ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাগরিকায় বৃত্ত পূরণের লড়াই শুরু

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ১২ নভেম্বর ২০১৪

সাগরিকায় বৃত্ত পূরণের লড়াই শুরু

মিথুন আশরাফ, চট্টগ্রাম থেকে ॥ জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে আজ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্টে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। এর আগে মঙ্গলবার বাংলাদেশের অনুশীলন পর্বটি ছিল ঐচ্ছিক। কিন্তু এখানেও কী সিরিয়াস মুশফিক, সাকিব, তামিম, মাহমুদুল্লাহরা! সবাই সকাল ৯টার আগেই স্টেডিয়ামে হাজির। নেমে পড়লেন ফুটবল নিয়ে। ‘বড় বলে’র খেলায় মেতে উঠলেন। এরপর ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং-সবকিছুই হলো দুই ঘণ্টায়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সে কী সিরিয়াস ক্রিকেটাররা। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে যে প্রতিশোধ নিতে হবে। একবার ২০০১ সালে জিম্বাবুইয়ের কাছে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর যে এখনও জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করতে পারেনি বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম টেস্টে জিতলে সেই প্রতিশোধ নেয়া হয়ে যাবে। কিন্তু বাংলাদেশ কী পারবে হোয়াইটওয়াশ করে প্রতিশোধ নিতে, নাকি প্রথম টেস্টে ৩ উইকেটে ও দ্বিতীয় টেস্টে ১৬২ রানে হারের পর তৃতীয় টেস্টে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে জিম্বাবুইয়ে? সেই প্রশ্নও থাকছে। ঐচ্ছিক অনুশীলন পর্ব থাকার পরও সিরিয়াস অনুশীলই করেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। কিন্তু জিম্বাবুইয়ে দলত শুরু থেকেই সিরিয়াস। সেই ১৭ অক্টোবর বাংলাদেশে পা রাখার পরদিন থেকেই সিরিয়াস অনুশীলন করে যাচ্ছেন জিম্বাবুইয়ে ক্রিকেটাররা। প্রস্তুতি ম্যাচেও সেরা দলই খেলেছে। কিন্তু কোন ফলই পাচ্ছে না। তৃতীয় টেস্টেও সে রকম কিছু হলেই হয়ে যায়। বাংলাদেশ আবার জিতে যায় এবং জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে প্রতিশোধও নিয়ে ফেলে। তবে মাঝখানে দুটি টেস্ট হওয়ায় তৃতীয় টেস্টে গিয়ে ভিন্ন কিছুই হতে পারে। বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের কণ্ঠেও যেন সে রকমই সুর, ‘বাস্তবতা হলো শেষ ২ ম্যাচ আমরা যেভাবে জয় পেয়েছি তার চেয়ে কঠিন হবে তৃতীয় টেস্ট ম্যাচটি। ওরা ৩ সপ্তাহ ধরে আমাদের এখানে আছে আমাদের বোলিং, কন্ডিশন সম্পর্কে তারা অবগত আছে।’ এমন হলে বাংলাদেশের সামনে প্রতিরোধই গড়ে তুলবে জিম্বাবুইয়ে। বাংলাদেশ এর আগে ৪৩ টেস্ট সিরিজ খেলে। জয় পায় মাত্র ২ টেস্ট সিরিজে। একটি ২০০৫ সালে, জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষেই; ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১-০ ব্যবধানে। আরেকটি ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, ২-০ ব্যবধানে। ড্র করে ২টি টেস্ট সিরিজে। আর ৩৯টি সিরিজে হারে। এর মধ্যে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে এর আগে ৬ সিরিজ খেলে চারটি সিরিজেই হারে। ২০১৩ সালে একটি সিরিজে ১-১ ব্যবধানে করে ড্র। ২০০৫ সালে একটি সিরিজে জিতে। এবার এক ম্যাচ হাতে থাকতেই আরেকটি সিরিজ জয় করে নেয় বাংলাদেশ। তবে জিম্বাবুইয়ের ঝুলিতে যে ২০০১ সালে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করার তৃপ্তি যুক্ত রয়েছে, তা এখনও পায়নি