ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জেএমবির বিরুদ্ধে দু’দেশকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৯ নভেম্বর ২০১৪

জেএমবির বিরুদ্ধে দু’দেশকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে

তৌহিদুর রহমান ॥ ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি বলেছেন, শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশে জঙ্গী দমনে সফল হয়েছে। জেএমবির জঙ্গীরা এখন বাংলাদেশ থেকে উচ্ছেদ হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া ভারতের লোকসভায় আসন্ন শীত অধিবেশনে সীমান্ত চুক্তি পাস হবে বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেন। জনকণ্ঠকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট নিয়ে তার মন্তব্য, নির্বাচন বয়কট কোন সমাধান নয়। এছাড়া সামাজিক অগ্রগতিতে পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ অনেক বেশি এগিয়ে রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। সদ্য শেষ হওয়া বাংলাদেশ-ভারত হাইকমিশনার সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকায় আসেন বীণা সিক্রি। ঢাকায় অবস্থানকালে শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে জনকণ্ঠের মুখোমুখি হন তিনি। বীণা সিক্রির সঙ্গে আলাপচারিতায় দুই দেশের বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। ২০০৩ সালের নবেম্বর থেকে ২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বীণা সিক্রি। বাংলাদেশে জঙ্গী দমনে আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিকা নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে বীণা সিক্রি বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরই শেখ হাসিনার সরকার জঙ্গী দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেয়। এই ক্ষেত্রে তারা সফলও হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে ভারতীয় বিভিন্ন বিচ্ছন্নতাবাদীদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প উচ্ছেদ করেন শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে বাংলাদেশে বিভিন্ন জঙ্গীগোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বিশেষ করে শেখ হাসিনা সরকার সে সময় জমিয়াতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর বিরুদ্ধে কঠোর এ্যাকশন নেয়। আমার এখনও মনে আছে জেএমবির উত্থানের সময় রাজশাহীতে বাংলাভাই প্রকাশ্য ফাঁসি দিত। আইন নিজের হাতে তুলে নিত। তবে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরই জেএমবির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হয়। বীণা সিক্রি বলেন, আমি যে সময় ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলাম, তখন ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নাইন ইলেভেন ঘটনার পরবর্তী প্রেক্ষিত। তখন আফগানিস্তানের ইসলামী জঙ্গীবাদী গ্রুপ এই অঞ্চলে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করে। আফগানিস্তান ফেরত জঙ্গীরা বাংলাদেশে জেএমবি গড়ে তোলে। আর সেই জেএমবি রাজশাহীতে অমানবিক কার্যক্রম শুরু করেছিল। তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে প্রকাশ্য ফাঁসি দিত। এখন মধ্যপ্রাচ্যে আইএসও প্রকাশ্য ফাঁসি দিচ্ছে। জেএমবির সঙ্গে আইএস’র কার্যক্রমের মিল রয়েছে। ভারতের বর্ধমান বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার প্রেক্ষিতে দুই দেশে জঙ্গীদের কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে বীণা সিক্রি বলেন, বাংলাদেশ থেকে জেএমবি তাড়া খেয়ে এখন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিয়েছে। তারা ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছে। তারা সেখান থেকে বাংলাদেশ ও ভারতবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সেখান থেকেই জেএমবি এখন দুই দেশেই সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছে। তাই এদের বিরুদ্ধে দুই দেশ থেকেই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে জানতে চাইলে বীণা সিক্রি বলেন, স্থল সীমান্ত চুক্তির বিষয়টি খুব দ্রুত সমাধান হবে। এই শীত অধিবেশনেই ভারতের লোকসভায় স্থল সীমান্ত চুক্তি তোলা হবে। ইতোমধ্যেই লোকসভার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি তোলা হয়েছে। এই বিষয়ে আলোচনাও হয়েছে। স্থায়ী কমিটি নিশ্চয়ই এই বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। বিগত কংগ্রেস সরকারের আমলে তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তি নিয়ে তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি উল্লেখ করে বীণা সিক্রি বলেন, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং ঢাকায় এসেছিলেন। তখন তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তি নিয়ে কোন অগ্রগতি হয়নি। কংগ্রেস সরকার দুই বছর তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে তেমন কিছুই করেনি বলে মন্তব্য করেন তিনি। বীণা সিক্রি বর্তমানে দিল্লীর জামেয়া মিল্লা ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ভারতের বিজেপি সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকারের সম্পর্ক কেমন হবেÑ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মোদি সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সহযোগিতা আরও বাড়বে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতোমধ্যেই সে ঘোষণা দিয়েছেন। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ইতোমধ্যেই নিউইয়র্কে একটি বৈঠক হয়েছে। আপনার নিশ্চয় মনে আছে সেই বৈঠকে মোদি বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ বানায়া, শেখ হাসিনা বাংলাদেশ বাচায়া’। এটাই মনে রাখতে হবে। ১৯৭১ সালের মধ্যে দিয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। মোদি সরকার সেই সম্পর্কই ধরে রাখতে চায়। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ভারতের সাবেক এই হাইকমিশনার বলেন, নির্বাচন বয়কট কোন সমাধান নয়। গণতন্ত্র মানে অংশগ্রহণ। গণতন্ত্র মানে সংলাপ। গণতন্ত্র মানে মিলেমিশে কাজ করা। এসব মনে রাখতে হবে। তিনি বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরে আসন্ন বিধান সভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে কংগ্রেস ও ন্যাশনাল কনফারেন্সের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। তবে নির্বাচন কমিশন থেকে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরে তাদের মধ্যে এই মতবিরোধ আর নেই। এটাই হওয়া উচিত। আমি এটাই বলতে চাইছি নির্বাচন বয়কট করা কোন অবস্থাতেই উচিত নয়। নির্বাচন বয়কটে সমস্যা আরও বেড়ে যায়। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে কোন ব্যবধান দেখেন কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে বীণা সিক্রি বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সামাজিক অগ্রগতিতে পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। এছাড়া পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতি অনেক সমৃদ্ধ বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান সরকার ভারতের সিনেমা প্রদর্শন বন্ধ করে। একই সঙ্গে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে ভারতের উত্তরপূর্ব প্রদেশে ও পাকিস্তানের মধ্যে দিয়ে আফগানিস্তানে যাওয়া-আসা বন্ধ করে। সেই সময়েও এক ধরনের ট্রানজিট চালু ছিল। তবে পাকিস্তানের তৎকালীন সরকার সেটা বাতিল করে। সেই মানসিকতা কেউ কেউ এখনও পোষণ করে থাকতে পারেন। এই থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সম্পর্কের ক্ষেত্রে উদার হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
×