ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জয় উচ্চারণ ভুলে গেছে জিম্বাবুইয়ানরা

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১১ নভেম্বর ২০১৪

জয় উচ্চারণ ভুলে গেছে জিম্বাবুইয়ানরা

স্পোর্টস রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে ॥ হাস্যকর বিষয়ই বটে। এমন ধোলাই খেয়েছে জিম্বাবুইয়ে ক্রিকেটাররা যে এখন আর জয় শব্দটি মুখ দিয়ে উচ্চারিতই হয় না। আবার কেউ সিরিজ জিতে নির্ভার হয়। জিম্বাবুইয়ে এখন সিরিজ হেরে নির্ভার। জয় মুখ দিয়ে উচ্চারণ করা, তা যেন ভুলেই গেছেন জিম্বাবুইয়ে অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলর। তিন ম্যাচের সিরিজের টানা দুই টেস্টে হারলে কী আর ‘জয়’ শব্দটি মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয়। জয় উচ্চারণহীনই হয়ে পড়েছে জিম্বাবুইয়ে দল। দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত টানা ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং অনুশীলন করে গেছে জিম্বাবুইয়ে দল। স্পিনে যেন আবারও বিশেষ অনুশীলনে ব্যস্ত তারা। অনুশীলন শেষ যখন, সাংবাদিকরা টেইলরকে পেয়ে বুধবার থেকে শুরু হতে যাওয়া তৃতীয় টেস্টে লক্ষ্য কী তা জিজ্ঞেস করতেই জিম্বাবুইয়ে অধিনায়ক একটু চুপ থাকলেন। এরপর বললেন, ‘সিরিজ হাতছাড়া হয়ে গেছে। এখন নির্ভার থাকতে পারি। ক্রিকেটকে উপভোগ করতে পারি। আমার মনে হয় এই পথই আমাদের ভাল ক্রিকেট খেলাবে।’ অথচ দ্বিতীয় টেস্টের আগেও যখনই টেইলর কথা বলেছেন, প্রতিটি সময়ই ‘জয়’ শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে। প্রথম টেস্টের আগে, ‘জয় চাই’ বলেছেন। সঙ্গে ‘সিরিজ জিততে চাই’ও বলতে দ্বিধা করেননি। দ্বিতীয় টেস্টের আগে, ‘প্রথম টেস্ট হেরেছি, দ্বিতীয় টেস্টে সিরিজে ফিরতে চাই’ বলেছেন। তৃতীয় টেস্টের আগে এ কথাগুলো টেইলরের কণ্ঠ থেকে উধাও হয়ে গেছে। এখন শুধু ভাল খেলার জন্য ক্রিকেটকে উপভোগ করা ছাড়া যেন আর কোন পথই নেই জিম্বাবুইয়ের। তবে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে যে ১৪ বছর অতিক্রম করে ১৫ বছরে পা রাখতে যাচ্ছে তাতে দলকে শুভেচ্ছাই জানালেন। বললেন, ‘শুভেচ্ছা রইল।’ সঙ্গে জানালেন, ‘গত ১২ মাস ছাড়া তারা (বাংলাদেশ) এমন একটি টেস্ট খেলুড়ে দল, যারা দ্রুতই উন্নতি করেছে। সবসময়ই বলেছি বাংলাদেশ দলে অনেক প্রতিভাবান তরুণ ক্রিকেটার রয়েছে। যারা অনেক ভাল ক্রিকেট খেলে। সবচেয়ে বড় বিষয় ক্রিকেট নিয়ে তাদের যে আগ্রহ এটা অনেক বড় বিষয়। ঢাকা লীগ ঠিকমতোই এগিয়ে চলেছে। আমি দেখেছি সবসময়ই এটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়। আমি নিশ্চিত ১৪ বছর পরে আরও এগিয়ে যাবে দলটি।’ দ্বিতীয় টেস্টে যেমন টস ভাগ্য দলকে অনেকটা পথ এগিয়ে নিয়ে গেছে। টেইলর মনে করছেন তৃতীয় টেস্টও তাই হবে। জিম্বাবুইয়ে অধিনায়ক বলেছেন, ‘টস এবারও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আবারও ভাল শুরু করতে চাই। প্রথম টেস্টে আমাদের বোলিং অনেক ভাল হয়েছে। দ্বিতীয় টেস্টে ব্যাটিং ভাল হয়েছে। যদি দুইয়ে মিলে ধারাবাহিকতা ধরে রাখা যায়, একটু চেষ্টা করা যায়; তাহলে হুমকিতে ফেলা যাবে। এ উইকেটেও পঞ্চম দিন কী হবে বলা মুশকিল। আমরা প্রতিটি দিন ভাল খেলতে চাই। আমাদের সামর্থ্যরে সবটুকুই দিতে চাই।’ প্রথম টেস্টে ৩ উইকেটে হারের পর দ্বিতীয় টেস্টে ১৬২ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে জিম্বাবুইয়ে। বুঝেছে বাংলাদেশ কতটা ভাল দল হয়ে উঠেছে। যে দলটি বছরজুড়ে শুধু হেরেছে, বছরের শেষ সময়ে এসে জিম্বাবুইয়েকে পেয়ে শুধু থাবাই দিচ্ছে। সেই থাবায় এমন আঁচর গায়ে লাগছে জিম্বাবুইয়ে ক্রিকেটারদের যে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে আর তাই তৃতীয় টেস্টের আগে কোনভাবেই ‘জিততে চাই’ এমন শব্দ মুখ দিয়ে বের করছেন না জিম্বাবুইয়ে অধিনায়ক। বুঝে গেছেন, দলটিতে সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, মুমিনুল, তাইজুলদের মতো ক্রিকেটাররা আছেন। তারা যদি আরও চটে যান, তাহলে আরও বড় ব্যবধানে হারও হতে পারে। খেলাটি আবার হবে চট্টগ্রামে। যে চট্টগ্রামে জিম্বাবুইয়েকে প্রথমবার হারিয়েছে বাংলাদেশ। ২২৬ রানের বড় ব্যবধানে জিতেছে বাংলাদেশ। যেটি আবার বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম টেস্ট জয় ছিল। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজও ১-০ ব্যবধানে জিতে নিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দুটি টেস্ট সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। একটিতে হারে, আরেকটি হয় ড্র। দুটিই জিম্বাবুইয়ের মাটিতে হয়। ২০০৫ সালের পর আবার জিম্বাবুইয়ে খেলতে আসে বাংলাদেশের মাটিতে। এবারও সিরিজ হার হয়ে গেছে। এখন অপেক্ষা শুধু হোয়াইটওয়াশের। সেটি যদি চট্টগ্রামে হয় তাহলে ভালই হয়। যেখান থেকে টেস্ট জয় শুরু হয়, যেই দলের বিপক্ষে; সেই দলকেই হারিয়ে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ৩ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রতিটি ম্যাচ জিতে নেয়। তা কি বাংলাদেশকে করতে দেবে জিম্বাবুইয়ে? জিম্বাবুইয়ে অধিনায়ক নীরব। মুখ দিয়ে কোন কথা বের হয় না। হারতে হারতে এমনই অবস্থা হয়েছে যে এখন আর টেস্ট সিরিজের শেষ ম্যাচটিতে জিততে চান, তাও বলতে পারছেন না। জয় উচ্চারণহীন হয়ে পড়েছে জিম্বাবুইয়ে।
×