ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তদন্ত ভিন্ন দিকে দেয়ার নতুন ছক জামায়াত শিবিরের

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ২০ নভেম্বর ২০১৪

তদন্ত ভিন্ন দিকে দেয়ার নতুন ছক জামায়াত শিবিরের

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী/ রাবি সংবাদদাতা ॥ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক অধ্যাপক একেএম শফিউল ইসলাম হত্যাকা-ের তদন্ত ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার জন্য নতুন ছক কষেছে জামায়াত-শিবির। হত্যাকা-ের পর একটি জঙ্গী সংগঠন দায় স্বীকার করার পরও ব্যর্থ হয়ে তার বিভাগের এক ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের জের ধরে এ হত্যাকা- ঘটানো হয়েছে বলে প্রচার চালাচ্ছে তারা। বিএনপি-জামায়াতপন্থী কয়েকটি গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত কয়েকটি খবরও ছাপানো হয়েছে। যদিও পুলিশ হত্যাকা-ে এখন পর্যন্ত ওই ছাত্রীর সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হত্যাকা-ের মোড় ঘোরাতে প্রথমে ফেসবুক মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কথিত আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২ নামের ফেসবুক পেজে হুমকি-ধমকি ও নানা তথ্য দিয়েও শেষ পর্যন্ত সেটিতে ফায়দা লুটতে না পেরে এবার শিক্ষকের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা ছাত্রীকে নিয়ে নানা রটনা ছড়ানো হচ্ছে। যেনতেন প্রকারে ওই ছাত্রীকে ভিকটিম বানানোর চেষ্টার নতুন ছক আঁকা হয়েছে। জানা যায়, গত শনিবার দিনের বেলা নিজের বাড়ির পাশে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রাবি শিক্ষক শফিউল ইসলামকে। এর কয়েক ঘণ্টা পর আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২ নামে একটি ফেসবুক পেজে এ হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করে স্ট্যাস্টাস দেয়া হয়। এ ছাড়া খুনের ধরন দেখে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সবাই দাবি করেছে, এটি একটি প্রশিক্ষিত বাহিনীর কাজ। এর পরও ঘটনার তদন্তের মোড় ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য তার বিভাগের ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের জেরে হত্যাকা- ঘটেছে বলে প্রচার চালানো হচ্ছে। জানা যায়, ড. শফিউলের হত্যাকা-ের দিন রাতে নিহত শিক্ষক শফিউল ইসলামের বাসা থেকে ওই বিভাগের এক ছাত্রীকে উদ্ধার করে পুলিশ। আটক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের তাপসী রাবেয়া হলে থাকতেন। তিনি ওই শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে গবেষণা করছিলেন। শফিউল ইসলামকে হত্যার খবর পাওয়ার পর ওই ছাত্রী তার মাকে ফোন করে জানান তিনি ওই বাসায় আছেন। বাসাটি তালাবদ্ধ থাকায় সেখান থেকে তাকে নিয়ে যেতে বলেন। এ ঘটনা পুলিশকে জানানো হলে পুলিশ রাতেই তাকে উদ্ধার করে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক হত্যায় ওই ছাত্রী ও তার প্রেমিকের দিকে অভিযোগ তুলে হত্যাকা-ের তদন্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে জামায়াত-শিবির। রাবি শিবিরের সভাপতি এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর সংশ্লিষ্টতা তুলে ধরে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি অলাইনে প্রকাশিত সংবাদের শেয়ারও দিয়েছেন তিনি। এসব স্ট্যাটাসে শফিউল ইসলামকে কটাক্ষ করে নানা ধরনের মন্তব্যও করা হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্টদের দাবি, শফিউল ইসলাম প্রায়ই অনেক রাত করে বাড়িতে ফিরতেন। যদি প্রেম ঘটিত কারণে শফিউল ইসলামকে হত্যা করা হতো তাহলে খুনীরা রাতে অনেক সময় পেত। মূলত প্রকাশ্য দিবালোকে তাকে হত্যা করে প্রগতিশীল শিক্ষকদের মধ্যে ভয় ছড়িয়ে দেয়ার জন্য এ কাজ করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই ছাত্রী শফিউল ইসলামের তত্ত্বাবধানে গবেষণা করছিলেন। এ কারণেও তার বাড়িতে গিয়ে থাকতে পারেন। শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, প্রগতিশীল ও বাউলভক্ত শিক্ষক ড. শফিউল ইসলাম লালন চর্চা করতেন। তাঁর জীবন ও চিন্তাধারা ভিন্নধর্মী হওয়ায় তাঁকে নানা সময়ে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হতো। বিভিন্ন সময় বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছে এমন হুমকি পাওয়ার কথাও তিনি জানিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ধারণা, ড. শফিউল ছাত্রশিবিরের ক্যাডারদের হামলার শিকার হয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, ড. তাহের হত্যাকা-ের সঙ্গে শিবিরের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল। ড. শফিউল হত্যাকা-ের দিনও সকালে ক্যাম্পাসে মিছিল দিয়েছিল শিবির। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই এ ঘটনা ঘটে। সুতরাং এ হত্যাকা-ের সঙ্গে শিবির জড়িত থাকতে পারে। তারা এখন নানা রটনা সৃষ্টি করছে। শফিউল হত্যাকা-ের পর তার একমাত্র ছেলে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ এবং সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র সৌমিন শাহরিদ জেভিন সরাসরি ধর্মীয় উগ্র মৌলবাদীদের তার বাবার হত্যাকা-ের জন্য দায়ী করেন। এর আগে তার বাবার কাছে কাফনের কাপড় পাঠানো হয়েছিল বলেও দাবি করেছেন তিনি। এ ছাড়া তার এক আত্মীয়ও এ ঘটনা জামায়াত-শিবিরের প্রশিক্ষিত ক্যাডাররা পরিকল্পিতভাবে ঘটিয়েছে বলে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন। তাছাড়া পুলিশও এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করেছে। এর মধ্যে ১১ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে দুই দিনের রিমান্ডেও নেয়া হয়েছে। এদের কাছ থেকে মামলার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলেও আশা করছে পুলিশ।
×