ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘দল হিসেবে আরও ভাল খেলতে পারতাম’

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১১ নভেম্বর ২০১৪

‘দল হিসেবে আরও ভাল খেলতে পারতাম’

স্পোর্টস রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে ॥ ‘১৪ বছরে খুব যে ভাল অবস্থানে আছি তা নয়। দল হিসেবে আমাদের উন্নতির আরও অনেক জায়গা ছিল। কিছু টেস্ট ড্র করতে পারতাম। কিছু টেস্ট জেতা সম্ভব ছিল। দল হিসেবে আমরা আরও ভাল করতে পারতাম।’-সোমবার টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ১৪ বছর পূর্তির দিনে সংবাদ সম্মেলনে নিজের উপলব্ধির কথা এমনভাবেই জানিয়েছেন বাংলাদেশ দলের টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। সকাল ৯টায় শুরু হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ দলের অনুশীলন। একি সকাল সাতটার দিকেই চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হাজির মুশফিক, সাকিব, তামিমরা! বিশেষ কোন অনুশীলন পর্ব না তো? এমন প্রশ্ন যখন ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মনে, তখনই জানা গেল জেএসসি পরীক্ষার জন্য এত সকালে বাংলাদেশ দলের স্টেডিয়ামে আগমন। যখন আসার কথা, তখন এলে যে দলের স্টেডিয়ামে আগমনের জন্য রাস্তা বন্ধ হয়ে থাকত। তা হলে যে পরীক্ষার্থীদের অনেক সমস্যায় পড়তে হতো। তাই সকাল-সকাল স্টেডিয়ামে এসে পড়া। যাতে পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে পড়তে না হয়। অনুশীলন চলল প্রায় তিন ঘণ্টা। কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহে আবারও বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবালকে নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকলেন। এ ব্যস্ততায় যদি আবারও তামিমের কাছ থেকে বড় কোন ইনিংস বের করে আনা যায়। তাহলেই হয়ে যায়। আবারও তামিম শতক করেন এবং বাংলাদেশও আবারও যদি বুধবার থেকে শুরু হতে যাওয়া তৃতীয় টেস্টেও জিতে জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে দেয়। যা টেস্ট শুরুর পর ১৪ বছর পাড়ি দিয়ে প্রথমবার ৩ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ জেতার গৌরব এনে দেবে বাংলাদেশকে। পারবে বাংলাদেশ সেই কাজটি করে দেখাতে? অধিনায়ক আগেই বলেছিলেন, ‘অবশ্যই জয় টার্গেট।’ আর সোমবার অনুশীলন শেষে বললেন, ‘যদি এই টেস্ট (তৃতীয় টেস্ট) জিততে পারি, ব্যবধানটা ৩-০ হয়; আইসিসি বুঝতে পারবে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে আমাদের ব্যবধান অনেক বড়। এতে হয়ত আমরা পরের বছরগুলোতে বাড়তি কিছু টেস্ট পেতে পারি। আমরা সেটার জন্য লড়ব।’ বোঝাই যাচ্ছে, মুশফিক বেশি বেশি টেস্ট খেলতে চান। এজন্য ভাল খেলার, ভাল খেলা বিশ্ব ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দেখানো ছাড়া বিকল্প কোন পথও খোলা নেই। আজ ১৫ বছরে পা রেখেছে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের। পরের দিনই বাংলাদেশ নামবে ৮৮তম টেস্ট ক্রিকেট খেলতে। প্রতিপক্ষ দলটি জিম্বাবুইয়ে। এ টেস্টের আগে ৮৭ টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। জয় এসেছে মাত্র ৬টি ম্যাচে। হার হয়েছে ৭০টি ম্যাচে আর ১১টি ম্যাচে করেছে ড্র। যে কয়টা ম্যাচ খেলা হয়েছে, তাতে সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতার পাল্টাটাই ভারি। সেই ২০০০ সালের ১০ নবেম্বর ঢাকায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়। সেই থেকে জয় মাত্র ৬টি! এ সময়ে অনেক ম্যাচ জেতার কথা। উল্টো হার হয়েছে ৭০টি। ৪৪টি সিরিজ খেলে মাত্র ৩টিতে জয় এসেছে। অন্তত হারের পাল্লা আরও কমে যাওয়ার কথা। কিন্তু না তা হয়নি। মুশফিক তাই বলেছেনও, ‘নিজেদের তুলে ধরার জন্য ১৪ বছর অনেক সময়।’ যে সময় চলে গেছে, তা আর ফিরে আসবে না। এখন সামনের দিন নিয়ে ভাবতে হবে। তাই ভাবতে চান মুশফিক, ‘টেস্টে যেন বাংলাদেশ ভাল খেলে। অন্তত পাঁচটা দিন যেন আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলতে পারি। শুধু দেশে না দেশের বাইরেও। এটা আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ থাকবে।’ টেস্টে দল ভাল অবস্থানে না থাকলেও গত কয়েক বছরে যে বেশ কয়েক পারফরমার বের হয়ে এসেছে, তা যে ইতিবাচক সেই জানানও দিলেন অধিনায়ক, ‘পারফরমার উঠে আসা ইতিবাচক দিক। তারা যদি সামনের চার-পাঁচ বছর ধারাবাহিকভাবে টেস্ট খেলতে পারে তাহলে সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের ফল আরও ভাল হবে।’ এই ভাল খেলার জন্য সবার আগে ঘরোয়া কাঠামো ভাল হওয়া উচিত। যেটি নিয়ে সবসময় আক্ষেপ থাকে। এবারও মুশফিকের কন্ঠে সেই আক্ষেপই আছে, ‘দেশের বাইরে ভাল খেলতে হলে প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে পেস সহায়ক উইকেট প্রয়োজন।’ তবে শুধু অবকাঠামো নয়, এক্ষেত্রে ক্রিকেটারদেরও যে দায় নিতে হবে তাও বললেন, ‘ক্রিকেটারদেরও নিজেদের দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করতে হবে। টেস্ট ক্রিকেট এমন একটা ব্যাপার, যেখানে উন্নতি করলে সবার চোখে পড়ে। আইসিসির নতুন নিয়মের পর অন্তত নয় নম্বরে আমাদের থাকতেই হবে। সেটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। এটাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। টেস্টে ভাল করতে হলে, বেশি ম্যাচ খেলার কোন বিকল্পও নেই।’ এমন সময় কয়েকদিন আগে শচীন টেন্ডুলকারের ঢাকায় আসার কথা সামনে টেনে আনলেন মুশফিক। বললেন, ‘শচীন (টেন্ডুলকার) যখন এখানে এসেছেন তিনিও বলেছেন, বাংলাদেশ যত টেস্ট খেলবে ততই শিখবে। খারাপ-ভাল খেলা পরের ব্যাপার। খেলার সুযোগ না পেলে উন্নতির কোন সম্ভাবনা নেই। আমাদেরও দায়িত্ব আছে, আমরা যত কম টেস্টই খেলি, যেন ধারাবাহিকভাবে ভাল ক্রিকেট খেলি।’ মুশফিক যখন টেস্ট ক্রিকেটে আরও উন্নতির দিকেই নজর দিচ্ছেন, তখন কোচ হাতুরাসিংহের নজরও একই রকম। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজ জেতার লক্ষ্যের কথা বলার সঙ্গে আগেরদিন হাতুরাসিংহে বলেছেন, ‘চার টেস্টে দুই জয়, ভাল। তবে আমি সন্তুষ্ট হব আগামী বছর দেশের মাটিতে অপরাজিত থাকলে। আমরা দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলব।’ হাতুরাসিংহে দলের সঙ্গে যোগ দেয়ার পর বাংলাদেশ দল চারটি টেস্ট খেলেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুটি, জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দুটি। দুটি টেস্টে জয় দেখেছেন কোচ আর তাই সন্তুষ্ট থেকেই ভবিষ্যতে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তানের মতো দলের বিপক্ষে খেলা থাকলেও না হারার লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে যেতে চান হাতুরাসিংহে। যদি দল সত্যিই এগিয়ে যেতে পারে, তাহলে টেস্ট ক্রিকেটের ১৪ বছর পর ভাল অবস্থানেই দাঁড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ। মুশফিক যে উপলব্ধি করছেন, ‘দল হিসেবে আরও ভাল করতে পারতাম’। সেই উপলব্ধিও পাল্টে যাবে।
×