ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির চেষ্টাকে অযৌক্তিক বলছে সিপিবি, বাসদ

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২২ নভেম্বর ২০১৪

গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির চেষ্টাকে অযৌক্তিক বলছে সিপিবি, বাসদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রচেষ্টাকে অযৌক্তিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ। সরকারের ভুলনীতি ও দুর্নীতির কারণে জ্বালানি খাতে উন্নয়ন হচ্ছে না বলে উল্লেখ করে ‘গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত : ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ দাবি করেন। রাজধানীর মুক্তিভবনের প্রগতি মিলনায়তনে বাসদ-এর সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্সের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের মধ্যে অধ্যাপক বদরুল ইমাম, অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক এমএম আকাশ এবং রাজনীতিকদের মধ্যে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। সূচনা বক্তব্যে অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, গ্যাসখাত অতীতেও লাভজনক ছিল, এখনও লাভজনক। ভোক্তারা মাসিক বিলের সঙ্গে ১১ দশমিক ২২ শতাংশ অর্থ দিয়ে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল করেছে ওই তিন হাজার কোটি টাকা অব্যবহৃত পড়ে আছে। এটি যথার্র্থভাবে ব্যবহার করে এ খাতের উন্নয়ন করা যায়। এর আগে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সময় যে শর্ত দেয়া হয়েছিল, তা পূরণ না হওয়ায় এ খাতে ৬,০০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। তাই মূলবৃদ্ধি হবে মুনাফামুখী ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করা। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম আর বৃদ্ধি নয়, প্রয়োজন বণ্টন ও মূল্যহার বিন্যাসে সমতা ও ন্যায্যতা আনা। অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, জ্বালানি খাতে উন্নয়ন না হওয়ার পেছনে প্রধান সংকট হচ্ছে এ খাতের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি। বাপেক্সকে যখন এগিয়ে নেয়া যেত, তখন এরশাদ একে পঙ্গু করেছেন। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমাদের চোখের সামনে জাতীয় সম্পদ নষ্ট আর লুটপাট হয়ে যাবে, আমরা তা কিছুতেই সহ্য করতে পারি না। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, যে নীতি ও দুর্নীতিতে জ্বালানি খাত চলছে, তাতে দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। এখন দাম বাড়ানোর কোন যৌক্তিকতা নেই। তারপরও দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে আইএমএফয়ের পরামর্শ মানতে আর বিশ্বব্যাংককে খুশি করতে। সরকার গ্যাসের দাম বাড়ালে, সিলিন্ডার ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়াতে পারবে। ক্ষতি হবে জনগণের। অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, ক্যাপটিভ বিদ্যুতের ১৭ ভাগ গ্যাসে উৎপাদিত হয়। এখানে যন্ত্রপাতির আধুনিকায়ন করতে পারলে, ৮ ভাগ বিদ্যুত সাশ্রয় করা যেত। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি হবে ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’র মতো। প্রয়োজনে বড় লোকের উপর ট্যাক্সের পরিমাণ বাড়াতে হবে। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি নয়, ৫৭ হাজার কোটি টাকার খেলাপী ঋণ ও সুইস ব্যাংকে সঞ্চিত তিন হাজার ১৬২ কোটি টাকা উদ্ধার করতে সরকারের ভূমিকা নিতে হবে। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, এবার প্রতিবাদ নয়, প্রতিরোধের আন্দোলন হবে। এই মূল্য বৃদ্ধির ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে সারাদেশে গণপ্রতিরোধ কমিটি গড়ে তুলতে হবে। খালেকুজ্জামান বলেন, সরকারের প্রস্তাবনা অযৌক্তিক। দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্জিত অর্থে জনগণের সেবা সম্প্রসারিত হয় না, বরং লুটেরাদের পুঁজি সঞ্চিত হয়। সৈয়দ আবু জাফর বলেন, অতীতে সরকার গ্যাস রফতানি করতে চেয়েছিল। জনগণের আন্দোলনে তা প্রতিহত করা হয়েছিল। এবারও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ চক্রান্ত প্রতিহত করা হবে। তিনি সিপিবি-বাসদের উদ্যোগে অযৌক্তিকভাবে দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে আগামীকাল দেশের সকল জেলায় ও ২৪ নবেম্বর ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ সফল করার আহ্বান জানান।
×