ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এক রাতের ব্যবধানে তিস্তা মরা খালে পরিণত

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ১১ নভেম্বর ২০১৪

এক রাতের ব্যবধানে তিস্তা মরা খালে পরিণত

তাহমিন হক ববি, তিস্তা ব্যারাজ থেকে ॥ তিস্তা নদীর ঢেউ হঠাৎ করেই চোখের সামনে থেকে হারিয়ে গেছে। এখন বাংলা মাসের কার্তিকের শেষ প্রান্ত। শুরু হবে অগ্রহায়ণ। এরপর ধাপে ধাপে আসবে পৌষ, মাঘ ফাল্গুন। তারপর চৈত্র। কিন্তু এই কার্তিকেই চৈত্রের রূপ নিয়েছে তিস্তা অববাহিকা। হঠাৎ করেই উজানের প্রবাহ থমকে গেছে। রবিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিস্তা নদীতে পানি প্রবাহ ছিল প্রায় ৬ হাজার কিউসেক। সেখানে সোমবার ভোরে ঘুম থেকে উঠেই তিস্তাপাড়ের মানুষজনের চোখ ছানাবড়া। এক রাতের মধ্যে তিস্তা শুকিয়ে কাঠ! বিষয়টি ত্বরিত গতিতে ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় সৃষ্টি করে। সকাল ৯টার দিকে কর্তৃপক্ষ তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইস গেট সম্পূর্ণরূপে ক্লোজ করে দেন। ফলে ধুধু বালুচরে পরিণত হয়েছে ভাটি অঞ্চলে তিস্তার ১৩৪ কিলোমিটার। নদীতে নৌকা চলাচল থমকে গেছে। আর ব্যারাজের উজানের বাংলাদেশ অংশের ২০ কিলোমিটার এলাকা পা ভেজা পানিতে পরিণত হয়েছে। বুঝতে কারও বাকি নেই, উজানের দেশ ভারত তাদের গজলডোবা ব্যারাজের মাধ্যমে নদীর দুর্বারগতি রোধ করে দিয়েছে। নদীর এমন পরিস্থিতি শুষ্ক মৌসুম আসতে না আসতে নবেম্বর মাসের শুরুতে এতটাই খারাপ হয়ে যাবে তা কেউ ঠাওর করতে পারেনি। অভিন্ন তিস্তার উজানে বিজনবিভূই এলাকায় ভারত গজলডোবা ব্যারাজ নির্মাণ করে ১৯৮৭ সাল থেকে তিস্তার পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে আসছে। তিস্তার এ পরিস্থিতি আসন্ন সেচ নির্ভর বোরো আবাদে তিস্তা ব্যারাজের কার্যক্রমে বড় ধরনের সঙ্কট সৃষ্টি করবে তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তিস্তাপাড়ের মানুষজনসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ডিভিশন সূত্র মতে গেল বর্ষা মৌসুমে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ সর্বোচ্চ ৫০ হাজার কিউসেক পর্যন্ত উঠেছিল। সারা বর্ষা মৌসুমের পাশাপাশি উজানের ঢলে বাংলাদেশের অংশে তিস্তা নদী ওই সময় টানা প্রায় এক মাস বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি স্লইস গেট খুলে রাখা হয়েছিল। বন্যায় তিস্তা অববাহিকার চরগ্রামসহ তিস্তাপাড়ের গ্রামের ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়। গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের তিস্তার এমন চিত্র এক মাস পর নবেম্বরে এসে পুরোটাই বিপরীতমুখী হয়ে পাল্টে ফেলবে তা তিস্তাপাড়ের মানুষজন স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। সোমবার ভোর থেকে তিস্তা যেন এখন আর কোন নদী নয়, মরা খালে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য তিস্তাপাড়ের মাঝি আছির উদ্দিন ও হারুনের। তারা জানায় রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীতে নৌকা চলেছে। উজানের ঢল ছিল স্বাভাবিক। সোমবার ভোরে উঠে দেখি নদী শুকিয়ে কাঠ। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে তিস্তা নদীর বিপদসীমার লেবেল ৫২ দশমিক ৪০ মিটার। আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে তিস্তার পানি প্রবাহিত সর্বোচ্চ ছিল ৫২ দশমিক ৭০ মিটার। ১০ নবেম্বরে সোমবার সকাল ৯টায় তিস্তার পানি এসে দাঁড়ায় ৫০ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটারে! রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিস্তায় প্রায় ৬ হাজার কিউসেক পানির প্রবাহ ছিল। এক রাতেই সোমবার সকালে তিস্তায় পানি প্রবাহ নেমে আসে ৫শ’ কিউসেকে। তিস্তা ব্যারাজের উপসহকারী প্রকৌশলী ও শাখা কর্মকর্তা মোন্নাফ হাওলাদার জানান উজানের ঢল কমে যাওয়ায় সোমবার সকাল ৯টা থেকে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইস গেট সম্পূর্ণরূপে বন্ধের মাধ্যমে ক্লোজ করা হয়েছে। তিনি বলেন তিস্তা নদীতে উজানের যে পানি পাওয়া যাচ্ছে তা সেচ ক্যানেলে ভরে রাখা হচ্ছে। যার কারনে নদীর ভাটি অঞ্চলে নদীর প্রবাহ থেমে গেছে।
×