ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় নদীর দু’পার মিলে সেনানিবাস হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:২২, ১৩ নভেম্বর ২০১৪

পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় নদীর দু’পার মিলে সেনানিবাস হচ্ছে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দুই পার মিলে একটি সেনানিবাস স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জমি ব্যবহার কমানো ও অর্থ সাশ্রয় করতে এটি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় পদ্মা সেতু এলাকায় ৯৯ ব্রিগেডের সেনানিবাস স্থাপন সংক্রান্ত তিনটি বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্তে এসেছে। এছাড়া বিষয়গুলো আরও খতিয়ে দেখতে গঠন করা হয়েছে একটি কমিটি। এ কমিটির সদস্য পরিকল্পনা সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, পদ্মাা সেতুর পাহারা নিশ্চিত করতে যত কম জনবল ও জমি দরকার হবে ততই ভাল। আমরা সে বিষয়টিই আলোচনা করব। উভয় পক্ষ আলোচনার পর অবশেষে যে তিন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা হলো, প্রথমত সেতুর উভয় পার মিলে একটি সেনানিবাস স্থাপন করা হবে। দ্বিতীয়ত অর্থ সাশ্রয় করতে এই ব্রিগেডে যতটুকু জনবল না হলেই নয় ততটুকু জনবল রাখতে হবে। তাছাড়া ভার্টিক্যাল কনস্ট্রাকশন করতে হবে, যাতে জমির ব্যবহার কমানো যায়। তৃতীয়ত দুই ফেজে পদ্মা সেতু এলাকায় সেনানিবাস স্থাপন প্রকল্পের কাজ করতে হবে। অর্থাৎ প্রথম ফেজে মূল সেনানিবাস স্থাপন এবং দ্বিতীয় ফেজে অন্যান্য অবকাঠামো স্থাপন করা হবে। যেমন স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল ইত্যাদি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এর আগে সেনাবাহিনী সেতুর দুই পারে ৯৯ ব্রিগেডের দুটি সেনানিবাস স্থাপনের প্রস্তাব দেয় এবং এজন্য প্রায় এক হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা লাগবে বলে জানায়। এ ছাড়া সেনানিবাস স্থাপনে মাওয়া এবং জাজিরা পয়েন্টে প্রায় ৩৪১ দশমিক ২৭ একর জমি দেয়ার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু সেতু বিভাগ মাওয়া অংশে তাদের চাহিদার বিপরীতে ১৫ দশমিক ৭৫ একর জমি বরাদ্দ দেয়। কিন্তু এ অংশে আরও ৭৫ দশমিক ৭৫ একর জমির চাহিদা দেয় সেনাবাহিনী। অন্যদিকে জাজিরা অংশে সেনানিবাস স্থাপনে সেতু বিভাগ পৃথক দুটি স্থানে ১১ দশমিক ৭৭ একর এবং ৮৮ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু সেনাবাহিনী এর বাইরে আরও ১৫০ একর জমির চাহিদার কথা জানিয়েছে। এ অবস্থায় সমস্যা সমাধানে বুধবার বৈঠক করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বৈঠকে পরিকল্পনা সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান, সেতু বিভাগের সচিব, প্রতিরক্ষা সচিব ও সেনাবাহিনীর কিউএমজি লে. জেনারেল আনোয়ার, এ প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়ক মেজর জেনারেল সাঈদ মাসুদ, ইঞ্জিনিয়ার ইন চীফ মেজর জেনারেল কাদির উপস্থিত ছিলেন। এ সময় পদ্মা সেতু এলাকায় সেনানিবাস স্থাপন বিষয়ে বিস্তারিত উপস্থাপন করেন পূর্ত পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সালাউদ্দিন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৈঠকে বলেন, পদ্মা সেতু এলাকায় সেনানিবাসটি আয়তনে ছোট হলেও এটি হবে আধুনিক এবং শক্তিশালী। সব সীমাবদ্ধতা মাথায় রেখে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হবে। বৈঠকে সেতু বিভাগের সচিব জানান, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের সময় সাড়ে ৭ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল আর পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় ৩ হাজার ২০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তাই সেনাবাহিনীর চাহিদা অনুযায়ী জমি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জমির দাম এখন যা আছে দিন দিন তার চেয়ে অনেক বেশি বাড়ছে এজন্য দ্রুত জমি অধিগ্রহণের তাগিদ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া সাইট ডেভেলপমেন্টের জন্য ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। সূত্র জানায়, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ দ্রুতই এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যেই পদ্মা সেতু প্রকল্পের নদীশাসনের কাজের জন্য চীনা কোম্পানি সিনোহাইড্রোর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সরকার। চুক্তি অনুযায়ী ৮ হাজার ৭০৭ কোটি টাকায় চীনা কোম্পানি সিনোহাইড্রো এ কাজ করবে। এর মধ্য দিয়ে প্রথম পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক ধাপগুলো শেষ হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে চীনা কোম্পানি সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন নদীশাসনের কাজ পেয়েছে। নদীশাসন কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। ৮ হাজার ৭০৭ কোটি টাকায় নদীশাসন কাজের দরপ্রস্তাব করেছিল সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন। প্রথম দফায় প্রাক্কলন অনুযায়ী দরপত্র আহ্বান করতে না পারায় নদীশাসনে ব্যয় বাড়ছে ৩ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। সম্প্রতি মূল পদ্মা সেতু ও নদীশাসন কাজ তদারকির জন্য কোরীয় কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। এর মধ্য দিয়ে কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন পরামর্শক হিসেবে কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশনের কাজ শুরু করতে আর কোন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত দূর হয়া ফলে মূল সেতু নির্মাণ ও নদীশাসন চলাকালীন ও নির্মাণ-পরবর্তী এক বছর তদারকির দায়িত্ব পালন করবে প্রতিষ্ঠানটি। এতে মোট ব্যয় হবে ৩৮৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর আগে গত ১৩ অক্টোবর সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ কোরীয় কোম্পানি পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। আগামী ’১৭ সালের ডিসেম্বর বা ’১৮ সালের প্রথম দিকে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া গত ১৭ জুন পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকায় চীনা কোম্পানি চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার। সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত দিতে কালক্ষেপণের কারণে এবং পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন দ্রুত করতে ১৩ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন চায় না বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংককে সাফ জানিয়ে দেয় সরকার। পদ্মা সেতু প্রকল্পে সংস্থাটির ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব প্রত্যাহার করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক ই-মেইল বার্তায় বিশ্বব্যাংকের উর্ধতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়।
×