বাংলাদেশ। ২০০১ সালে ২-০ ব্যবধানে হারের পর একই বছর ১-০, ২০০৪ সালে ১-০, ২০১১ সালে ১-০ ব্যবধানে জিতে জিম্বাবুইয়ে। এবার দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের কাছে সিরিজ হেরে গেছে জিম্বাবুইয়ে। তবে এখনও হোয়াইটওয়াশ হয়নি। বাংলাদেশের সামনে এবার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে প্রতিশোধ নেয়ার। পারবে বাংলাদেশ সেই কাজটি করতে? জিম্বাবুইয়ে দলের সিনিয়র ক্রিকেটার হ্যামিল্টন মাসাকাদজা যেন কোনভাবেই বাংলাদেশকে প্রতিশোধ নিতে দিতে রাজি নন। তাইত বলেছেন, ‘আমরা বহুদিন ধরে (২০০৫ সালের পর) বাংলাদেশে কোন টেস্ট ম্যাচ জিতিনি। এখন আমরা সামনের সময়গুলো নিয়েই ভাবছি। জেতার জন্যই খেলতে নামব।’ অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলর যে কথাটি সোমবার বলতে পারেননি, মাসাকাদজা এসে বলেছেন। জয় উচ্চারণ করেছেন। তাহলে কী সত্যিই প্রতিরোধের মুখে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ? এর আগে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ মাত্র ২ বার তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলেছে। ২০০৩ সালে একবার পাকিস্তানের বিপক্ষে ও ২০০৭ সালে একবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। দুইবারই হোয়াইটওয়াশ হয়। এবার তৃতীয়বারের মতো যখন বাংলাদেশ দল তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলছে, তখন সিরিজ জয় করে নিয়েছে। এখন শুধু হোয়াইটওয়াশ করার অপেক্ষা। বাংলাদেশ খেলছে পয়মন্ত ভেন্যু চট্টগ্রামে। যেখানে বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট জিতেছিল, ২০০৫ সালে। সেই জিম্বাবুইয়ে দলের বিপক্ষে আবারও চট্টগ্রামে টেস্ট খেলা। প্রায় ১০ বছর পর চট্টগ্রামে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে টেস্ট খেলছে বাংলাদেশ। যে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রামে সুখস্মৃতি রয়েছে, এবারও সেই জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষেই খেলা। তবে সেবার ২২৬ রানের জয়টি পেয়েছিল বাংলাদেশ এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে। এবার খেলা জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। তবে চট্টগ্রামের মাটিতেই। খেলাটি আবার সিরিজের শেষ টেস্ট ম্যাচ। জিতলেই বাংলাদেশ চট্টগ্রাম থেকেই আবারও জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করার সুখস্মৃতি পাবে। বাংলাদেশ যে ৪৩টি টেস্ট সিরিজ খেলেছে এর মধ্যে ২ ম্যাচ বা তার অধিক ম্যাচের সিরিজ হিসেবে ২৭ সিরিজেই হেরেছে। হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। বাংলাদেশ শুধু একবার হোয়াইটওয়াশ করতে পারার স্বাদ পেয়েছে। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করেছে। কিন্তু সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিল ‘দুর্বল’ দল। তাই এবার জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করলে পুরো শক্তির দলকে প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করবে বাংলাদেশ। শুধু কী এ প্রাপ্তি যুক্ত হবে, জিম্বাবুইয়ে প্রতিরোধ গড়বে, এ ধারণা ভুল হয়ে গেলে জিম্বাবুইয়েকে প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করার যোগ্যতাও অর্জন করে নেবে বাংলাদেশ। সেই অর্জন আবার জিম্বাবুইয়ে যে বাংলাদেশকে একবার হোয়াইটওয়াশ করেছে, সেই দুঃস্মৃতি ভুলিয়ে দেবে, প্রতিশোধও নেয়া হয়ে যাবে। পারবে বাংলাদেশ প্রতিশোধ নিতে?
×