ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবছে না টাইগাররা

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২৩ নভেম্বর ২০১৪

জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবছে না টাইগাররা

স্পোর্টস রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে ॥ বাংলাদেশ-জিম্বাবুইয়ে দ্বিতীয় ওয়ানডে আজ। পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের এই ম্যাচটি চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দুপুর ১২.৩০ মিনিটে শুরু হবে। ম্যাচটিতে নামার আগে প্রথম ওয়ানডেতে ৮৭ রানে জেতায় এখন বাংলাদেশ ১-০ ব্যবধানে সিরিজে এগিয়ে রয়েছে। আজ জিতলে সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। আর যদি হারে তাহলে সিরিজে আসবে সমতা। এই ম্যাচটি শেষ হলেই ‘লাকি ভেন্যু’ চট্টগ্রামে সিরিজের আর কোন ম্যাচ নেই। শেষ বেলায় চট্টগ্রামে টেস্টে জিতে সিরিজে ৩-০ করেছিল বাংলাদেশ। এবার ওয়ানডেতে চট্টগ্রামে শেষ ম্যাচটিতেও জিতে ২-০ করবে, না সিরিজে ১-১ সমতা আসবে? তা ম্যাচটি শেষ হতেই বোঝা যাবে। তবে ম্যাচটির আগে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকছে বাংলাদেশই। এ জন্য শনিবার দলের ক্রিকেটাররা বিশ্রামেও থাকেন। টানা হারে জিম্বাবুইয়ে দল যে কতটা বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে তা প্রথম ওয়ানডেতেও বোঝা গেছে। শুরুটা বরাবরই ভাল করলেও, মাঝে গিয়েই জিম্বাবুইয়ে সব ল-ভ- করে ফেলে। তাই শেষটাও ভাল হয়নি। টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচটিতে তিনদিনে হারের পর খুলনা টেস্টে গিয়ে ভাল শুরু করেও মাঝের ছন্নছাড়া অবস্থা শেষে প্রভাব ফেলেছে। ম্যাচ হেরেছে। চট্টগ্রাম টেস্টে গিয়েও দেখা গেছে একই অবস্থা। প্রথম ওয়ানডেতেও তা থেকে বের হতে পারেনি জিম্বাবুইয়ে। শুরুতে ৭০ রানে ৪ উইকেট শিকার করে বাংলাদেশকে চাপে ফেলতে পারলেও এরপর উইকেট নিতে ২১৮ রান পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। সেখানেই ম্যাচটি হেরে গেছে জিম্বাবুইয়ে। সাকিব-মুশফিকের ১৪৮ রানের রেকর্ড জুটিতে বাংলাদেশ এ জায়গাতেই বলতে গেলে জিম্বাবুইয়েকে হারিয়ে দিয়েছে। সফরকারী বোলাররাও যেন হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। কোনভাবে ৫০ ওভার শেষ করাই যেন তাদের জরুরী হয়ে পড়েছিল। বাংলাদেশ যে একটি টিম হিসেবে গড়ে উঠছে খাদের কিনারায় পড়ে যাওয়ার পরও কিভাবে উঠে দাঁড়ালো, সেটিই প্রমাণ বহন করে। এমনই অবস্থা এখন জিম্বাবুইয়ে দলের, ধারাভাষ্যকার হিসেবে বাংলাদেশে আসা জিম্বাবুইয়ের সাবেক অধিনায়ক এ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল মনে করছেন, ‘কেনিয়ার পথেই এগিয়ে যাচ্ছে জিম্বাবুইয়ের ক্রিকেট।’ যেভাবে হারছে জিম্বাবুইয়ে তাতে ক্যাম্পবেলই শুধু নন, সবার চোখেই জিম্বাবুইয়ের পতন দেখা যাচ্ছে। এই পতনের সুর বাজছে, যখন বাংলাদেশ একতরফাভাবে জিম্বাবুইয়েকে হারাচ্ছে। জিম্বাবুইয়ের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল ধরা হয় এখন বাংলাদেশকে। একটা সময় ছিল যখন জিম্বাবুইয়ে একতরফাভাবে বাংলাদেশকে হারাত। ১৯৯৭ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত টানা ১০ ম্যাচে জিম্বাবুইয়ের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ। ২০০৪ সালে এসে বাংলাদেশ প্রথম জিম্বাবুইয়েকে হারিয়ে হারের গোলকধাঁধা থেকে মুক্তি পায়। এরপরও টানা হার থেকে মুক্তি মিলেনি। ২০০৬ সালে এসে এ প্রেক্ষাপট একেবারেই পাল্টে যায়। এখন উল্টো জিম্বাবুইয়ে টানা ম্যাচ হারে। এমনকি বেশি ম্যাচও হারে। ২০০৬ থেকে ২০০৭ সালে টানা ৮ ম্যাচ হারে জিম্বাবুইয়ে। সেই থেকে শুরু। জিম্বাবুইয়েকে টানা তিন ম্যাচ, চার ম্যাচ হারিয়েই চলেছে বাংলাদেশ। মাঝে মাঝে বাংলাদেশ হারে। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই জিতেছে। দুই দলের মধ্যকার সর্বশেষ গতবছর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচেও বাংলাদেশই জিতেছিল। কিন্তু পরের দুটি ওয়ানডেতে আর জেতা যায়নি। জিম্বাবুইয়েতে হওয়া সিরিজে তাই হেরেছে বাংলাদেশ। সেই সময় জিম্বাবুইয়েকে নিয়ে সবার ভেতর সে কী উত্তেজনা। বাংলাদেশ এখনও বাজে দলই আছে। এ রকম কত আলোচনা হয়েছে। দেড়বছর পর যখন বাংলাদেশের মাটিতে জিম্বাবুইয়ে খেলতে নেমেছে, তখন সব হিসেব পাল্টে গেছে। এখন জিম্বাবুইয়েই যে বাংলাদেশের চেয়ে দুর্বল দল’ তা সবার চোখেই ধরা পড়ছে। এ দুর্বলতা আরও বেড়ে গেছে জিম্বাবুইয়ের, যখন টানা তিন টেস্টেই জিতেছে বাংলাদেশ। এখন পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে আগে জয় নিশ্চিত করতে হবে। এরপর ওয়ানডেতেও হোয়াইটওয়াশ করা যায় কিনা সেই দিকে ঝুঁকতে হবে। সেই ভাবনা আছে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের মধ্যেও। আর তাই তো ম্যাচ বাই ম্যাচ এগিয়ে গিয়ে জিম্বাবুইয়েকে নাস্তানাবুদ করার পরিকল্পনাই হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ। এ ফর্মুলাতে যে বাংলাদেশেরই সাফল্য মিলবে তা বোঝাই যাচ্ছে। বাংলাদেশ প্রথম ওয়ানডেতে ২৮১ রান করার পর জিম্বাবুইয়ে দুর্দান্ত শুরু করেছিল। ৭.৩ ওভারেই ৪৭ রান করে ফেলে। খানিক ভয় ঢুকিয়ে দেয়। কিন্তু যেই দেশ সেরা অলরাউন্ডার সাকিব এক বলের ব্যবধানে দুই উইকেট নিয়ে নেন, জিম্বাবুইয়ের ইনিংসে ধস নামা শুরু হয়। শুরু ভাল করেও মাঝে ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে শেষটায় যা হওয়ার তাই হয়। ১৯৪ রানের বেশি করতে না পেরে বড় ব্যবধানেই হারে জিম্বাবুইয়ে। হ্যামিল্টন মাসাকাদজা, সিকান্দার রাজা, ভুসিমুজি সিবান্দা, ব্রেন্ডন টেইলর, রেগিস চাকাবভা, এলটন চিগুম্বুরার মতো ব্যাটসম্যানরা থাকতেও মাশরাফি, সাকিব, আরাফাত, মাহমুদুল্লাহদের বোলিংয়ের সামনে অসহায় হয়ে পড়েন। এই অসহায়ত্ব আজও ধরা পড়লেই হয়। বাংলাদেশ জিতে সিরিজে ২-০ চট্টগ্রাম থেকেই করে নেবে। এরপর যে ঢাকায় ২৬ ও ২৮ নবেম্বর যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ এবং ১ ডিসেম্বর পঞ্চম ওয়ানডে রয়েছে, সেখান থেকে যে কোন একটি ম্যাচ জিতলেই সিরিজ জিতে নেবে। আর যদি ৫ ম্যাচই জিতে যায়, তাহলে কথাই নেই। ২০০৬ সালের পর আবারও ওয়ানডেতে বাংলাদেশের কাছে হোয়াইটওয়াশ হবে জিম্বাবুইয়ে। তা কি সম্ভব? আগে তো চট্টগ্রামে ২-০ করতে হবে। না আবার ১-১ সমতা হয়ে যায়।
×