ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পররাষ্ট্রমন্ত্রী সকাশে নতুন রাষ্ট্রদূত

যুদ্ধাপরাধ বিচারের রায় নিয়ে ইইউর বিবৃতিতে আপত্তি ঢাকার

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ১৪ নভেম্বর ২০১৪

যুদ্ধাপরাধ বিচারের রায় নিয়ে ইইউর বিবৃতিতে আপত্তি ঢাকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচারের রায় নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেয়া বিবৃতির বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে সরকার। ঢাকায় নবনিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়োডনের সঙ্গে এক বৈঠকে এই আপত্তি জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রক্রিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে ঢাকায় নিযুক্ত সংস্থাটির রাষ্ট্রদূত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকায় নবনিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়োডন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৃহস্পতিবার বৈঠক করেন। বৈঠকের শুরুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়োডনকে স্বাগত জানান। বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ বিচার কার্যক্রম ও রায় পরবর্তীতে ইইউর বিবৃতির বিষয়ে বলেন, বৈশ্বিকভাবে মৃত্যুদ-ের বিষয়ে ইইউর একটি বিশেষ অবস্থান রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায় প্রকাশ পরবর্তী সময় অবশ্যই এ ধরনের বিবৃতি প্রদান করা উচিত হয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ভবিষ্যতে ইইউ আরও সচেতনভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করবে যাতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পক্ষে ইইউ পার্লামেন্টের রেজ্যুলেশনের আলোকে তাদের সমর্থন সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। ইইউর এ ধরনের বিবৃতি প্রদান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিষয়ে ও যুদ্ধাপরাধের পক্ষে ইইউর অবস্থান সম্পর্কে জনমনে ভ্রান্ত ধারনা দিতে পারে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ প্রেক্ষিতে ইইউ রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়োডন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। ইইউ রাষ্ট্রদূত জানান, সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে ইইউ পার্লামেন্টের রেজ্যুলেশনের বিষয় টেনে বলেন, ইইউ বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া সমর্থন করে। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল থেকে জামায়াতে ইসলামী নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির আদেশ হওয়ার পরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মৃত্যুদ- প্রথা বিলোপের আহ্বান জানিয়ে একটি বিবৃতি দেয়। এই বিবৃতি দেয়ার পরে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। এ প্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়োডন জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচারের বিপক্ষে নয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। জামায়াতে ইসলামীর নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির আদেশ হওয়ার পরে ইইউ যে বিবৃতি দিয়েছে, এটা শুধু নিজামীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। ইইউ সারাবিশ্বের সকল দেশ থেকেই মৃত্যুদ-ের বিরোধিতা করে আসছে। নিজামীর মৃত্যুদ-ের বিরোধিতা মানেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিরোধিতা নয় বলেও ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন তিনি। বৈঠকে ইইউ রাষ্ট্রদূত মায়োডন বাংলাদেশের জন্য ইইউর আগামী সাত বছরের উন্নয়ন কর্মসূচী সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেন। তিনি জানান, বাংলাদেশে ইইউর সহায়তা আগের চেয়ে শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই সহায়তা কর্মসূচী বাংলাদেশ সরকারের ভিশন-২০২১ ও ছয় বছর মেয়াদী জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য খাত এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান তৈরি-এ তিনটি বিষয়ে ইইউর নতুন গৃহীত কর্মসূচী গুরুত্বারোপ করবে। এছাড়া সমুদ্র অর্থনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন, জৈব-নিরাপত্তা, শান্তিরক্ষা, মানব নিরাপত্তাসহ অন্যান্য বিষয়েও বাংলাদেশ এবং ইইউর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারের ইইউ আগ্রহী বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেন রাষ্ট্রদূত। পিয়েরে মায়োডন আরও জানান, বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য বহুমুখীকরণ প্রচেষ্টা বিশেষ করে জাহাজ নির্মাণ, ওষুধ শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ইইউ সহায়তা দেবে। ইইউর এসব উদ্যোগ বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে সহায়তা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মায়োডনকে স্বাগত জানান। বাংলাদেশ ও ইইউর মধ্যে সুদৃঢ় ও আন্তরিক সম্পর্ক গড়ার বিষয়ে আশা প্রকাশ প্রকাশ করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নে ইইউ সহযোগিতার বিষয়ে রাষ্ট্রদুত মায়োডনের চিন্তাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ইইউর অন্তর্ভূক্ত দেশগুলোর সমৃদ্ধিতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই অবদান রাখছে। আর ভবিষ্যতেও বিভিন্নভাবে সেটা অব্যাহত থাকবে।
×