ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভারি যান চলাচল নিষিদ্ধ

ফাটল ॥ হুমকিতে তিস্তা ব্যারাজ

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২০ নভেম্বর ২০১৪

ফাটল ॥ হুমকিতে তিস্তা ব্যারাজ

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী॥ কেপিআই ওয়ানের আওতায় থাকা ১৫শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ হুমকির মুখে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে ব্যারাজের ওপর দিয়ে নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে ইজারাদারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত টোল গ্রহণের বিনিময় ভারি যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেয়ায় তিস্তা ব্যারাজের বিভিন্ন স্থানে ফাটল সৃষ্টি করেছে। এ পরিস্থিতিতে ইজারাদারের এক বছরের সময়সীমা শেষ দিন ২৪ নবেম্বর। তাই আগামী ২৫ নবেম্বর থেকে তিস্তা ব্যারাজের ওপর দিয়ে সকল প্রকার ভারি যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ। এ জন্য বুধবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ডিভিশন থেকে এ আদেশের নোটিস বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করা হয়। এ ছাড়া তিস্তা ব্যারাজের সহকারী পরিচালক (গোয়েন্দা) হাফিজার রহমানকে তিস্তা ব্যারাজে থেকে সরিয়ে ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডে বদলি করা হয়েছে। সূত্র মতে রোড ক্যারির জন্য নয়, তিস্তা ব্যারাজ নির্মাণ করা হয় শুধু সেচ প্রদানের নিমিত্তে । কিন্তু অভিযোগ, ২০০১ সালে বিএনপি তথা চার দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ব্যারাজের ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য ইজারা সিস্টেম চালু করে। সেই থেকে তিস্তা ব্যারাজের ওপর দিয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দর ছাড়াও পাথর, বালু ও মালামাল পরিবহনে ১০ চাকার অতিরিক্ত মালবোঝাই ট্রাক চলাচল শুরু করে। ফলে ভারি যানবাহন চলাচলের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। এরপর শুরু হয় ব্যারাজের ওপর দিয়ে যানবহন চলাচলের টোল আদায়ের ইজারা নিয়ে প্রতিযোগিতা। সর্বশেষ শর্তসাপেক্ষে গত বছর ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকায় তিস্তা ব্যারাজের ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের টোল আদায়ে ইজারা নেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা এলাকার প্রভাবশালী আলমগীর হোসেন রন্টু। শর্ত থাকে ব্যারাজের ওপর দিয়ে ২০ টনের অধিক কোন মালবাহী ট্রাক চলাচল করতে পারবে না। আর এ জন্য পানি উন্নয়ন বোর্র্ডের ডালিয়া ডিভিশনের যান্ত্রিক বিভাগের পক্ষে সেখানে পরিমাপ যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছিল। এ জন্য ইজারাদার কর্তৃক তিস্তা ব্যারেজের ওপর দিয়ে চলাচলের জন্য বাইসাইকেল, রিক্সা, ভ্যান ৬ টাকা, মোটর সাইকেল ২০ টাকা, মাইক্রোবাস ৮০ টাকা, খালি ট্রাক ২০০ টাকা, মালবাহী ট্রাক ও বাস ৫০০ টাকা করে টোল আদায় করা হয়। তবে ২০ টনের বেশি যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাঞ্জা থাকলেও বাস্তবচিত্র ছিল উল্টো। অভিযোগ মতে, পরিমাপ যন্ত্রটি ইচ্ছাকৃতভাবে অকেজো দেখানো হয়। প্রতিদিন ব্যারাজের ওপর দিয়ে কমপক্ষ দুই শতাধিক ৩০ টন ওজনের মালবোঝাই ট্রাক চলাচল করতে থাকে। এতে ব্যারাজের বিভিন্নস্থানে ফাটল দেখা দেয়। সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যারাজের ২,২০,২১ ও ২৪ নম্বর স্লইচ গেট বরাবর উপরে ব্যাপক ফাটল ধরেছে। যা ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করছে। সূত্র জানায়, ব্যারাজটি দেখভালের দায়িত্ব ছিল সহকারী পরিচালক (গোয়েন্দা) হাফিজার রহমানের, কিন্তু অভিযোগ রয়েছে তিনি উৎকোচের বিনিময়ে ভারি যানবাহন চলাচলে তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছিল। ফলে তাকে এই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডে বদলি করা হয়েছে। এদিকে উর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষ তিস্তা ব্যারাজের ওপর দিয়ে আগামী ২৫ নবেম্বর থেকে সকল প্রকার ভারি যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বুধবার বিভিন্নস্থানে নোটিস জারি করেছে।
×