ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আজ জগদীশচন্দ্র বসুর ৭৭তম মৃত্যুবার্ষিকী

জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানীর বাড়িটি যে কোন সময় ধসে পড়তে পারে

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২৩ নভেম্বর ২০১৪

জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানীর বাড়িটি যে কোন সময় ধসে পড়তে পারে

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ ॥ হলুদ জরাজীর্ণ একতলা ভবন। রং চটা পুরনো ভবনের গায়ে লেখা জেসি বোস ইনস্টিটিউট। তবে গাছপালায় এমনভাবে ঢাকা পড়েছে খুব কাছে না এসে বোঝা যাবে না। তবে এটির সামনের মনুমেন্ট। এটি দেখেই বোঝা যায়-বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসুকে। এছাড়া বড় আকারের নতুন আরও কয়েকটি ভবন রয়েছে। সেগুলোতে ফলাও করে নানা নক্সায় বিভিন্ন দাতাদের পছন্দের ব্যক্তিদের নাম। কোথাও বিজ্ঞানীর নাম চোখে পড়বে না। এই ক্যাম্পাসের প্রায় ১শ’ গজ দূরে ঢাকা-দোহার সড়কের পাশে বাইরের প্রধান ফটক রয়েছে। সেটির রং এমনভাবে চটে গেছে। বিজ্ঞানীর নাম খুঁজে বের করা কষ্ট হবে। পাঠকদের আর আরও কষ্ট হবে আজ রবিবার জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানীর ৭৭তম মৃত্যু দিবসেও পৈত্রিক ভিটায় নেই কোন কর্মসূচী। এভাবেই অবহেলায় বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে বিজ্ঞানীর জন্ম ও মৃত্যু দিবস। রাষ্ট্রীয়ভাবেই এই কালজয়ী বাঙালীর এই দিবস দুটি পালনে কোন রকম পদক্ষেপ নেই। নেই তাঁর নামে কোন রাস্তা বা অন্য প্রতিষ্ঠান। অথচ আইনস্টাইন বলেছিলিনে, স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর এক একটি আবিষ্কারের জন্য একটি করে স্তম্ভ হওয়া উচিত। রেডিও মূল আবিষ্কারক এবং গাছে প্রাণ আছে এমন গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ১শ’টির আবিষ্কারক স্যার জগদীশচন্দ্র বসু। তাঁর আবিষ্কার নিয়ে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে গবেষণা চলছে। ভারতের কলকাতার অপার সার্কুলার রোডের এই বিজ্ঞানীর বাড়ির বিজ্ঞান মন্দিরে কয়েক শ’ পিএইচডি গবেষক ইতোমধ্যেই ডিগ্রী অর্জন করেছেন। গবেষণারত রয়েছেন আরও অনেকে। বিজ্ঞানী নিয়ে নিজ দেশে অবহেলার নানা দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে বিজ্ঞানীর বাড়িতে আসা পর্যটকরা বলেন, এসব কারণেই দেশে বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ হ্রাস পাচ্ছে। সরকারী হরগঙ্গা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও উদ্ভিদবিজ্ঞানী অধ্যাপক সুখেন চন্দ্র ব্যানার্জী বলেন, বিজ্ঞানীর জন্ম-মৃত্যু দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন এখন সময়ের দাবি। নতুন প্রজন্ম তাঁর আদর্শ জানতে পারলেই বিজ্ঞানী হওয়ার জন্ম জাগবে। অথচ দেশে বিজ্ঞানে শিক্ষার্থী আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে। ফাটল ধরা পুরনো রংচটা ভবনটিই হচ্ছে বিজ্ঞানীর পৈত্রিক ভবন। বিজ্ঞানী স্মৃতিবিজড়িত এই ভবনটিতেই ক্লাস হতো। পরে বিজ্ঞানীর জাদুঘর করা হয়। তবে ভবনটি এতটাই জরাজীর্ণ, এই জাদুঘরও সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। তার পরও নানা রূপের সমাবেশেই কালের সাক্ষী হয়ে রয়েছে জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানীর বাড়িটি। এই বাড়ির এক পাশে এখন পিকনিক স্পট হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। যেখানে