ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে ২০ দলীয় জোটের পৃথিবী

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২২ নভেম্বর ২০১৪

ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে ২০ দলীয় জোটের পৃথিবী

শরীফুল ইসলাম ॥ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের কার্যক্রম এখন নেই বললেই চলে। ক্ষমতা থেকে দূরে থাকা, বেশ ক’জন নেতা জোট থেকে বেরিয়ে আলাদা রাজনৈতিক জোট গঠন করা এবং বিএনপির সঙ্গে কোন কোন শরিক দলের দূরত্ব তৈরি হওয়ায় আগের চেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে এই রাজনৈতিক মোর্চাটি। এ পরিস্থিতিতে ভবিষ্যত করণীয় ঠিক করতে আজ শনিবার রাতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে তার গুলশান কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে একে একে বেশ ক’টি শরিক দল বিএনপির সঙ্গ ত্যাগ করে চলে গেলেও ডামি নেতা দিয়ে পাল্টা কমিটি গঠন করে জোটে দলের সংখ্যা ২০ রাখা হয়েছে। তারপরও জোটের ঐক্য ধরে রাখতে পারছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বরং একে অপরকে বহিষ্কার করার মধ্য দিয়ে শরিক দলগুলো পাল্টাপাল্টি কমিটি গঠন করায় ২০ দলীয় জোটে এখন চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। সূত্র মতে, ২০ দলীয় জোটে বিএনপি ও জামায়াত ছাড়া অন্য দলগুলোর দেশব্যাপী তেমন সাংগঠনিক শক্তি নেই। এর মধ্যে কিছু দল আছে একেবারে নামকাওয়াস্তে। এসব দলগুলো বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে ছিল ক্ষমতার স্বাদ পাওয়ার জন্য। কিন্তু দীর্ঘ ৮ বছর ক্ষমতা থেকে দূরে থাকায় এবং সহসাই ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় তাদের মধ্যে চরম হতাশা নেমে এসেছে। কোন কোন শরিক দল ইতোমধ্যেই জোট থেকে বেরিয়ে নতুন রাজনৈতিক জোট গঠন করেছে। আর বর্তমানে জোটে থাকলেও বিএনপির সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বেশ ক’টি শরিক দলের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এসব বিষয়গুলো মাথায় রেখে দীর্ঘদিন পর আজ ২০ দলীয় জোটের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বৈঠকে জোটগতভাবে কিছু কর্মসূচী পালনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানা গেছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই জোটের শরিক দলের কর্মকা- নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ক্ষুব্ধ থাকলেও রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় থাকায় তিনি এ নিয়ের কাউকেই কিছু বলছেন না। এ সুযোগে শরিক দলগুলো যে যার মতো কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি এনপিপি সভাপতি শেখ শওকত হোসেন নীলু, এনডিপি চেয়ারম্যান আলমগীর মজুমদার, ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবদুর রশিদ এবং ন্যাপ ভাসানী ও মুসলিম লীগের একাংশ ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে এনডিএফ নামে আলাদা রাজনৈতিক জোট গঠন করেছে। তারা এখন বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে। এ নিয়ে বিএনপি হাইকমান্ড চরম বেকায়দায় রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে এনডিএফ গঠনের আগেই সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি জোটের সঙ্গ ত্যাগ করে ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এনডিপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলমগীর মজুমদার দলের চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মর্তুজাকে বহিষ্কার করার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ১২ সেপ্টেম্বর দলের প্রেসিডিয়াম সভায় গোলাম মর্তুজাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। সেই সঙ্গে আলমগীর মজুমদারকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অপরদিকে মজুমদারকে ২০ দলীয় জোট শরিক দল এনডিপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে গোলাম মর্তুজাও জানিয়ে দেন। ২০ দলীয় জোটের আরেক শরিক দল ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবদুর রশিদ প্রধানও সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে এ জোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে নতুন রাজনৈতিক জোট এনডিএফে যোগ দেন। একই দিন সংবাদ সম্মেলন করে ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান শেখ আনোয়ারুল হক ও বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান সেকেন্দার আলী মনিও এনডিএফে যোগ দেয়ার কথা জানান। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরই বিএনপি জোট ত্যাগ করে শেখ আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ)। এরপর আজহারুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে পাল্টা বাংলাদেশ ন্যাপ গঠন করে সে দলকে ২০ দলীয় জোটে রাখা হয়। বিএনপি জোটের আরেক শরিক দল কল্যাণ পার্টি। এর চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়া নিয়ে মতবিরোধ হলে এ দলের মহাসচিব আব্দুল মালেককে বহিষ্কার করেন সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম। শোনা যাচ্ছে, আব্দুল মালেকও একই নামে দল গঠন করে শেখ শওকত হোসেন নীলুর সঙ্গে নতুন রাজনৈতিক জোটে যোগ দিয়েছেন। কিছুদিন আগেই ২০ দলীয় জোটের শরিক দল মুসলিম লীগ ২ ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এর একভাগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কামরুজ্জামান খান। আর অপর অংশটি কামরুজ্জামানকে বহিষ্কার করে যুদ্ধাপরাধের মামলায় কারাবন্দী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বড় বোন জোবায়দা কাদের চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করে নতুন কমিটি করে। জোবায়দা কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন অংশটি বিএনপির জোট ছেড়ে নতুন রাজনৈতিক জোট এনডিএফে যোগ দিয়েছেন। জানা যায়, ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল ইসলামী ঐক্যজোটও বিএনপির ওপর ক্ষুব্ধ। এ বছর প্রথম দিকে খালেদা জিয়া রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামীকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তাকে সামনের সারিতে বসতে না দেয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে হলরুম থেকে বেরিয়ে যান। এছাড়া তিনি একবার আটক হন সকাল ১০টায় এবং এক ঘণ্টা পর ছাড়া পেয়ে যান। অথচ খালেদা জিয়া রাত ১০টায় নেজামীর মুক্তির দাবি করে বিবৃতি দেন। এ নিয়ে বিএনপির প্রতি ইসলামী ঐক্যজোট চরম ক্ষুব্ধ হয়। তাই এ দলটিও এখন ২০ দলীয় জোট থেকে বের হয়ে যাওয়ার পথ খুঁজছে বলে জানা গেছে। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকেই বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে জোটের পরিধি বৃদ্ধির চেষ্টা করে। প্রথম দিকে এ ব্যাপারে তেমন সাড়া না পেলেও এক সময় পরবর্তী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় যেতে পারে ভেবে নাম সর্বস্ব বেশ ক’টি দল বিএনপি জোটে যোগ দিতে থাকে। এসব নাম সর্বস্ব রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা মনে করেছিল বিএনপি জোট ক্ষমতায় গেলে কোন না কোনভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে। কিন্তু দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর অর্থাৎ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকেই জোটের শরিক দলগুলো কৌশলে বিএনপিকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। এ কৌশল প্রথম শুরু করে জামায়াত। তাদের দেখাদেখি অন্য দলগুলোও এ কৌশলে বিএনপিকে এড়িয়ে চলতে থাকে।
×