছিলেন না, সেই আফসোসেও পুড়ছেন। তবে আবার সাকিব বুঝছেনও, কেন এমনটি হয়েছে, ‘হয় তো বয়সের কারণে...যত বেশি খেলব আস্তে আস্তে পরিণত হব। সেটা হয় তো হচ্ছি।’ অশান্ত থাকাতেই এ অবস্থা। শান্ত হচ্ছেন। এখন কী যে হবে তা সামনেই বোঝা যাবে। দেশের ক্রিকেটকে আলাদাভাবেই চেনাচ্ছেন সাকিব। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে নিষিদ্ধ হওয়ার অপবাদও এর মধ্যে যুক্ত হয়েছে। যদি সেই নিষেধাজ্ঞা না থাকত, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলতে পারতেন সাকিব, তাহলে হয়ত এ আফসোসগুলো নাও থাকতে পারত। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলতে না পারার আফসোসও কী নেই সাকিবের? সাকিব মুচকি হাসেন। মুখ দিয়ে এ নিয়ে কোন শব্দ বের হয় না। জবাব যে রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়েই দিচ্ছেন। এরপরও সাকিবের মুখ দিয়ে ‘আফসোস’ শব্দটি বের হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের বরপুত্র, যিনি কি না রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ে চলেছেন, তাঁর কণ্ঠে এ শব্দটি খুব বেমানানই লেগেছে।
×