ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উন্মাদ জাওয়াহিরির টার্গেট তরুণরা ॥ বিচারপতি মানিক

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১৪ নভেম্বর ২০১৪

উন্মাদ জাওয়াহিরির টার্গেট তরুণরা ॥ বিচারপতি মানিক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদাপ্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরি তরুণদের ফাঁদে ফেলে মগজ ধোলাই চালাচ্ছে মন্তব্য করে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। বৃহস্পতিবার উগ্রপন্থী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য সন্দেহে গ্রেফতার মোঃ আসিফ আদনান (২৬) নামে এক যুবককে হাইকোর্টের দেয়া জামিনের বিরুদ্ধে করা আবেদনের শুনানিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জঙ্গী ষড়যন্ত্র ও তৎপরতার যেসব তথ্য উঠে এসেছে, তা আশঙ্কাজনক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিষয়। প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চে শুনানির পর আসিফ আদনানের জামিনের বিষয়ে আদেশের জন্য রবিবার দিন ঠিক করেছে সুপ্রীমকোর্ট। ওই সময় পর্যন্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করা হয়েছে। এ আদেশের ফলে আসিফ আদনান কারাগার থেকে বের হতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী। আসিফ আদনান হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি আব্দুস সালাম মামুনের ছেলে। বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক শুনানিতে বলেন, আমরা যখন তরুণ ছিলাম তখন আদর্শ ছিল মার্কস, লেনিন, চে গুয়েভারা, ফিগেল কেস্ট, ট্রটস্কি, হুচিমিন, আবরাহাম লিংকন, মার্টেন লুসারকিং, গরকি এবং মহাত্মা গান্ধী ইত্যাদি। এখনকার তরুণরা কেউ কেউ জাওয়াহিরির উন্মাদনায়, কথায় বিভ্রান্ত হয়। তাকে অনুসরণ করে। শিক্ষিত, বিত্তবান পরিবারের সন্তান, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি-ইংলিশ মিডিয়ামের ছেলেপেলেরা বিভ্রান্ত হয়। তিনি বলেন, জাওয়াহিরি মগজ ধোলাই করছে। তরুণেরা এই ফাঁদে পা দিচ্ছে। জাওয়াহিরি উন্মাদ, তার উন্মাদনা তরুণদের টার্গেট করেছে। একজন সাবেক বিচারকের ছেলের এভাবে আদালতে আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের ব্রাদারকে ছেলের বিষয়ে এখানে আসতে হয়েছে। আমাদের সত্যি খারাপ লাগছে। আমাদের রক্তক্ষরণ হচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে ওই যুবককে গ্রেফতারের পর তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশ। হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ গত সোমবার পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করা পর্যন্ত তাকে জামিন দেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির ও ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। আদালতে আসিফের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ। আসিফের বাবা হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি ও আইনজীবী আব্দুস সালাম মামুনও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদেশের শুনানি শেষে নিজ কার্যালয়ে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ বিষয়ে বলেন, জাওয়াহিরির আহ্বানে সাড়া দেয়া যুবকদের খুঁজে বের করতে না পারলে দেশ অনিশ্চয়তায় পড়বে। আইএসে যেতে আগ্রহী উগ্রপন্থী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সন্দেহভাজন সদস্য আসিফ আদনানের জামিন শুনানির পর তিনি এ কথা বলেন। মাহবুবে আলম বলেন, আসিফের মোবাইল বার্তায় পাওয়া গেছে, বন্ধুকে নিয়ে সে আইএসে যোগ দিতে সিরিয়ায় যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। মোবাইলে এ ব্যাপারে নানা কথোপকথন ছিল। তার বন্ধু পুলিশ রেইডের বিষয়টি টের পেয়ে তার ফোন নষ্ট করে দেয়। তিনি বলেন, জঙ্গীদের সঙ্গে সংযুক্তি ও ইসলামিক স্টেটে তার যুদ্ধে যাওয়ার বিষয়টি আসিফের মোবাইল থেকেই পাওয়া গেছে। পুলিশের ভাষ্যমতে, জাওয়াহিরির বক্তব্যে বেশকিছুটা উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। তার মধ্যে হামদান নামে এক ব্যক্তি বিলেত থেকে বাংলাদেশে আসে। সে এখানে যুবকদের বাছাই করার কাজে নিয়োজিত ছিল। তার দ্বারা প্ররোচিত হয়েই আসিফ এবং তার বন্ধু বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। এই পরিস্থিতি