ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রধানমন্ত্রীর ধমকে চবি ছাত্রলীগে বজ্রাঘাত

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১৪ নভেম্বর ২০১৪

প্রধানমন্ত্রীর ধমকে চবি ছাত্রলীগে বজ্রাঘাত

মোয়াজ্জেমুল হক/রহমান শোয়েব ॥ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ন্ত্রণহীন ছাত্রলীগ। কথায় কথায় বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দেয়ার অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। অভিভাবক সংগঠন আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যানারে চললেও যত অপকর্ম চালায় নিজেদের উদ্যোগে। বর্তমানে শিবিরমুক্ত চবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ হয়ে ওঠে বেপরোয়া। পরিস্থিতি চরম পর্যায়ে পৌঁছার পর প্রধানমন্ত্রীর কঠোর মনোভাবে বিবদমান চবি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে বজ্রাঘাত সমতুল্য হয়েছে। বিবদমান দু’গ্রুপই নড়েচড়ে সহজ অবস্থান নিয়ে ভবিষ্যত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয় অচলাবস্থার নেপথ্য কারণ নিয়ে প্রশাসনকে সঙ্গে রেখেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ আওয়ামী লীগ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের বিবদমান দু’গ্রুপের প্রতিনিধিদের নিয়ে শীঘ্রই একটি বৈঠক ডাকা হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে পূর্ব থেকে কোন্দল নিরসনে ১৫ নবেম্বর একটি বৈঠকের কথা ছিল। ঐ দিন এ বৈঠক হবে না পিছিয়ে যাবে, তা নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। উল্লেখ্য, বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম সেনানিবাসে সেনাবাহিনীর একটি অনুষ্ঠানে এসে নগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি নিয়ে কঠোর মনোভাব প্রদর্শন করে গেছেন। বলে গেছেন, যে ছাত্রলীগ অশান্তি সৃষ্টি করে সেই ছাত্রলীগ তাঁর দরকার নেই। পাশাপাশি ছাত্রলীগের অভিভাবক সংগঠন নগর আওয়ামী লীগের দুই নেতা যথাক্রমে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ.জ.ম নাছির উদ্দিনকে কোন অবস্থাতেই বিশ্ববিদ্যালয় অচল থাকতে দেয়া যাবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলে গেছেন, ‘আমি কোন কথা শুনতে চাই না। আপনারা এর সমাধান করুন। বিশ্ববিদ্যালয় যেন একদিনও অচল না থাকে।’ প্রধানমন্ত্রীর কঠোর মনোভাবের এই ঘোষণা বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মাঝেই ভীতিকর পরিবেশ নেমে এসেছে। বহিরাগত ও ছাত্র নামধারী নেতারা যারা ইতোপূর্বে সরব অবস্থানে ছিল তারা একেবারে নীরব হয়ে গেছে। প্রকৃত শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মাঝেও নেমে এসেছে এক ধরনের ভয়ভীতি ও শঙ্কা। বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে প্রশাসন ও ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় সচল রাখতে তারা যে কোন ধরনের ছাড় দিতে প্রস্তুত। বিষয়টি সাধারণ শিক্ষার্থীর মাঝে স্বস্তির সুবাতাস বইয়ে দিচ্ছে। বিবদমান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এখন তাদের অভিভাবক সংগঠন নেতৃবৃন্দের দিকে তাকিয়ে আছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের এক পক্ষের নেতা ও বিলুপ্ত কমিটির দপ্তর সম্পাদক জালাল আহমেদ জনকণ্ঠকে জানান, প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশ দিয়েছেন আমরা তাঁর বক্তব্যকে সাধুবাদ জানাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক বিষয়ে নেতৃবৃন্দ যে সিদ্ধান্ত নেবেন আমরা তাই মেনে নেব। তিনি জানান, আমরা সবাইকে নিয়ে মিলেমিশে চবি ছাত্রলীগকে এগিয়ে নিতে চাই। তবে কোন অছাত্র, বিস্ফোরক আইনের মামলার