ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বর্ণশিল্প বিকাশে প্রধান বাধা উচ্চ শুল্ক

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২০ নভেম্বর ২০১৪

স্বর্ণশিল্প বিকাশে প্রধান বাধা উচ্চ শুল্ক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সৌন্দর্য বৃদ্ধির অন্যতম উপকরণ অলঙ্কার। সভ্যতার শুরু থেকেই এর প্রচলন বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়। বিশ্বের অনেক দেশে এ খাতকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করলেও পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নীতিমালার অভাব এবং উচ্চ শুল্ক- এ দুটি কারণ খাতটির বিকাশে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। শুল্ক প্রত্যাহার করা হলে দেশে স্বর্ণশিল্পের সঙ্গে ডায়ম- শিল্পেরও বিকাশ ঘটবে বলে মনে করেন তারা। যদিও এ শিল্পের উন্নয়নে যে কোন যৌক্তিক দাবি পূরণে আশ্বাস দিয়েছে সরকার। চলতি বছরের বাজেটে বিদেশ ফেরত যাত্রীদের ২০০ গ্রাম সোনা আনার ক্ষেত্রে ভরিপ্রতি শুল্ক ১৫০ টাকার পরিবর্তে ৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করে সরকার। এর ফলে সরকার সোনা আমদানি থেকে ১৫০ কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। ভরিপ্রতি শুল্ক ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হলে সরকার প্রতিবছর ১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে পারত। এর পাশাপাশি স্বর্ণ চোরাচালান অনেকাংশে বন্ধ হতো বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। দেশের স্বর্ণশিল্প বিকাশে ব্যবসায়ীদের নীতিমালার প্রস্তাব এবং শুল্ক কমানোর দাবি কতটুকু যৌক্তিক, তা জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমরা তো চাচ্ছি, যাতে কালোবাজারি বন্ধ হয়। সে জন্য সরকারের চেষ্টা আছে। আমি একটা বিষয় নিজেও উপলব্ধি করতে পারি না- এত সোনা ধরা পড়ে, এগুলো যায় কোথায়? জুয়েলার্স এ্যাসোসিয়েশন যে প্রস্তাব করেছে, আমি বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ করেছি। আমাদের দেশে যারা জুয়েলার্স ব্যবসায়ী আছেন, তারা মনে করেন- ট্যাক্স বেশি, ভ্যাট বেশি, এসব কারণে ট্যাক্স-ভ্যাট না দিয়ে মানুষ চোরাই পথে আমদানি করছে। যেমন এক সময় আমাদের মোবাইল ফোনের ওপরে অতিমাত্রায় ট্যাক্স-ভ্যাট ছিল, তখন মোবাইল ফোন চোরাই পথে আসত। ট্যাক্স যখন আমরা কমিয়ে দিলাম, তখন কালোবাজারি বন্ধ হয়ে গেল। স্বর্ণের চোরাচালান ও ট্যাক্স-ভ্যাটের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গ আলাপ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বিষয়টি তারা (এনবিআর) দেখবে।’ বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সভাপতি কাজী সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নীতিমালার মাধ্যমে দেশের স্বর্ণশিল্পকে আরও গতিশীল করতে আমরা নীতিমালার প্রস্তাব করেছি। বাণিজ্যমন্ত্রী আমাকে জানিয়েছেন, তিনি বাজুসের মৌখিক দাবি অর্থমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। এ সংক্রান্ত একটি লিখিত প্রস্তাব করার জন্য তিনি আমাদের জানিয়েছেন। সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। আলোচনা করে জুয়েলার্স ব্যবসায়ীদের দাবি প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান কাছে পাঠানো হবে।’ নীতিমালা হলে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার বিষয় জোরালো হবে দাবি করে তিনি বলেন, ‘নীতিমালা না থাকায় একদিকে ব্যবসায়ীরা পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অন্যদিকে কয়েক বছর থেকে বিশ্ববাজারে সোনার দাম কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় জুয়েলারি ব্যবসায় দেখা দিয়েছে নিরাপত্তা-সঙ্কট। জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান ডাকাতির ফলে নিঃস্ব ও সর্বস্বান্ত হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে এ খাতে বিরাজ করছে আশঙ্কজনক অবস্থা। স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি জোর দাবি জানাই।’ এ প্রসঙ্গে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, ‘দেশের জন্য লাভজনক হলে এবং সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয়া হলে বাজেটে এ খাতে আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।’ বাজুস সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক খান জানান, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গত ৫ জুন ব্যাগেজ রুলের আওতায় একজন যাত্রীকে ২০০ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কার শুল্কমুক্তভাবে আনার পরিবর্তে ১০০ গ্রামের অনুমতি দিয়েছে এবং ২০০ গ্রাম স্বর্ণবার বা স্বর্ণপি- প্রতি ভরির জন্য ১৫০ টাকা শুল্ক করের পরিবর্তে ৩ হাজার টাকা এবং এটিভি বাবদ ৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।’
×