ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সবজি উৎপাদন

প্রকাশিত: ০৫:০২, ২০ নভেম্বর ২০১৪

সবজি উৎপাদন

‘মাছে-ভাতে বাঙালী’ প্রবাদটি হাজার বছর ধরে প্রচলিত। কালের পরিক্রমায় সে প্রবাদের পরিবর্তন ঘটেছে। মাছের পাশাপাশি এসেছে নতুন দৃশ্যপট। বাঙালীর খাবার তালিকায় সবজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। বাঙালী এখন সবজি-ভাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছে। মাছের ওপর চাপ কমাতে বিকল্প খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে সবজিকে বেছে নেয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে দেশে সবজির উৎপাদন বৃদ্ধি ও নিত্যনতুন পদ্ধতিতে একই জমিতে অধিক সবজি আবাদকে উৎসাহিত করার বহুমুখী পরিকল্পনা গৃহীত হওয়ার ফলে এ ক্ষেত্রে সাফল্য এসেছে। সবজি উৎপাদনে দেশে প্রান্তিক কৃষক সমাজ স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। জানা যায়, সবজি উৎপাদনে দেশে সাধিত হয়েছে সবজি বিপ্লব। বিস্ময়কর হলেও সত্য, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশে সবজির উৎপাদন বেড়েছে প্রায় পাঁচগুণ এবং বিশ্বে সবজি উৎপাদনের দিক দিয়ে বাংলাদেশ এখন তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। গত এক দশকে দেশে সবজির আবাদি জমির পরিমাণ ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সবজির আবাদি জমির বৃদ্ধির এই হার বিশ্বের সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (এফএও)। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, দেশে সবজি বিপ্লব সাধনে সরকারের গৃহীত নানা কর্মসূচী কৃষক সমাজকে উদ্বুদ্ধ করেছে। গত এক যুগে দেশে কৃষি জমির পরিমাণ বৃদ্ধি না পেলেও কৃষকরা তাদের দক্ষতা, কৌশল ও মেধার মাধ্যমে সবজি ফলনের পরিমাণ বাড়িয়েছে আশাতীতভাবে। দেশে বর্তমানে এক কোটি ৬২ লাখ কৃষক পরিবারের নিরন্তর শ্রম আর ঘামে সবজি উৎপাদন বেড়েই চলেছে। জমির পাশের উঁচু স্থান, আইল, টিনের চালা, টব, বাড়ির উঠান ও ছাদÑযেখানে ফাঁকা জায়গা সেখানেই পরিকল্পিত উপায়ে সবজি চাষ করা হচ্ছে। সবজি চাষে কৃষকরা আর্থিকভাবে সচ্ছল হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় আয়েও বিশেষ ভূমিকা রাখছে। জানা যায়, গত এক যুগে দেশে মাথাপিছু সবজির ব্যবহার বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার স্ট্যাটিসটিক্যাল ইয়ারবুক-২০১৩ অনুযায়ী ২০০০ থেকে ২০১০ সময়ে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি হারে সবজির আবাদি জমির পরিমাণ বেড়েছে বাংলাদেশেÑএ বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ। এছাড়া গত এক বছরে সবজি রফতানিতে দেশের আয় বেড়েছে ৩৪ শতাংশ, পাশাপাশি কৃষিজাত খাদ্যের রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৬০ শতাংশ। কৃষি অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, সবজি রফতানি বৃদ্ধি করা গেলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি অন্যতম প্রধান খাত হতে পারে এটি। কৃষকদের সামনে এ ব্যাপারে সহযোগিতার হাত আরও প্রসারিত করতে হবে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে। দ্রুত পচনশীল হওয়ায় উৎপাদিত সবজি যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পচে যাওয়ার খবরও সংবাদপত্রে প্রকাশিত হচ্ছে। এর ফলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা সচেতন মহলকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। সবজি উৎপাদনের এই ধারাবাহিক সাফল্য বজায় রাখতে হলে সবজি দ্রুত বাজারজাতকরণ ও রফতানির দিকে আরও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারের কৃষি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে। একই সঙ্গে সবজি সংরক্ষণে অল্প খরচে হিমাগার তৈরি করার উদ্যোগও নিতে হবে। এসব উদ্যোগ সার্থকতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে পারলে আগামী দিনে সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ আরও যে সাফল্য দেখাতে সক্ষম হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
×