সম্পর্কে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক কথায় এটা খুবই এলার্মিং। এ বিষয়গুলো নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সবাই ভয় ভীতিতে আছে যে, কোন সময়ে বোমাবাজি করে, কোন সময়ে হত্যাকা- ঘটায়। পাকিস্তানে তো এটা অহরহই হচ্ছে। এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ইদানীং আবার পশ্চিমবঙ্গে হয়েছে। গ্রেফতারও হয়েছে। তার সূত্র ধরে নারায়ণগঞ্জেও আসামি গ্রেফতার হয়েছে। কাজেই এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত, জাওয়াহিরির আহ্বানে যারা সাড়া দিয়েছে, তাদের তথ্য সম্পর্কে জানা, তাদের খুঁজে বের করা- এটা যদি সার্থকভাবে না করা যায়, তাহলে আমরা একটা উদ্বেগ-অনিশ্চয়তার মাঝে পড়ে যাব। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশটা শান্তিপ্রিয় দেশ। মধ্যপ্রাচ্যে যা হচ্ছে, সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তানে যে রকম হচ্ছে, সে তুলনায় আমরা অনেক শান্তিতে আছি। আমরা শান্তিতে থাকতে চাই। এর যদি মূলোৎপাটন না করা যায়, তাহলে এই দেশের সাধারণ জনগণের জানমাল থাকবে না। ব্যবসা বাণিজ্য শিল্প সাহিত্য সবই অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবে। আপনারা লক্ষ্য করেছেন, রমনায় হামলাকারীরা যে চিন্তায় উদ্বুদ্ধ ছিল, এরাও একই চিন্তা চেতনায় সব কর্মকা- করছে। আসিফের পাশাপাশি আরেকজনকে গ্রেফতারের পরদিন ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছিলেন, তারা সম্প্রতি প্রচারিত আল-কায়েদা নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরির ভিডিও বার্তায় অনুপ্রাণিত হয়ে তুরস্ক ও সিরিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। তারা কথিত জিহাদে অংশ নিয়ে দেশে ফিরে তাদের নিজস্ব মতবাদ প্রচার করতে চেয়েছিল। গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মাহমুদ নাসের জনি বলেছিলেন, গ্রেফতারকৃতরা প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য। বাংলাদেশে আল কায়েদা নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করতে তাদের এক সহযোগী যুক্তরাজ্য থেকে এসে এদেশে অবস্থান করছিল। আসিফের দেয়া তথ্যে পরে ব্রিটিশ নাগরিক সামিউন রহমান ওরফে ইবনে হামদান নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। পুলিশ জানায়, সামিউন ‘মুজাহিদ’ সংগ্রহে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। রানা প্লাজার হোতাদের অনুকম্পা নয় ॥ রানা প্লাজা বিপর্যয়ে জড়িতরা অনুকম্পা পেতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। ভবন ধসের ঘটনায় এক আসামির জামিনের শুনানিতে বৃহস্পতিবার তিনি এই মন্তব্য করেন। গত ১৫ জুলাই সাভারের সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী রকিবুল হাসান রাসেলকে হাইকোর্ট জামিন দেন। এরপর ১৭ জুলাই চেম্বার বিচারপতি ওই জামিন স্থগিত করেন। গত বছরের ২৪ এপ্রিল সাভার থানায় মামলা হয়। ২৯ মে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এই জামিনের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ বছরের ২৩ মার্চ রানা এই মামলায় জামিন পায়। ১ এপ্রিল চেম্বার বিচারপতি তার জামিন স্থগিত করে। এরপর আপীল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চ ১৯ মে জামিন স্থগিতাদেশ বহাল রেখে রুল শুনানির নির্দেশ দেয়। মামলাটি ওই পর্যায়েই রয়েছে। বৃহস্পতিবার শুনানিতে প্রকৌশলী রাসেলের আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা বলেন, এই মামলায় রানাও জামিনে আছে। তার বিরুদ্ধে কি আপীল হয়েছে? তিনি বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭(৫) ধারা অনুসারে ১৮০ দিনের মধ্যে মামলার তদন্ত শেষ না করতে পারলে আসামি জামিনের হকদার। এ সময় বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, এটা বাধ্যতামূলক নয়। এখানে ৬ তলার অনুমোদন নিয়ে ১০ তলা করা হয়েছে। এরপর বিপর্যয়ের এ ঘটনায় সারা পৃথিবীতে দেশের বদনাম হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিপর্যয় এসেছে। তারা অনুকম্পা বা সহানুভূতি পেতে পারে না। এ সময় হেলাল বলেন, আমাদের নোট লঙ্ঘন করে রাজউক প্ল্যান দিয়েছে। এ সময় আদালত রানার বিষয়ে জানতে চেয়ে পরদিন শুনানির জন্য দিন রাখেন। আদালতে এক বিচারক মন্তব্য করেন, রানাই মূল কালপ্রিট।
×