ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

২ নবেম্বরের মধ্যে শুরু হবে

বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে এবার ভর্তিযুদ্ধ

প্রকাশিত: ০৫:০০, ১১ নভেম্বর ২০১৪

বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে এবার ভর্তিযুদ্ধ

নিখিল মানখিন ॥ এবার শুরু হতে যাচ্ছে বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তিযুদ্ধ। সরকারী কলেজগুলোর ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হবে আগামী ১৫ নবেম্বর। আর ২০ নবেম্বরের মধ্যেই বেসরকারী কলেজগুলোর আবেদনপত্র বিতরণ শুরু হবে। জানা গেছে, ১৫ নবেম্বরের পর অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রতিটি কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি সংক্রান্ত চিঠি পাঠাবে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ক্লাস শুরু হবে আগামী বছরের ১০ জানুয়ারি। এবারও স্বাধীনভাবে ভর্তি ফি আদায়ের সুযোগ পাচ্ছে বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজগুলো। ভাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পাশাপাশি অনিয়ন্ত্রিত ভর্তি ফি নিয়ে এবারও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মেডিক্যালে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। অবশ্য বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তির ব্যয় ১৫ লাখ টাকায় নামিয়ে আনার চেষ্টা করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ বছর সরকার ঘোষিত ভর্তিযোগ্যদের মধ্যে ১২ হাজার ৪৬০ মেধাবী শিক্ষার্থীর কপালে জুটছে না ডাক্তারী পড়া। এবার ৬৬ হাজার ৯৮৭ পরীক্ষার্থীর মধ্য থেকে ভর্তির লড়াইয়ে জয়ী হয়েছে মোট ২২ হাজার ৭৫৯ ছাত্রছাত্রী। মেধার লড়াইয়ে পাস করেও আসনের অভাবে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী এবারও ভর্তির সুযোগ পাবে না কোন সরকারী বা বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে। কারণ, সর্বশেষ হিসাব অনুসারে দেশে সব মিলিয়ে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সে আসন মাত্র ১০ হাজার ২৯৯। এর মধ্যে সরকারী কলেজে আসন ৩ হাজার ৬৯৪। বাকি ছয় হাজার ৬০৫ আসন বেসরকারী কলেজে। এর বিপরীতে যোগ্য প্রার্থী থাকছে মোট ১৯ হাজার ৬৫। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে জানান, ১০ হাজার ২৯৯ আসনের বিপরীতে এবার ২২ হাজার ৭৫৯ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। পাসের হার ৩৪। এর মধ্যে সরকারী ৩ হাজার ৬৯৪ আসনে ভর্তি চলবে ৩০ অক্টোবর থেকে ১৫ নবেম্বর পর্যন্ত। সরকারী কলেজে ভর্তি শেষে শুরু হবে বেসরকারী পর্যায়ে ভর্তি প্রক্রিয়া। ক্লাস শুরু হবে আগামী বছর ১০ জানুয়ারি। সরকারী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জনকারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ স্কোরধারী পেয়েছে ১৮১ দশমিক ৫ (২০০ নম্বরের মধ্যে), আর সর্বনিম্ন ১৫৮ দশমিক ২৫। প্রতিমন্ত্রী জানান, সরকারী কলেজগুলোর মধ্যে ছাত্রের (১৭৯১) চেয়ে ছাত্রীর (১৮৯৩) সংখ্যা বেশি। উত্তীর্ণ মোট ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ছেলে ১১ হাজার ৪৪৬ ও মেয়ে ১১ হাজার ৩১৩। এদিকে, বিভিন্ন বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতেও মেধা তালিকার ভিত্তিতেই শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। সরকারী কলেজগুলোর নির্ধারিত আসন ইতোমধ্যে পূরণ করা হয়ে গেছে। সরকারী কলেজগুলোর ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হবে আগামী ১৫ নবেম্বর। সরকারী কলেজগুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর শুরু হবে বেসরকারী কলেজগুলোর ভর্তি প্রতিযোগিতা। বেসরকারী কলেজগুলোর জন্য পৃথক কোন ফল প্রকাশ করা হবে না। একটি বেসরকারী কলেজে আবেদনকারী প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় তাদের প্রাপ্য মেধা তালিকা অনুযায়ী সাজানো হবে। ওই কলেজের নির্ধারিত আসন অনুযায়ী আবেদনকারীদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মেধা তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট কলেজের আসন পূরণ করা হবে। বাকি শিক্ষার্থীরা বাদ পড়বে। এভাবেই প্রতিটি বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। তবে বিভিন্ন তদ্বির ও আর্থিক লেনদনের মাধ্যমে বেশি মেধা স্কোরপ্রাপ্তদের এড়িয়ে কম স্কোরধারীদের ভর্তি হওয়ার সুযোগ দেয়া হয় বলে অনেক বেসরকারী কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ দীন মোঃ নূরুল হক জনকণ্ঠকে জানান, মেধা তালিকার ভিত্তিতেই সরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। এ বছর দেশের ২৯ সরকারী মেডিক্যাল কলেজে ৩ হাজার ১৬২ এবং ৯ সরকারী ডেন্টাল কলেজ ও ইউনিটে ৫৩২ শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। অর্থাৎ সরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে ভর্তির সুযোগপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ হাজার ৬৯৪। সরকারী কলেজগুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়া পুরোপুরি সম্পন্ন হবে আগামী ১৫ নবেম্বর। এরপর অনুমোদনপ্রাপ্ত বেসরকারী কলেজগুলোকে শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়া সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হবে। ডাঃ সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ এম এ আজিজ জনকণ্ঠকে জানান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক চিঠি আসেনি। তবে ১৫ নবেম্বরের পর আসার কথা রয়েছে। মেধা তালিকা অনুযায়ীই শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। আমাদের কলেজে আসন সংখ্যা ৮৫। এই কলেজে যত শিক্ষার্থী আবেদন করবেন, তাদের মেধাস্কোর অনুযায়ী সাজিয়ে মাত্র ৮৫ শিক্ষার্থীকে ভর্তি করার সুযোগ দেয়া হবে। এর বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর সুযোগ আমাদের নেই। আর মেধা স্কোরপ্রাপ্তদের এড়িয়ে কম স্কোরধারীদের ভর্তি করানোর কোন সুযোগ নেই বলে জানান ডাঃ এম এ আজিজ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, মেডিক্যাল ও ডেন্টাল পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে ৪০ পাওয়া শিক্ষার্থীদেরই ভর্তির যোগ্য বিবেচনা করা হয়েছে। আগে এজন্য প্রয়োজন হতো ২০ নম্বর। এ বছর মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য ৬৯ হাজার ৪৭৭ শিক্ষার্থী ফরম তুললেও শেষ পর্যন্ত ২ হাজার ৪৯০ জন অনুপস্থিত থাকেন। এই হিসাবে ৩৪ শতাংশ পরীক্ষার্থী ভর্তির যোগ্য বিবেচিত হয়েছেন। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১১ হাজার ৪৪৬ ছাত্র ও ১১ হাজার ৩১৩ ছাত্রী। তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত পরীক্ষার্থী লিখিত পরীক্ষায় পেয়েছেন ৮১.৫। ৫৬ বেসরকারী মেডিক্যালে পাঁচ হাজার ৩২৫ জন, এবং ২৩ বেসরকারী ডেন্টাল কলেজ ও ইউনিটে এক হাজার ২৮০ শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন। বর্তমান পদ্ধতি অনুযায়ী এসএসসি ও এইচএসসির ফল মিলিয়ে অন্তত ৮ জিপিএ থাকলে মেডিক্যালে ভর্তির আবেদন করা যায়। এরপর পরীক্ষার মাধ্যমে নির্দিষ্টসংখ্যক শিক্ষার্থীই ভর্তির সুযোগ পান। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ভর্তি ফি’র বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। গত বছর প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ভর্তি ফি বাবদ ১২ থেকে ১৪ লাখ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে ভর্তি ফি কোন কোন কলেজে ১৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত উঠে যায় । প্রথম শ্রেণীর মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেতে অনেক শিক্ষার্থীকে গোপনে মোটা অঙ্কের টাকা দেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এবারও ওই সব প্রতিষ্ঠানে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সে ভর্তি ফি নির্ধারণে হস্তক্ষেপ করবে না স্বাস্থ্য অধিদফতর। ফলে স্বাধীনভাবে ভর্তি ফি আদায় করতে পারবে বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ নীতিমালা সংশোধনের কাজটি চূড়ান্ত হয়নি। গত সেশনের অভিজ্ঞতা তাদের বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোর নিজেদের মতো করে বাড়তি ভর্তি ও কোর্স ফি আদায় করে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোর বিরুদ্ধে শিক্ষার নামে বাণিজ্য বসানোর অভিযোগ উঠে আসছে। বিগত শিক্ষাবর্ষে ভর্তি ফি, উন্নয়ন ব্যয়, বিধিসহ নামী-বেনামী অনেক খাতের অজুহাত দেখিয়ে চড়া ফি আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। ওসব প্রতিষ্ঠানের ভর্তি বাণিজ্যসহ নানা নিয়মের বিষয়টি দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মেধাবী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। তবে বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তির ব্যয় ১৫ লাখ টাকায় নামিয়ে আনার চেষ্টা করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মাসিক বেতন ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার কথাও ভাবা হচ্ছে। এ ছাড়া উন্নয়ন বা অন্য কোন অজুহাতে বাড়তি ফি নেয়া থেকে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বিরত থাকতে হবে। সম্পূর্ণ ভর্তি ফির মধ্যে ১৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা শিক্ষা খরচ ও বাকিটা শিক্ষা ব্যয় হিসেবে ধরা হবে। সম্প্রতি মেডিক্যাল শিক্ষা ও জনশক্তি বিষয়ক যুগ্মসচিব ও শিক্ষা ব্যয় নিয়ন্ত্রণ কমিটির প্রধান আইয়ুবুর রহমানের নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোর ভর্তি ফি একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে আনার দাবি করেছেন বিএমএ’র সাবেক সভাপতি এবং ডক্টরস ফর হেলথ এ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সভাপতি রশিদী-ই মাহবুব। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, সদিচ্ছা থাকলেই সহনশীল ভর্তি ফি নির্ধারণ করতে পারে সরকার। যত তাড়াতাড়ি বৈষম্য দূরীকরণে সরকারী হস্তক্ষেপ দরকার। আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়টি সুরাহা হতে পারে বলে মনে করেন তিনি। বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আব্দুর রউফ সরদার জনকণ্ঠকে জানান, সরকারী গাইডলাইন অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। মেধা তালিকা অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হবে। বাংলাদেশ মেক্যিাল কলেজে ১১০ আসন রয়েছে বলে জানান অধ্যাপক ডাঃ আব্দুর রউফ সরদার। সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, সরকারী হাসপাতালগুলোতে শিক্ষার্থী প্রতি ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা ভর্তুকি দিয়ে থাকে সরকার। এ বিষয়ে বেসরকারী হাসপাতালে ১২ লাখ টাকা নেয়াটা বেশি টাকা আদায় হতে পারে না। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে মেডিক্যাল ভর্তি ফি শিক্ষার্থী প্রতি নেয়া হয় ৫০ লাখ টাকা। একটি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে নিজেদের টাকায় অনেক কিছু সামাল দিতে হয়; যা বাইরে থেকে অনুমান করা সম্ভব নয়। অন্যায়ভাবে বাড়তি ভর্তি ফি আদায় করা হয় না বলে দাবি করেন অনেক বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ।
×