ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘ডায়াবেটিস প্রতিরোধ’ বিধিমালার খসড়া প্রস্তুত

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ১৩ নভেম্বর ২০১৪

‘ডায়াবেটিস প্রতিরোধ’ বিধিমালার খসড়া প্রস্তুত

নিখিল মানখিন ॥ দীর্ঘদিন আলোচনার পর ‘জাতীয় ডায়াবেটিস প্রতিরোধ নীতি ২০১৪’ নামে বিধিমালার খসড়া প্রস্তুত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবিত বিধিমালার খসড়া মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে রাখা হয়েছে। চূড়ান্ত বিধিমালা প্রণয়নের স্বার্থে জনসাধারণের মতামত চাওয়া হয়েছে। জাতীয় ডায়াবেটিস প্রতিরোধ নীতির পাঁচটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে। খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, মহামারী আকারে ডায়াবেটিসের বিস্তারলাভ ঘটছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ৮৪ লাখের বেশি লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তবে জীবনযাপন পদ্ধতির উন্নয়নের মাধ্যমে এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। এসব কিছুর জন্য প্রয়োজন গণসচেতনতা। মহামারী আকারে বিরাজমান ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার লক্ষ্যে একটি জাতীয় নীতিমালা থাকা আবশ্যক। বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসটির স্বীকৃতি লাভ করার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির অনুরোধে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবছর ‘বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস’ পালনের জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাব করে,যা পরবর্তীতে গৃহীত হয়। খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, পৃথিবীজুড়েই ডায়াবেটিস বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশে খুব কম বয়সে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার হার আতঙ্কজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ অতিদ্রুত নগরায়ন। দ্রুত নগরায়নের কারণে পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং মানুষের জীবনযাত্রার পদ্ধতিও বদলে যাচ্ছে। শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, চর্বি ও শর্করাসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ, অতিরিক্ত খাওয়া, ক্যালরিযুক্ত ফাস্টফুড ও কোমল পানীয় গ্রহণের অভ্যাস গড়ে ওঠায় মানুষের মধ্যে মোটা হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। আর এ ধরনের লোকদেরই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। ডায়াবেটিস প্রধানত চার প্রকারের। যথাÑটাইপ-১, টাইপ-২, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ও অন্যান্য বিশেষ ধরনের ডায়াবেটিস। অন্যান্য দেশের তুলনায় ব্যতিক্রমভাবে বাংলাদেশে মোট ডায়াবেটিস রোগীর প্রায় শতকরা ৯৫ ভাগ টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। কিন্তু টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া এবং ডায়াবেটিসজনিত দীর্ঘকালীন জটিলতা প্রতিরোধ ও হ্রাস করা সম্ভব। খসড়া বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ প্রতিবছর ‘১৪ নবেম্বর’কে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বাংলাদেশের জন্য এটা অত্যন্ত গৌরবের বিষয় যে, আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে এ দিবসটির স্বীকৃতি লাভ করার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির অনুরোধে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবছর ‘বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস’ পালনের জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাব করে। এর ফলে গত ২০০৭ সাল থেকে জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রে প্রতিবছর ১৪ নবেম্বর জাতিসংঘের একটি দিবস হিসেবে ‘বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস’ পালিত হয়ে আসছে। দেশে গত দশ বছরে নতুন ৩৪ লাখ ডায়াবেটিক রোগী শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে দেশে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা ৮৪ লাখ। অথচ গত ২০০৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৫০ লাখ। একইভাবে বিশ্বেও বেড়েছে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা। বর্তমানে বিশ্বে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৭ কোটিতে। অথচ ২০০৩ সালে সারাবিশ্বে ডায়াবেটিক রোগী ছিল ১৯ কোটি। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে বিশ্বে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৫৫ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করলে রোগী নিজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সব বয়সের মানুষই আজ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে।
×