ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুম্বাইয়ের আদলে ঢাকায় চালু হচ্ছে মেট্রোরেল

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ১১ নভেম্বর ২০১৪

মুম্বাইয়ের আদলে ঢাকায় চালু হচ্ছে মেট্রোরেল

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ভারতের মুম্বাইয়ের আদলে ঢাকায় চালু হতে যাচ্ছে মেট্রোরেল। এতে বিনা টিকেটে চড়লে ভাড়ার ১০ গুণ জরিমানা, অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদ-ের বিধান রেখে মেট্রোরেল আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। এছাড়া মন্ত্রিসভা অপর একটি খসড়া বিল ও জ্বালানি এবং আঞ্চলিক যোগাযোগ খাতে সহযোগিতা সংক্রান্ত দুটি সার্ক খসড়া চুক্তিতে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘মেট্রোরেল আইন-২০১৪’ এর খসড়াসহ বিলগুলোর অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা সাংবাদিকদের বলেন, মেট্রোরেল আইনে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ‘বিশেষ বিধান’ রাখা হয়েছে। ‘সরকারের অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প মেট্রোরেল (এমআরটি-৬) পরিচালিত হবে সরকারী ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের মাধ্যমে। এর নিয়ন্ত্রণ থাকবে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) হাতে।’ ভবিষ্যতে এ ধরনের আরও প্রকল্প হাতে নেয়া হলে তা এ আইনের আওতায় আসবে। ‘ভবিষ্যতে অন্য কোন কোম্পানি (সরকারী/বেসরকারী) মেট্রোরেল পরিচালনা করতে চাইলে লাইসেন্স নিতে হবে। ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালকের নেতৃত্বে একটি কমিটি এ লাইসেন্স দেবে। তবে সম্পূর্ণ সরকারী প্রতিষ্ঠান হলে লাইসেন্স ফি দিতে হবে না।’ মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা লাগবে, যার ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দিচ্ছে জাইকা। বাকি ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকার যোগান দেবে সরকার। আগামী ২০১৯ সালের মধ্যে উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনার কথা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সরকার আশা করছে, রাজধানীর যানজট নিরসন ও পরিবহন সমস্যার সমাধানে এ প্রকল্প বড় ভূমিকা রাখবে। এ প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণের জন্য খসড়ায় ‘বিশেষ বিধান’ রাখা হয়েছে জানিয়ে সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, ভাড়া নির্ধারণ, পরিদর্শক নিয়োগ, দুর্ঘটনা ও আইন লঙ্ঘনের শাস্তির বিষয়গুলোও প্রস্তাবিত আইনে রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খসড়ায় বলা হয়েছে, ডিটিসিএ একটি কমিটির মাধ্যমে মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ করবে। রেলের পরিদর্শকও তারা নিয়োগ দেবে। প্রস্তাবিত আইনে মেট্রোরেল ও যাত্রীর বীমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ আইন ভাঙলে সর্বোচ্চ ১০ বছর জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘অনুমতি ছাড়া লাইসেন্স হস্তান্তর করলে ১০ বছর কারাদ- ও এক কোটি টাকা জরিমানা; পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করলে দুই বছর জেল ও ২ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।’ এছাড়া মেট্রোরেল নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে এক বছরের কারাদ- ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা, সংরক্ষিত স্থানে কেউ বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করলে এক বছরের কারাদ- ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা, মেট্রোরেলের নিরাপত্তা বিঘিœত করলে ৫ বছরের কারাদ- ও ৫০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। বিনা টিকেটে বা পাস ছাড়া কেউ ভ্রমণ করলে ভাড়ার ১০ গুণ জরিমানা এবং অনাদায়ে ৬ মাস জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সচিব বলেন, মেট্রোরেলের টিকেট জাল করলে ১০ বছর কারাদ- এবং এক কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে খসড়ায়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রাজধানীতে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) ব্যবস্থা চালুর লক্ষ্যে মেট্রোরেল প্রকল্প বর্তমান সরকারের একটি অগ্রাধিকার প্রকল্প। সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) মেট্রোরেল পরিচালনা করবে। ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটি ডিএমটিসিএলকে তত্ত্বাবধান করবে। সচিব বলেন, প্রস্তাবিত মেট্রোরেলের রুট হবে উত্তরা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত। এটি পল্লবী, রোকেয়া সরণী, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, হোটেল সোনারগাঁও, শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বর ও তোপখানা রোড হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে যাবে। বিলে মেট্রো রেল পরিচালনার লাইসেন্স প্রদান ও ভাড়া নির্ধারণে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ কমিটির প্রধান হবেন ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটির নির্বাহী পরিচালক। ২০১২ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) এ প্রকল্প অনুমোদন হয়। বাস্তবায়নাধীন মেট্রোরেল লাইন-৬ এর আওতায় উত্তরা থেকে শুরু হয়ে মিরপুর-ফার্মগেট হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত যাবে এই মেট্রোরেল। সময় লাগবে ৪০ মিনিটেরও কম। এ প্রকল্পের ১৬ স্টেশন থাকবে উত্তরা (উত্তর), উত্তরা (সেন্টার), উত্তরা (দক্ষিণ), পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, সোনারগাঁও, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, জাতীয় স্টেডিয়াম ও বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়ে। সরকার বলছে, প্রতি চার মিনিট পর পর ১ হাজার ৮শ’ যাত্রী নিয়ে ছুটে চলবে মেট্রোরেল, ঘণ্টায় চলাচল করবে প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী। সোমবার মন্ত্রিসভা মোট দুটি খসড়া বিল ও জ্বালানি এবং আঞ্চলিক যোগাযোগ খাতে সহযোগিতা সংক্রান্ত দুটি সার্ক খসড়া চুক্তিতে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। অনুমোদিত খসড়া বিলগুলো হচ্ছেÑ মেট্রোরেল বিল, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ বিল-২০১৪, জ্বালানি সহযোগিতা (বিদ্যুৎ) সংক্রান্ত সার্ক ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট এবং সার্ক দেশগুলোর জন্য সার্ক রিজিওনাল রেলওয়ে এগ্রিমেন্ট। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পিপিপির আওতায় বড় অবকাঠামো প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ বিল-২০১৪ এর খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে। এ বিল পিপিপির বিদ্যমান নীতি ও কৌশলকে একটি কার্যকর বৈধতা দেবে। প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ক্ষেত্র বিশেষে অর্থনৈতিক বিষয়ক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি পিপিপির প্রকল্পগুলো অনুমোদন করবে। এতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি পিপিপি উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ভাইস চেয়ারম্যান থাকবেন অর্থমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এর সদস্য সচিব হিসেবে কাজ করবেন। ‘ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং বিল-২০১৪’ এর লক্ষ্য হচ্ছে আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা। ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিংয়ে মানোন্নয়ন ও অন্যান্য বিষয় দেখাশোনার জন্য বিলে ১০ সদস্যের একটি পরিষদ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। কম্পট্রোলার ও অডিটর জেনারেলের নেতৃত্বে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি পরিষদ সদস্যদের বাছাই করবেন। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুত বাণিজ্য সম্প্রসারণে মন্ত্রিসভা ‘সার্ক ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট ফর এনার্জি কো-অপারেশনের (বিদ্যুৎ)’ খসড়া অনুমোদন করেছে। মোশাররফ হোসেন বলেন, আগামী ২৬ ও ২৭ নবেম্বর নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠেয় ১৮তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মন্ত্রিসভা সার্ক দেশগুলোর জন্য সার্ক রিজিওনাল রেলওয়ে এগ্রিমেন্টও অনুমোদন করেছে। এটি সম্প্রতি পরিবহন সংক্রান্ত আন্তঃসরকার গ্রুপ চূড়ান্ত করেছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চতুর্দশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে এ চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেয়া হয়। এর আওতায় বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান, বাংলাদেশ-নেপাল-ভারত এবং বাংলাদেশ-ভুটান-ভারতের মধ্যে বেশ কয়েকটি রেল সংযোগ নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ চুক্তিও আসন্ন সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে স্বাক্ষরিত হতে পারে।
×