ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তামিম-ইমরুলের সেঞ্চুরিতে রেকর্ডময় দিন

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ১৩ নভেম্বর ২০১৪

তামিম-ইমরুলের সেঞ্চুরিতে রেকর্ডময় দিন

মিথুন আশরাফ, চট্টগ্রাম থেকে ॥ জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্টের প্রথমদিনে একের পর এক রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। ওপেনিংয়ে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড হয়েছে। ওপেনিংয়ে দুই শতকের রেকর্ড হয়েছে। প্রথমদিনে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রান গড়ার রেকর্ড হয়েছে। রেকর্ডময় একটি দিন কাটিয়েছে বাংলাদেশ। আর সেই দিনে আবার মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে প্রথম ইনিংসের স্কোরবোর্ডে এখনই ৩০৩ রান যুক্ত করে ফেলেছে, বাংলাদেশের হয়ে রেকর্ড ১৯ টেস্টে নেতৃত্ব দেয়া মুশফিকুর রহীমের দল। আরাম আয়েশে খেলছে বাংলাদেশ। ভাবনাহীন খেলে চলেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। পাঁচদিনের প্রথম দিনটি নিজেদের করে নিয়েছেন তামিম, ইমরুলরা। আজ ম্যাচের দ্বিতীয় দিন। ব্যাটিংয়ে আছেন মুমিনুল হক (৪৬) ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৫)। দ্বিতীয় দিনে দলকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে ব্যাটিংয়ে নামবেন তারা। ‘টস খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ বলেছিলেন জিম্বাবুইয়ে অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলর। বাংলাদেশের কাছে আবারও শুরুতেই সেই টস ভাগ্য গেছে। আবারও ব্যাটিংই নিয়েছে মুশফিকবাহিনী। টানা তিন ম্যাচে যে দলই টস জিতেছে, আগে ব্যাটিং নিয়েছে। তবে প্রথম টেস্টে জিম্বাবুইয়ে আগে ব্যাটিং নিয়েও ৩ উইকেটে তিনদিনেই হেরে গেছে। আর দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ ব্যাটিং নিয়ে জিতেছে ১৬২ রানে। তৃতীয় টেস্টে কী হবে? সেই আলামত যেন প্রথমদিনেই বোঝা যাচ্ছে। শুরুতেই জিম্বাবুইয়ের সামনে রানের পাহাড় গড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে বাংলাদেশ। ফল কী হবে তা সময় গড়াতে থাকলেই অনুমান করা যাবে। তবে প্রথমদিনে বাংলাদেশ আবারও সুবিধাজনক স্থানেই আছে। ঠিক যেমনটি প্রথম টেস্ট ও দ্বিতীয় টেস্টে হয়েছে। তৃতীয় টেস্টের প্রথম দিনে গিয়ে বাংলাদেশত শুরুতেই জিম্বাবুইয়েকে হুঙ্কার ছুড়ে দিয়েছে। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট যে ‘ব্যাটিং স্বর্গে’র রূপ ধারণ করেছে তা বোঝাই যাচ্ছে। আর এমন উইকেটে বাংলাদেশ একের পর এক রেকর্ড গড়ে প্রথম দুই টেস্টের চেয়েও ভাল অবস্থান তৈরি করে ফেলেছে। রেকর্ডময় একটি দিনে জিম্বাবুইয়েকে যেন খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। শুরুতেই তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস মিলিয়ে শত রানের জুটি গড়ে ফেলেন। মধ্যাহ্ন বিরতির আগে দুইজন মিলে কোন উইকেট না হারিয়ে ৯১ রান করেন। বিরতির পর খেলতে নেমেই শত রানের জুটি গড়ে ফেলেন। এ দুইজনের কাছ থেকে শেষ পর্যন্ত ২২৪ রানের জুটি মিলে। ওপেনিং জুটিতে বাংলাদেশ এ নিয়ে ৫শ’ রানের জুটি গড়ে। এর মধ্যে তিনবারই তামিম-ইমরুলের জুটি দেখা যায়! এ জুটিটি ওপেনিংয়ে বাংলাদেশের সেরা জুটিও হয়ে গেছে। ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে মধ্যাহ্ন বিরতির আগে এর আগে একবারই বাংলাদেশ কোন উইকেট না হারিয়ে ইনিংস সাজাতে পেরেছিল। সেটি ২০০৫ সালে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষেই। জাভেদ ওমর ও নাফিস ইকবাল ৯১ রানের জুটি গড়েছিলেন। সেই ম্যাচটিতে বাংলাদেশ ২২৬ রানে জিতেছিল। যেটি বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের প্রথম জয় ছিল। এবারও মধ্যাহ্ন বিরতির আগে কোন উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। রানও হয়েছে ৯১। এরপর দিন গড়াতে থাকে, তামিম, ইমরুল দুইজনই শতক হাঁকান। তামিম ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ও ইমরুল ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতক করেন। এ দুইজনের শতকে আবার ওপেনিং জুটিতে প্রথমবার দুই শতকের দেখা দিয়েছে। যেটি এর আগে বাংলাদেশ কখনই দেখেনি। শুধু কী এই দুই রেকর্ড। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রথমদিনে সবচেয়ে বেশি রান করার রেকর্ডও। প্রথম দুটি ব্যক্তিগত পর্যায়ের রেকর্ড। আর এবার বাংলাদেশ গড়েছে দলীয় রেকর্ডও। গতবছর হারারেতেই জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে একদিনে সর্বোচ্চ ৩০০ রান করার রেকর্ড গড়েছিল বাংলাদেশ। সেই রেকর্ড এবার ভেঙ্গে দেয় বাংলাদেশ। ৩ রান বেশি করে। তবে দেশের বাইরে ছিল সেই রেকর্ড। আর দেশের মাটিতে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে একদিনের সর্বোচ্চ ২৮০ রান করার রেকর্ড ছিল বাংলাদেশের। সেই রেকর্ডও বুধবার তৃতীয় টেস্টের প্রথম দিনে ভেঙ্গে দেয় বাংলাদেশ। এখন বাংলাদেশ চায় আরও এগিয়ে যেতে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে যে ২০০৫ সালে স্কোরবোর্ডে সর্বোচ্চ ৪৮৮ রান যুক্ত করেছিল বাংলাদেশ, সেই স্কোরকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্যই এখন বাংলাদেশের। তাহলেই যে জিম্বাবুইয়েকে বিপাকে ফেলা যাবে। তামিম ইকবাল তাই মনে করছেন। বলেছেন, ‘উইকেটে বোলারদের জন্য কিছুই নাই। আমরা প্রথমদিনে ভাল অবস্থানেই আছি। এখন দ্বিতীয় দিনে অন্তত চা বিরতি পর্যন্ত খেলতে হবে। দেখতে হবে কত রান দাঁড়ায়। এরপর বোঝা যাবে কী করা যাবে।’ যদি বাংলাদেশ চা বিরতি পর্যন্ত খেলে তাহলে যে অনেক দূর এগিয়ে যাবে এবং জিম্বাবুইয়েকে ভালভাবেই বিপাকে ফেলে দেবে তা বোঝাই যাচ্ছে। প্রথমদিনে চা বিরতিতে বাংলাদেশ ২১৩ রান যুক্ত করেছে। যদি দ্বিতীয় দিনেও এমনই দাঁড়ায় অবস্থা তাহলে জিম্বাবুইয়ের সামনে ৫০০ রানের পাহাড়ও গড়া যাবে। এরপর সেই স্পিন দিয়েই জিম্বাবুইয়েকে ঘায়েল করার ভাবনায় মশগুল আছে বাংলাদেশ। তামিম তাই জানালেন, ‘প্রথম দিনে উইকেটে বোলারদের জন্য কিছুই ছিল না। তিনদিনে স্পিন ধরবে মনে হয়। যদি ধরে তাহলে জিম্বাবুইয়েকে সমস্যায় ফেলা যাবে।’ সমস্যায় ফেলা মানেই আবারও জয়। সেই জয় আসলেই হোয়াইটওয়াশ হবে জিম্বাবুইয়ে। রেকর্ডময় একটি দিন শেষ করার পর সেই ভাবনাতেই মশগুল বাংলাদেশ।
×