ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পলি আগ্রাসনের মুখে চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেল

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ১৩ নভেম্বর ২০১৪

পলি আগ্রাসনের মুখে চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেল

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের নামে ক্যাপিটাল ডাকাতির ঘটনার পর চট্টগ্রাম বন্দরের এ প্রকল্পের ভাগ্য এখন আদালতে গড়িয়েছে। বন্ধ হয়ে আছে ড্রেজিং কার্যক্রম। এতে করে আপস্ট্রিম থেকে নিয়মিত আসা পলিতে ভরাট হয়ে একাকার হয়ে যাচ্ছে কর্ণফুলী নদী। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে পলি আগ্রাসনে বন্দর চ্যানেল হুমকির মুখে চলে যেতে পারে। চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। উল্লেখ্য, ২২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১১ সালে কর্ণফুলী নদী ড্রেজিং ও ব্যাংক প্রোটেকশন প্রকল্প গ্রহণ করেছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ প্রকল্পের ঠিকাদারি কাজ পেয়েছিল এমএমডিসি (মালয়েশিয়ান মেরিটাইমস এ্যান্ড ড্রেজিং কর্পোরেশন) নামের একটি প্রতিষ্ঠান। মূলত বিদেশী প্রতিষ্ঠানের নামে হলেও কাজটির সাব কন্ট্রাক্ট নিয়েছিল দেশীয় একটি প্রতিষ্ঠান। শুরু থেকেই ড্রেজিংয়ের কাজ চলে ধীরগতিতে। কিন্তু নদী থেকে তারা ক্রমাগতভাবে বালি তুলে অবৈধভাবে চোরা পথে বিক্রি করে তারা মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী উত্তোলিত বালু ব্যাংক প্রোটেকশন কাজে ব্যবহারের কথা ছিল। এ প্রক্রিয়ায় তারা দৃশ্যমান কিছু কাজ দেখালেও ভেতরে করেছে ডাকাতির মতো ঘটনা। প্রতিনিয়ত শ’ শ’ ট্রাকে উত্তোলিত বালু বাইরে বিক্রি করেছে ঐ সাব কন্ট্রাক্টর। এভাবে ড্রেজিংয়ের কিছু কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি পর্যায়ক্রমে হাতিয়ে নিয়েছে ১৬৫ কোটি টাকার বিল। কিভাবে বালি বিক্রির অর্থ ও বন্দর তহবিল থেকে ১৬৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা কাজ বন্ধ করে দিয়ে গা ঢাকা দেয়। দফায় দফায় নোটিস দিয়েও এমএমডিসির কোন উত্তর না পেয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ একপর্যায়ে কাজ বাতিল করার ঘোষণা দেন। বাতিল পত্র পেয়ে এমএমডিসি তার স্থানীয় এজেন্টের মাধ্যমে হাইকোর্টে মামলা করে দেয়। আদালত বন্দরের বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞার আদেশের বিরুদ্ধে বন্দর কর্র্তৃপক্ষ আপীল বিভাগে আবেদন জানালে নি¤œ আদালতের আদেশের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ শুনানির আদেশ দেন। বর্তমানে তা চলমান। ঠিক কখন এবং কবে নাগাদ শুনানি হবে তা বন্দর কর্তৃপক্ষের অজানা। বন্দরের আইন বিভাগের সংশ্লিষ্ট মতে, এখন পুরো বিষয়টি আদালতের উপর। অর্থাৎ, ক্যাপিটাল ড্রেজিয়ের ভাগ্য এখন ঝুলে গিয়ে আদালতের উপর নির্ভরশীল। এদিকে ক্রমাগতভাবে ভাটির টানে পলি ভরাট অব্যাহত থাকায় কর্ণফুলী নদীর তলদেশ এবং দুই পাড় সংলগ্ন এলাকাগুলো একাকার হয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই ভরাট হতে হতে বহু আগে থেকেই বন্দরের সদরঘাট এলাকার ১ নম্বর জেটিও অতিক্রম করেছে। পলির আগ্রাসন এগিয়ে যাচ্ছে এখন বন্দর চ্যানেলের দিকে। এমনিতেই কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ে বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন স্থাপনা এ নদীকে বহু আগে থেকেই গ্রাস করেছে। তার উপর পলি ভরাট মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আবির্ভূত হয়েছে। নদীর দু’কূল অবৈধ দখলে তিন শ’ মিটার এলাকা কমে গেছে কর্ণফুলী নদীর। তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু থেকে পতেঙ্গার মোহনা পর্যন্ত এ নদীর প্রস্থ ছিল সর্বোচ্চ ৮শ’ মিটার। বর্তমানে বিভিন্ন অংশে তা আড়াই শ’ মিটারে হ্রাস পেয়েছে। কোন রকমে চ্যানেল এলাকা এখনও রক্ষা পেয়ে আছে। কিন্তু ড্রেজিং কাজ বন্ধ থাকায় পলি এগিয়ে যাচ্ছে চ্যানেল মুখে।
×