আসামি এমন কেউ যেন ক্যাম্পাসে এসে আবার অশান্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে না পারে, সেটিই আমরা চাই। ছাত্রলীগের অপর পক্ষের নেতা বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমন মামুন জনকণ্ঠকে জানান, আমরা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থাশীল। তিনি আমাদের নেত্রী। তাঁর কথা শুনতে আমরা বাধ্য। তাই বিশ্ববিদ্যালয় সচল রাখতে তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের অভিভাবক আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা তাই মেনে নেব। অপরদিকে, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের শিক্ষার্থী। তাদের অনেকে বলেছে, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সুষ্ঠু পরিবেশ চাই, প্রধানমন্ত্রীও আমাদের এ প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয় যেন কখনও অচল না থাকে সে নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যে অত্যন্ত খুশি। আশা করছি, ছাত্র সংগঠনের নেতারাও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করবেন। যে কারণে ছাত্রলীগে এত কোন্দল ॥ চবি ছাত্রলীগে কেন এত কোন্দল? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যায় চবি শাটল ট্রেনের বগির দিকে তাকালে। চবিতে ছাত্রলীগ মূলত দু’ভাগে বিভক্ত। এ দু’টি হচ্ছে ‘ভিএক্স’ (ভার্সিটি এক্সপ্রেস), ‘সিএফসি’ (চুজ ফ্রেন্ড উইথ কেয়ার)। দুটি গ্রুপই নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ.বি.এম. মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারি। এ দু’গ্রুপের উপ-গ্রুপগুলো হচ্ছে ফাটাফাটি, খাইট্টা খা, সোলজার, এপিটাফ, অলওয়েজ। আরও ৬টি উপগ্রুপ নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাসির উদ্দিন সমর্থিত। এগুলো হচ্ছে-সিক্সটি নাইন, একাকার, কনকর্ড, ইউরেকা, উল্কা ও ককপিট। এ সব উপগ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছে একেক নেতা ও বগিগুলোর রয়েছে আলাদা আলাদা নাম। প্রত্যেক নেতাই তার বগিকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলেছে নিজস্ব কর্মীবাহিনী। ফলে প্রায়ই এক এক বগির কর্মীদের সঙ্গে অপর বগির কর্মীর মধ্যে পান থেকে চুন খসলেই বেধে যায় শক্তি প্রদর্শনের মহড়া। সে সব শক্তি প্রদর্শনের মহড়ায় দেশীয় অস্ত্রের ব্যবহার থেকে শুরু করে কোন কিছুই যেন বাদ যায় না। ফলে হতাহতের ঘটনা পর্যন্তও ঘটেছে অসংখ্যবার। তেমনই ছাত্রলীগের কোন্দলরত বর্তমান মূল দু’টি গ্রুপের একটি শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক সংগঠন ‘ভিএক্স’ ও অপরটি ‘সিএফসি’। বগিভিত্তিক এসব গ্রুপের নেতাকর্মীদের জন্য শাটল ট্রেনে সিট নিজেরা নির্দিষ্ট করে রাখে। ভিন্ন গ্রুপের কেউ সিটে বসলে খবর থাকে। এছাড়া সাধারণ শিক্ষার্থী ও অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের শাটল ট্রেনে চান্স পাওয়াও রীতিমত দুঃসাধ্য। দিনে দিনে আস্কারা পেয়ে এরা রীতিমতো সীমা অতিক্রম করেছে; যা এ ভার্সিটির অতীতে কখনও দৃশ্যমান ছিল না। গত ২৬ আগস্ট সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চবি শোক দিবস উপলক্ষে শিক্ষক সমিতি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় যোগ দিতে চবিতে আসেন। এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগে বগিভিত্তিক রাজনীতির কঠোর সমালোচনা করে এর পরিবর্তন চান। উপস্থিত ছাত্রলীগ নেতারা মন্ত্রীকে প্রতিশ্রুতিও দেন। কিন্তু মন্ত্রী তার বক্তব্য শেষ না করতেই অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে ‘ভিএক্স গ্রুপ’ ও ‘সিএফসি গ্রুপে’র কর্মীর মধ্যে মারামারি বেধে যায়। যেভাবে কোন্দলের সূত্রপাত ॥ এ দুই গ্রুপের মধ্যকার শত্রুতার শুরু গত বছরের ২২ এপ্রিল থেকে। ঐদিন আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এ.বি.এম. মহিউদ্দিন চৌধুরী সমর্থিত চবি ছাত্রলীগের এই দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে উভয়পক্ষের তিনজন আহত হয়। এর রেশ ধরে পরদিন ২৩ এপ্রিল শহীদ মিনার এলাকায় উভয়পক্ষের মধ্যে সশস্ত্র ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে ৩০ এপ্রিল কাটা পাহাড় রাস্তায় ‘ভিএক্স’ কর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে সৌমেন দাশ নামের এক‘ভিএক্স’ কর্মীকে কুপিয়ে আহত করে সিএফসি কর্মীরা। ঘটনার পর শহীদ মিনার এলাকায় দু’গ্রুপ আবারও সশস্ত্র ধাওয়া পাল্টাধাওয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এরপর ১৩ মে ‘সিএফসি’ নেতা ও সাবেক সহসম্পাদক ইমরান হোসেন টিটু ও ‘সিএফসি’ কর্মী শুভ বড়ুয়াকে লাঞ্ছিত করে ‘ভিএক্স’ কর্মীরা। এ ঘটনার জের ধরে ১৪ মে দুই গ্রুপে সংঘর্ষ ঘটে। এতে বিপুল ও মেরাজ নামে দুই ‘ভিএক্স’ কর্মী আহত হয়। এরপর ১৬ মে আব্দুল জলিলকে সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ ঝুপড়ির (ছোট দোকান) সামনে ধাওয়া দেয় ভিএক্স কর্মীরা। এরপর থেকে সুমন মামুন ও অমিত কুমার বসুর অনুসারীরা ক্যাম্পাসে তাদের অধিপত্য হারায়। গত ৫ এপ্রিল আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতাকে গলায় জুতোর মালা পরিয়ে সেই দৃশ্যের ছবি তুলে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশের জন্য পাঠায় ছাত্রলীগের ‘ভিএক্স গ্রুপে’র কিছু কর্মী। ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের পরবর্তী কমিটিতে ঐ নেতা সুমন মামুন ও অমিত বসু অনুসারীদের পদ পাইয়ে দিতে লবিং করছেন এমন অভিযোগ এনেই তাকে জুতোর মালা পরানো হয়। এ ঘটনা হয়ে যায় পুরনো শত্রুতার আগুনে নতুন করে ঘি ঢালার মতো। ঘটনার পরপরই দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব আবার প্রকট হয়ে ওঠে। এ ঘটনায় সুমন, মামুন ও অমিত কুমার বসুর অনুসারীরা নগরীতে নিয়মিত মিটিং-মিছিল করেন। পরবর্তীতে জুতোর মালা দেয়ার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে ৭ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবরোধের ডাক দেয় তারা। অবরোধের সমর্থনে তারা ক্যাম্পাসে শাটল চলাচল বন্ধ করে দেয়। আর অবরোধের প্রতিবাদে ও অবরোধকারীদের শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে ‘ভিএক্স’ গ্রুপের নেতাকর্মীরা। এক সপ্তাহ পর প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেয় অবরোধকারীরা। পরে আওয়ামী লীগ নেতাকে জুতোর মালা পরানোর ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে ছাত্রলীগের ৫ কর্মীকে ২৬ মে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করে চবি কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কৃত সবাই ‘ভিএক্স’ গ্রুপের কর্মী। প্রশাসনের বিরুদ্ধে গ্রুপিং সৃষ্টির অভিযোগ ॥ অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র সংগঠনগুলোর মাঝে এই কোন্দল চলে এলেও তা নিরসনে প্রশাসনের তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রশাসন অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চত না করে সমঝোতাকেই সমস্যা সমাধানের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছে। ফলে শাস্তি না পাওয়ায় অপরাধীরা বার বার পার পেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে আছে। আর প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণে ছাত্রলীগের একটি অংশ অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে বলে জোরালো অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি অংশ প্রশাসনের সঙ্গে আঁতাত ও অপর অংশ তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে লিপ্ত। ছাত্রলীগের এ গ্রুপিংয়ে প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে বলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দাবি। এছাড়াও প্রশাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, বিজ্ঞাপিত পদের অতিরিক্ত নিয়োগ, বিজ্ঞাপন না দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, নিয়মবহির্ভূতভাবে আত্মীয়স্বজন নিয়োগের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। প্রশাসনের নানা অপকর্ম ঢাকতে ছাত্রলীগের মধ্যে গ্রুপিং জিইয়ে রেখে ক্যাম্পাস অশান্ত করে রাখতে প্রশাসনের ভূমিকা রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রের দাবি। এছাড়া প্রশাসনের দুর্নীতি ঢাকতে ছাত্রলীগের একটি অংশকে নানান সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার ঘটনাও রয়েছে। ছাত্রলীগের এ অংশটি প্রশাসনের সকল অপকর্ম সম্পর্কে কখনও মুখ খোলে না। প্রশাসনের আশীর্বাদপুষ্ট ছাত্রলীগের এ গ্রুপটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক জালাল আহমেদ ও সাবেক গ্রন্থনা ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান রবিন। অপরদিকে ভিসির আশীর্বাদ বঞ্চিত ছাত্রলীগের অপর অংশটি প্রশাসনের নানা অপকর্মের ঘটনা সংবাদ সম্মেলন ও বিভিন্ন মাধ্যমে অকপটে প্রচার করে যাচ্ছে। ছাত্রলীগের এ অংশটি নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক সহ-সভাপতি অমিত কুমার বসু ও সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমন মামুন। ফলে ছাত্রলীগের এ দুটি পক্ষের মধ্যকার কোন্দলে প্রায়ই বেধে যায় সংঘর্ষ। অচল হয় চবি। আর রাজনৈতিক সুবিধায় নিয়োগ পেয়ে প্রশাসনিক কর্মকা- চালাতে গিয়ে অনেকেই রাজনৈতিক লেজুড়ধারীদের ওপর ভর করেছেন। যার কারণে বর্তমান সরকারী দল সমর্থিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের হাতেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাগ্য জিম্মি হয়ে আছে। তবে উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম তাঁর বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের একটি পক্ষকে আশ্রয়প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে জনকণ্ঠকে বলেন, এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি আমার সকল শিক্ষার্থীকে সমানভাবে বিবেচনা করি। যারা এ অভিযোগ করছে তারা নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে দীর্ঘদিন যাবৎ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে না পারায় আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ করছে। এদিকে, নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরী বরাবরের মতো আবারও জানিয়েছেন, চবিতে তার নামে কোন গ্রুপিংকে কখনও আস্কারা দেন না। অছাত্র ও বহিরাগতদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থানের প্রশ্নই আসে না। তার নামে গ্রুপিংয়ের অভিযোগ নিয়ে তিনি জানান, এরা নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে তার নাম ব্যবহার করতে পারে। এ ধরনের কাজে লিপ্তদের তিনি সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে বলেন, প্রশাসন সুনির্দিষ্ট অভিযোগে এদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলে তার কোন আপত্তি নেই। চবি পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী গত বুধবার যা বলে গেছেন তা চবি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব বয়ে আনবে বলে তিনি মনে করেন। এতে অছাত্র ও বহিরাগতরা পালানোর পথ বেছে নিতে বাধ্য হবে বলে মত ব্যক্ত করেন।
×