কৌতূহলী নানা শিক্ষার্থী আর দেশ-বিদেশী শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় মুখরিত। এই পিকনিক স্পটটি দোহার সড়কের চলার পথে গাড়িতে বসে দেখা যায়। সেখানে এখন কৃত্রিমপাড়, লেক ও ঝর্ণাও তৈরি করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ এসএম আলমগীর হোসেন জানান, ‘স্কুল শাখায় শিক্ষার্থী কম থাকার কারণেই কলেজ শাখায় বিজ্ঞান খোলা হচ্ছে না। মফস্বলের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান পড়তে আগ্রহ কম।’ তিন শ’ বছরেরও বেশি পুরনো বিজ্ঞানীর স্মৃতিবিজড়িত ভবনটি এখন অবহেলা আর অনাদরে বিনষ্ট হচ্ছে। ভবনের নাজুক অবস্থার কারণেই স্যার জগদীশের নানা স্মৃতির সংগ্রহশালাটি সরিয়ে আনা হয়েছে পিকনিক স্পট এলাকায়। ‘স্যার জগদীশ কমপ্লেক্সে’র একটি কক্ষে সেগুলো রাখা হয়েছে। এটিই এখন স্যার জগদীশ জাদুঘর। এখানে এখন ২০ টাকা টিকেট দিয়ে সেখানে প্রবেশ করা যায়। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। স্যার জগদীশচন্দ্র বসু ইনস্টিটিউটে এখন ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত এই শিক্ষালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৩শ’। এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ এসএম আলমগীর হোসেন নানা তথ্য দিয়ে বলেন, ২৫ একরেরও বেশি জমির ওপর নির্মিত এই প্রতিষ্ঠান। পুরো একাটিই প্রকৃতির নৈসর্গিক মিলনমেলা। আর বিজ্ঞানীর বাড়িতে সবুজের সমারোহও। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া এখন সময়ের দাবি। সুন্দর যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং রাজধানীর প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে এই স্থানে উচ্চ শিক্ষার দ্বার খুলে দেয়ার জন্য প্রয়োজন শুধু একটি সিদ্ধান্ত। ১৯২১ সালে তাঁর বাড়িটিতে এই ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজ শাখা চালু হয় ১৯৯৪ সালে। দেশ বিদেশে নানা পুরস্কারে ভূষিত এই বিজ্ঞানীর জন্ম হয় ১৮৫৮ সালের ৩০ নবেম্বর ময়মনসিংহে। তখন তাঁর পিতা ভগবান চন্দ্র বসু ময়মনসিংহ জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল বামা সুন্দরী। এই মহান বিজ্ঞানী ১৯৩৭ সালের ২৩ নবেম্বর কলকাতায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর কোন সন্তান ছিল না। তার স্ত্রী অবলা বসু মারা যান ১৯৫১ সালে । বিক্রমপুরের এই কৃতী সন্তানের আবিষ্কারে বিশ্ব আজ আলোকিত। এই আলোকবর্তিকা নতুন প্রজন্মকে জানান দিতেই তাঁর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথভাবে পালনের দাবি এলাকাবাসীর। স্থানীয় সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষ জানান, এ ব্যাপারে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিজ্ঞানীর স্মৃতি আঁকড়ে ধরার জন্য স্যার জগদীশ ইনস্টিটিউশনেরও অনেক উন্নয়ন হয়েছে তা আরও বেগবান করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীর পৈত্রিক ভবনের পাশেই ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন একটি ভবন উত্তোলনের কাজ চলছে। এ ছাড়া মূল ফটকের এক পাশে ছবি এবং আরেক পাশে সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্তসহ নতুন ফটক স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তোলার জন্যও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া এটিকে কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
×