ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পরিচালক খোকনের শেষ ইচ্ছা

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২২ নভেম্বর ২০১৪

পরিচালক খোকনের শেষ ইচ্ছা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মৃত্যুর প্রহর গুনছেন দেশবরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির বর্তমান সভাপতি শহীদুল ইসলাম খোকন। কিন্তু মৃত্যুর আগে স্ত্রী জয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শেষ দেখা করতে চান শহীদুল ইসলাম খোকন। খোকন জেনে গেছেন তাঁর মুখগহ্বর ‘মটর নিউরো ডিজিস’ (এএলএস)-এ আক্রান্ত। দিন দিন তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন। কতদিন বাঁচবেন তার কোন নিশ্চয়তা নেই। আমেরিকার ‘বেলভিউ হসপিটাল’ এই রোগের কোন চিকিৎসা নেই বলে তাকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন সন্তান আর আত্মীয়স্বজনের কাছে। গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর উত্তরাস্থ বাসায় গেলে খোকন মুখ দিয়ে অনেক কিছুই বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি বিধায় নিজ হাতে কলম নিয়ে কাগজে লিখে তাঁর আবেগ, অনুভূতি আর ইচ্ছে প্রকাশ করেন। খোকন লেখেন, ‘১৯৯০ সালে কুলাউড়ায় বজ্রমুষ্ঠি চলচ্চিত্র শূটিং চলাকালীন সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেশকিছুটা সময় শূটিং স্পটে বসে তার চলচ্চিত্রের শূটিং দেখেন। তিনি প্রায়ই একটি কথা বলেন, ‘সততা বড় শক্তি’। কিন্তু সেই সততা দিয়ে আমার জীবনে কী হলো? আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একবার দেখা করতে চাই প্লিজ। জীবনের কাছে আজ আমি হারতে বসেছি। আমার স্ত্রী, আমার তিন সন্তানকে এক অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে রেখে যাচ্ছি। জানি না আল্লাহ ভাগ্যে কী রেখেছেন।’ ১০ সেপ্টেম্বর খোকন উন্নত চিকিৎসার আশায় আমেরিকা গিয়েছিলেন। সেখানে চিকিৎসার ব্যাপারে আন্তরিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন নায়িকা শাবানা, পরিচালক কবির আনোয়ার, বিএফডিসির সাবেক ল্যাব ইনচার্জ মতিন ও বাংলাদেশী এক দম্পতি সেতু-হেপী। তাদের ঋণ কোনদিনই পরিশোধ করার মতো নয় বলে জানান খোকনের সহধর্মিনী জয়। অক্টোবরের শেষপ্রান্তে দেশে ফেরার পর গত চার/পাঁচদিন আগে স্কয়ার হসপিটালে ডা. আরেফিনের তত্ত্বাবধানে শহীদুল ইসলাম খোকনের পেটে অপারেশনের মাধ্যমে টিউব স্থাপন করা হয়। এই টিউব দিয়েই তিন ঘণ্টা পরপর তাকে খাওয়ানো হচ্ছে। চলচ্চিত্রের প্রতি অদম্য ভালবাসার কারণে আজ থেকে ১৫ বছর আগে ‘পালাবি কোথায়’ চলচ্চিত্র নির্মাণের সময় অর্থ সঙ্কটের কারণে উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের নিজ বাড়ি বিক্রি করে দেন খোকন। যুদ্ধ বিরোধীদের নিয়ে চলচ্চিত্র ‘ঘাতক’, নারী জাগরণের চলচ্চিত্র ‘পালাবি কোথায়’ এবং বাংলা ভাইকে নিয়ে চলচ্চিত্র ‘লাল সবুজ’ নির্মাণ করেছেন খোকন। তার প্রথম পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘রক্তের বন্দী’। এরপর তিনি নায়ক রুবেলকে নিয়েই নির্মাণ করেন ‘লড়াকু’, ‘বীরপুরুষ’, ‘বজ্রমুষ্ঠি’, ‘বিপ্লব’, ‘অকর্মা’, ‘সতর্ক শয়তান’, ‘বিষদাঁত’, ‘টপ রংবাজ’, ‘উত্থান পতন’ ইত্যাদি। বন্ধু খোকনকে দেখতে গিয়ে স্কয়ার হসপিটালে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন চিত্রনায়ক রুবেল।
×