ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সেনাকুঞ্জে বর্ণাঢ্য আয়োজন

সশস্ত্র বাহিনী উন্নয়নে সবকিছুই করা হবে ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২২ নভেম্বর ২০১৪

সশস্ত্র বাহিনী উন্নয়নে সবকিছুই করা হবে ॥ প্রধানমন্ত্রী

ফিরোজ মান্না ॥ বিকেলের সোনা রোদে ফুলে ফুলে সাজানো ক্যান্টনমেন্ট রাতে রূপ নেয় রঙিন আলোয়। ঝলমল করা রূপের ছোঁয়ায় ঢাকা সেনানিবাস যেন মনোরম এক সৌন্দর্য্যে পরিণত হয়েছিল। সৌন্দর্যের বর্ণছটা গোটা সেনানিবাসকে রূপময় করে তুলেছিল। চোখ ধাঁধানো রূপের ছোঁয়ায় ঢাকা সেনানিবাসকে মনে হচ্ছিল দেশের মধ্যে অন্য রকম সৌন্দর্য্য ম-িত এক জায়গা। সাজানো ফুল বাগানের মতো সব কিছু ছিল পরিপাটি। সব কিছুই হয়েছে সশস্ত্র বাহিনী দিবসকে কেন্দ্র করেই। সেনাকুঞ্জে সাজগোজের কোন কমতি ছিল না। নানা রঙের পতাকার সারি সেনাকুঞ্জের গোটা এলাকায় এক মোহনীয় পরিবেশ ছিল। থোকা থোকা গাঁদা ফুলের ভুবন ভোলানো রূপের মাধুরী ছড়িয়েছে গোটা বিকেল বেলা। আর সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে জ্বলে বিদ্যুতের নানা বর্ণের আলো। সেনাকুঞ্জের সামনে পানির ফোয়ারাগুলো ফুলের মতো ফুটে ছিল। রূপময় ক্যান্টমেন্ট জুড়ে এমন দৃশ্যের মধ্যেই সাত বীরশ্রেষ্ঠের ছবি শোভা পেয়েছে কিছুদূর পরে পরে। বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুনে সশস্ত্র বাহিনীর নানা গৌবরের সেøøাগানও আকর্ষণীয় করে তুলেছিল সশস্ত্র বাহিনী দিবসকে কেন্দ্র করে। সেনাকুঞ্জে তৈরি করা মঞ্চে দুই পাশে মুক্তিযুদ্ধ আর কৃষকের ম্যুরাল যেন স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আপামর জনগণের অংশগ্রহণের কথা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মঞ্চেই বক্তব্য রাখেন। বিকেলের সোনা রোদ ঝলমলে আভায় দেশের কর্ণধার ব্যক্তিদের উপস্থিতি ছিল এখানেই। যথাযথ মর্যাদা ও বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে এমন একটি দিবস পালিত হয়েছে শুক্রবার। দিবসটিকে কেন্দ্র করে দিনব্যাপী ছিল নানা কর্মসূচী। সব কর্মসূচীই সুশৃঙ্খলভাবে পালিত হয়েছে। ভোর থেকে কর্মসূচী শুরু হয়ে চলে রাত পর্যন্ত। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকটি কর্মসূচীতে যোগ দিয়েছিলেন। ভোরে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় তাদের স্বাগত জানান তিন বাহিনী প্রধান ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার। সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিকতর শক্তিশালী বাহিনীতে রূপ দেয়ার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। সশস্ত্র বাহিনী যাতে গোটা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে, এ জন্য বর্তমান সরকার বাহিনীর অধিকতর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। ১৯৭৪ সালে সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে আমরা ফোর্সেস গোল-২০৩০ নির্ধারণ করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর কার্যক্রম এখন আর কেবল বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়Ñ বরং তা বিশ্বব্যাপী সম্প্র্রসারিত হচ্ছে। তারা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের মাধ্যমে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ছাড়াও বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কর্মকা-ের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছে। তাঁর সরকার কেবল সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নেই নয়Ñ গোটা জাতির সামগ্রিক উন্নয়নেও কাজ করছে। যেভাবে দেশের মানুষ বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে। তাঁর সরকারও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে জয়ী হবে এবং বর্তমান এর হার ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে নামিয়ে আনা হবে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক শক্তিশালী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক মন্দা তাকলেও বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আর পেছনে পড়ে থাকবে না, সামনের দিকে এগিয়ে যাবে এবং ২০২১ সালের আগে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশে পরিণত হবে। মুক্তিযুদ্ধকে বাঙালী জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেন। সবার দায়িত্ব হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা। বহু আত্মত্যাগ ও লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। তাই সবার দায়িত্ব হচ্ছে এই মহান অর্জনকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দিয়ে সমুন্নত রাখা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ মহান নেতার ডাকে সাড়া দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবনের ঝুঁকি নেয়ায় বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর বীর সদস্যগণ ও সর্বস্তরের মানুষ পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে শরিক হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ স্বাধীন জাতি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং আমরা লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা পেয়েছি। মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের কল্যাণে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রত্যেক দুস্থ মুক্তিযোদ্ধার বাসস্থান ও জীবিকা নিশ্চিত করতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। দেশব্যাপী মুক্তিযোদ্ধাদের খাস জমির পাশাপাশি ভাতা দেয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আমরা নতুন ট্যাংক, এপিসি, মাল্টিব্যারেল রকেট লঞ্চারসহ বহু অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সংযোজন করেছি। নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার জাহাইজ্জ্যার চর এলাকার সব খাসজমি পরিকল্পিতভাবে বনায়নের জন্য সেনাবাহিনীর অনুকূলে দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। এছাড়া ক্যারিং চর প্রদানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছ্।ে আমরা ইতোমধ্যে বিএমএ ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণ ২ বছর হতে বৃদ্ধি করে ৩ বছর এবং সৈনিকদের মৌলিক প্রশিক্ষণ ৬ মাস হতে ১ বছরে উন্নীত করেছি। এছাড়া ক্যাডেটদের জন্য বিএমএ’তে প্রশিক্ষণরত অবস্থার সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিক্যাল, ইলেক্ট্রনিক এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বিবিএ, পদার্থ বিজ্ঞান ও অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন এবং সৈনিকদের উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।
×