ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কথিত মানবাধিকার প্রবাসী বাস্তবতা

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১০ নভেম্বর ২০১৪

কথিত মানবাধিকার প্রবাসী বাস্তবতা

আমাদের দেশ আয়তনে ছোট হলেও এর বিপুল জনসংখ্যা আর মেধার কারণে এখানে মিডিয়ার ছড়াছড়ি। কৌলীন্য আর অতীতে বলীয়ান হওয়ার পরও তাদের চেয়ে আমাদের দেশেই হুজুগে মিডিয়ার ছড়াছড়ি বেশি। এরও দুটো দিক। পজেটিভ দিকটাকে মেনে নিয়েই বলি, শুধু এই কারণে কত মানুষ বিখ্যাত আর নামজাদা হয়ে গেল। যেমন মিজানুর রহমান। এই ভদ্রলোককে আমি প্রায়ই দেখি খবরে আছেন। একটা বিশেষ কারণে তিনি আমার মনোযোগও আকর্ষণ করেন। ওমন বকলেস দিয়ে পাতলুন আঁটা মানুষ আমি সিনেমা থিয়েটার ব্যতীত বাস্তবে খুব একটা দেখিনি। বিশাল বপুর মানুষ, বাচ্চা আর বুড়োরা ছাড়া কারও সেদিকে তেমন মনোযোগ নেই। আমাদের মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অন্তত এই একটি কারণে আমার কাছে খুব কৌতূহলের। আমাদের মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানও উত্তেজনা ও ঘটনা প্রবাহ ঠা-া হয়ে জুড়িয়ে গেলে রাজধানী থেকে লটবহর ও ক্যামেরা নিয়ে ছোটেন। কোথাও কাঁদেন কোথাও হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন, কোথাও বা ভাষণ দিতে দিতে ফেনা তোলেন। এই মানবাধিকার এখন হিযবুত তাহরীর নাফিস সালাম ওরফে উদয়কে মানবাধিকারের ছায়া দিয়ে আগলে রাখতে চাইছে। উদয় যদি মানবাধিকার কমিশনের ভাষায় সাধারণ নাগরিক হয় তো কাশেম আলী, কামারুজ্জামানদের দোষ কোথায়? তা ছাড়া কামারুজ্জামান বা মীর কাশেম আলীরা এখন অর্ধমৃত ঘোড়া। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে বলহীন দন্তহীন নখহীন। এই সুতো ও লাটাই এখন অনেক দূর থেকে খেলছে। এদেশে আসার আগে জন কেরি, মাইকেল বা হিলারি ইসবেলা নাম শুনলেই চমকে উঠতাম। সাদা চামড়ার গাঁক গাঁক করা ইংরেজী বলা মানুষদের দেখলেই কেমন জানি শ্রদ্ধা শ্রদ্ধা ভাব জাগত। ভাবতাম না জানি কত বড় মেধাবী আর জ্ঞানী এরা। এসে বুঝলাম আমি আর সাকা চৌধুরীর প্রয়াত পিতা ফকা চৌধুরীর জানা বোঝার ভেতর তেমন তফাত নেই। দু’জনেই চট্টগ্রামের বলেই হয়তবা। শ্রুত যে, ফকা চৌধুরী নাকি বিলেত ভ্রমণ শেষে পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে সুযোগ মিললেই তাঁর দেখা ঘোর এক বিস্ময়ের গল্প করতেন। বলতেন : বুইজ্জসনা বিলাতত গুরা গুরা পোয়া মাইয়াও ইংলিশ কয়। বুজরনি কি শিখ্খিত হিতারা। তর্জমা এই, বিলেতে বাচ্চারাও ঘোর শিক্ষিত ও মেধাবী বলেই নাকি গড় গড় করে ইংরেজী বলে। হায়রে কপাল! এটাই যে তাদের মাতৃভাষা। যে কথা বলছিলাম। এইসব নামের মানুষদের তৈরি মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এখন আমাদের ব্যাপারে বড় কৌতূহলী। এক আড্ডায় এক সাংবাদিক ভদ্রলোক বাংলাদেশের আইন বিচার ও শাস্তি নিয়ে খুব তড়পাচ্ছিলেন। ভদ্রলোক পূর্ব ইউরোপের। অনেকটা শোনার পর আমি তাঁকে প্রশ্ন করেছিলাম, আপনি কি আসলে জানেন বাংলাদেশ কোথায়? এবং কিভাবে এর জন্ম হয়েছিল? খুব স্মার্ট আর কেতাবী ঢংয়ে উত্তর দিয়েছিলেন : কেন? নেপাল আর শ্রীলঙ্কার মাঝখানে। বাংলাদেশ তো এই সেদিন তার স্বাধীনতা পেল তাই না? আমি কোন উত্তর না দিয়ে তাঁকে ভালভাবে গুগল সার্চ করার পরামর্শ দিয়ে বলেছিলাম, না জেনে বলাটা এখন পাশ্চাত্যেরও স্বভাবে পরিণত হয়ে গেছে। এমন মানুষে ঠাসা পশ্চিমা জগতের সব কিছু নিতে হবে কোন দুঃখে? তা ছাড়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বা জাতিসংঘের মতো প্রতিষ্ঠানও কি এখন আগের জায়গায় আছে? দুনিয়ায় বিশেষত মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশে দেশে এদের দায়িত্ব কর্তব্য কোথায়? আমাদের পাশের দেশ মিয়ানমারে বছরের পর বছর গণতন্ত্র ছিল না। সু চিকে গৃহবন্দী করে রাখা হলো। তখন এরা কি করেছিল? আজ যখন ফিলিস্তিনসহ সিরিয়া ইরাকে মানুষ পাখির মতো জান হারাচ্ছে এরা কি আসলেই তা বন্ধ করতে আগ্রহী? এই সেদিন ইরানে একটি নিরীহ রমণীকে ফাঁসিতে ঝোলানো হলো। তখন কোথায় ছিল এরা? কে না জেনে টাকার নৌকো পাহাড়ের ওপর দিয়ে চলে। জামায়াতী টাকার সেই সাম্পান যে বিদেশীদের বন্দরে ভিড় করেছে এটা সর্বজনবিদিত। আমাদের দেশে আইন ও বিচার খালি যুদ্ধাপরাধীদের বেলায় খারাপ? জীবনের সর্বস্তরে আইন ও বিচারের নায্যতা যেখানে প্রশ্নবিদ্ধ সেখানে তাদের খেয়াল নেই।
×