ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বেসরকারী স্কুলে ভর্তির নীতিমালা জারি ॥ প্রথম শ্রেণীতে লটারি

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২২ নভেম্বর ২০১৪

বেসরকারী স্কুলে ভর্তির নীতিমালা জারি ॥ প্রথম শ্রেণীতে লটারি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অনলাইনে ভর্তি ফরম বিতরণের সুযোগ রেখে নতুন শিক্ষাবর্ষে বেসরকারী স্কুলভর্তি নীতিমালা জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এবারও প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য হবে লটারি। প্রথম থেকে নবম শ্রেণীর ভর্তি ফরমের মূল্য ও ভর্তি ফী, ভর্তি প্রক্রিয়া এবং বয়স নির্ধারণ করে এ নীতিমালা জারি করা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, ভর্তি ফরম বিদ্যালয়ের অফিস থেকে সরাসরি অথবা অনলাইনে ডাউনলোড করে সংগ্রহ করার জন্য জমা দেয়া যাবে। প্রথমবারের মতো কার্যকর করায় অনলাইনে আবেদন এবার বাধ্যতামূলক নয়। প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য আগামী ১ জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীর বয়স ৫ থেকে ৭ বছরের মধ্যে হতে হবে। ভর্তিতে বাংলা মাধ্যমে সার্বোচ্চ আট হাজার টাকা এবং ইংলিশ ভার্সনে ১০ হাজার টাকার বেশি নেয়া যাবে না। নতুন নীতিমালা ইতোমধ্যেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে (সড়বফঁ.মড়া.নফ) দেয়া হয়েছে। যে কেউ এটি সংগ্রহ করতে পারবেন। এই নীতিমালা বাস্তবায়ন ও অনিয়ম পর্যবেক্ষণে তিন ধরনের কমিটিও গঠন করা হয়েছে। পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভর্তির আদলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালককে প্রধান করে ঢাকা মহানগরী, জেলা প্রশাসককে প্রধান করে জেলা কমিটি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান করে উপজেলা পর্যায়ের স্কুলগুলোর জন্য এ তিনটি পৃথক ভর্তি কমিটি গঠন করা হয়েছে। নীতিমালায় প্রথম শ্রেণীর লটারি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ভর্তি কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে স্বচ্ছতার সঙ্গে লটারি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী নির্বাচনের পাশাপাশি অপেক্ষমাণ তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। নির্ধারিত তারিখে নির্বাচিত শিক্ষার্থী ভর্তি না হলে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে। দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাক্রমের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী বাছাই করতে হবে। আর জেএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে হবে। দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষার পূর্ণমান ৫০। এর মধ্যে বাংলা ১৫, ইংরেজী ১৫ এবং গণিতে ২০। পরীক্ষার সময় এক ঘণ্টা। চতুর্থ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পূর্ণমান ১০০। এর মধ্যে বাংলা ৩০, ইংরেজী ৩০ ও গণিতে ৪০। ভর্তি পরীক্ষার সময় ২ ঘণ্টা। নীতিমালা অনুযায়ী, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার আংশিক এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ ২০০, সম্পূর্ণ এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ১৫০ এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকা ব্যতীত দেশের সকল প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন ফরমের জন্য সর্বোচ্চ ১০০ টাকা গ্রহণ করা যাবে। সেশন চার্জসহ ভর্তি ফী সর্বসাকুল্যে মফস্বল এলাকায় ৫০০ টাকা, পৌর (উপজেলা) এলাকায় এক হাজার টাকা, পৌর (জেলা সদর) এলাকায় দুই হাজার গ্রহণ করা যাবে। ঢাকা ব্যতীত অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকায় তিন হাজার টাকার বেশি হবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে ভর্তির ক্ষেত্রে ৫ হাজার টাকার অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা যাবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত আংশিক এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং এমপিওবহির্ভূত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য শিক্ষার্থীর ভর্তির সময় মাসিক বেতন, সেশন চার্জ ও উন্নয়ন ফীসহ বাংলা মাধ্যমে আট হাজার টাকা এবং ইংরেজী ভার্সনে ১০ হাজার টাকার বেশি গ্রহণ করা যাবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, জারি করা নীতিমালা অমান্য করলে অভিযুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধরন অনুসারে এমপিও, স্বীকৃতি ও পাঠদানের অনুমতি বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বলা হয়েছে, ভর্তির ফরম এবং ভর্তির ফী বাবদ সরকার নির্ধারিত অর্থের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা যাবে না। এটি করলে সরকার এমপিও বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। নীতিমালার ব্যত্যয় করলে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের অনুমতি বা একাডেমিক স্বীকৃতি বাতিলসহ প্রতিষ্ঠানের এমপিও বাতিল করা হবে। এদিকে দরিদ্র, মেধাবী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ভর্তিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে উল্লেখিত ফী যতদূর সম্ভব মওকুফের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে এই নীতিমালায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন অধিদফতর ও সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তানদের ভর্তির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট কর্মস্থলে অবস্থিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে আগের মতো দুই শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকবে। তবে আবেদন জমা দেয়ার আগে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক উইং থেকে এ বিষয়ে প্রত্যয়নপত্র নিতে হবে। এছাড়া বিগত বছরের ন্যায় এবারও মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যা এবং পুত্র-কন্যা পাওয়া না গেলে পুত্র-কন্যার পুত্র-কন্যাদের ভর্তির জন্য পাঁচ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। তবে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মূল ধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে ন্যূনতম যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে ভর্তির ক্ষেত্রে দুই শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকবে। আর সহোদর/যমজ ভাই/বোন থাকলে আসন শূন্য সাপেক্ষে তাদেরকে ভর্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তবে এই সুবিধা কোন দম্পতির সর্বোচ্চ দুই সন্তানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
×