ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আইএস বর্বরতা

প্রকাশিত: ০৫:০০, ২০ নভেম্বর ২০১৪

আইএস বর্বরতা

বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের দামামা বেজে না উঠলেও কয়েকটি দেশের যুদ্ধবিগ্রহ ও আইএসের বর্বরতার বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে চলেছেন। আইএস বা ইসলামী রাষ্ট্র যাকে বলা হচ্ছে বায়বীয় সত্তা। ঘোষিত এ স্টেটের সীমারেখা নেই। রাষ্ট্রীয় কাঠামো নেই, আছে শুধু খেলাফতের ঘোষণা। আইএসের নির্মমতার শুরু ২০১৪ সালে পবিত্র রমজান মাসে যখন তারা ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ দখল করে। তারা সেই সময় শিয়া, ইয়াজিদি, কুর্দীদের নির্মমভাবে হত্যা করে। আরও হত্যা করে পশ্চিমা সাংবাদিক ও ত্রাণকর্মীদের। আইএস জঙ্গীবাদের পশ্চিমাদের গলা কেটে হত্যার ঘটনায় গোটা বিশ্ব হতাশা ও ঘৃণা প্রকাশ করেছে। ২০০১ সালে ৯/১১ এর ঘটনার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা যখন ইরাক জবরদখল করে তখন এক অদ্ভুত রাজনৈতিক সামরিকীকরণের ঘটনা ঘটে। ইরাকের প্রতি আনুগত্যশীল শিয়া গোষ্ঠী মার্কিন মদদ লাভ করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি জনসাধারণ ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু থেকে বিতাড়িত হয়। কেননা তারা ছিল সাদ্দাম পক্ষের লোক। পরবর্তী সরকার মার্কিনীদের তাঁবেদার হয়ে সুন্নিদের প্রতি যে নিপীড়নের নীতি গ্রহণ করে তার ফলেই সুন্নি গোষ্ঠীর আজকের এই সশস্ত্র অবস্থা, যাকে বলা হচ্ছে আইএসের জঙ্গী। বর্তমানে এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা প্রায় দুই লাখের বেশি। যাদের অধিকাংশই হচ্ছে ইরাকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনা সদস্য। আইএস জঙ্গীরা যখন তিন মার্কিন ও এক ব্রিটিশ নাগরিকের শিরñেদ করার ভিডিও বার্তা প্রকাশ করে তখন থেকে পশ্চিমা মিডিয়া একে ব্যাপকভাবে কভারেজ দেয়। বিশ্ববাসীর কাছে এবং আন্তর্জাতিক মহলে আইএস একটি হিংস্র জঙ্গী পশ্চাৎপদ গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিতি পায়। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নামে, বিচারে, মানবিকতার মানদ-ে এ ধরনের নির্মম আচরণ কখনও সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। আর স্বাভাবিক কারণেই পাশ্চাত্যের প্রতিক্রিয়াও ছিল আগ্রাসী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসলামী স্টেট জঙ্গীদের নির্মূল করতে বিমান হামলা চালায়। আইএস যেহেতু বর্বরভাবে মানুষ হত্যা করেছে এবং যে সব ইসলামী রাষ্ট্র আইএস দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যেমন বাহরাইন, জর্দান, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত তারা পশ্চিমাদের বিমান হামলা সমর্থন করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা এ যুদ্ধকে আন্তর্জাতিক রূপ দিতে চাইছেন। একদিকে তিনি সংক্ষুব্ধ ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সমর্থন পাচ্ছেন, অপরদিকে খেলাফতের হাতে ক্ষমতা হারানোর ভয়ে উদ্বিগ্ন আমির, ওমরা এবং বাদশারা পাশ্চাত্যকে সমর্থন দিচ্ছেন। তাই ইসলামী স্টেটের অবস্থান অসহায় হয়ে পড়ছে। শিয়াদের দ্বারা নির্যাতিত সুন্নিরা স্বাভাবিকভাবেই সুন্নি আরব দেশগুলোর সহানুভূতি প্রত্যাশা করতে পারে। সৌদি আরব তাদের প্রতি সহানুভূতি তো দূরের কথা আইএসের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। আরব বিশ্ব এখন এক জটিল এবং কঠিন সময় অতিক্রম করছে। লোহিত সাগর থেকে পারস্য উপসাগর পর্যন্ত চলছে এক ভয়ঙ্কর পরিবর্তন প্রক্রিয়া। লেবানন, সিরিয়া, ইরাকে গৃহযুদ্ধ চলছে। এই গৃহযুদ্ধকে কেন্দ্র করে আরব শাসকরা বিভিন্ন পক্ষে জড়িয়ে এক কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করছে। কয়েক বছর ধরে জঙ্গীবাদ বাংলাদেশে আস্তানা গড়ার চেষ্টা করছে। কয়েক মাস আগে জঙ্গীরা ভারতের কয়েকটি এলাকায় বোমা বিস্ফোরণের চেষ্টা চালিয়েছে। ইরাক ও সিরিয়াসহ আরব রাষ্ট্রগুলোর অবস্থান পাল্টা অবস্থান, অসংখ্য সশস্ত্র গ্রুপ, পাশ্চাত্যের সশস্ত্র হস্তক্ষেপ এবং বিবিধ সমীকরণ ইত্যাদির মধ্যে কিভাবে সমস্যার সমাধান হবে সেটাই দেখার বিষয়। তবে এটা ঠিক যে, আইএসের নিষ্ঠুরতা মানুষ আর দেখতে চায় না। শান্তিপ্রিয় দেশগুলো এই নিষ্ঠুরতার পক্ষে নয় সামরিক শক্তি আপাত বিজয় লাভ করতে পারে কিন্তু স্থায়ী বিশ্ব শান্তির জন্য রাজনৈতিক সমাধানের কোন বিকল্প নেই। পারস্য উপসাগরীয় আরব দেশগুলোতে শান্তি ফিরে আসুকÑ এটাই বিশ্ববাসীর কামনা।
×