ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বায়ু দূষণকারী পশ্চিমা দেশগুলোকে ‘ওয়াক ওভার’ দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১০ নভেম্বর ২০১৪

বায়ু দূষণকারী পশ্চিমা দেশগুলোকে ‘ওয়াক ওভার’ দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সরকার আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনে দুর্বল নেগোসিয়েশন টিম পাঠিয়ে বায়ু দূষণকারী পশ্চিমা দেশগুলোকে ‘ওয়াক-ওভার’ দেয়ার চেষ্টা করছে। দেশের নাগরিক সমাজের আটটি সংগঠন রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই অভিযোগ করেছে। তারা আরও অভিযোগ করে, নিয়মিতভাবে জলবায়ু সম্মেলনের দর কষাকষিতে অংশ নেয়া দক্ষ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সরকার এবার আলোচনা থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে ‘ভুল বার্তা’ যাবে যে, বাংলাদেশ দলের সঙ্গে সুশীল সমাজ নেই। যা বাংলাদেশের অর্জিত সুনাম ক্ষুণœ করবে। সংবাদ সম্মেলনে লিমা আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের অবস্থান ও প্রস্তুতি বিষয়ে তথ্য প্রকাশের ব্যাপারে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের নিস্পৃহতার সমালোচনা করা হয়। সেই সঙ্গে সম্মেলনের প্রাক্কালে সরকারের প্রস্তুতি ও এতে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। ছয়টি অধিকারভিত্তিক নেটওয়ার্ক এবং দুইটি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সাংবাদিক ফোরাম রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে বক্তরা দাবি করেন, জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণের পূর্বে এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রস্তুতি, অবস্থান ও সুশীল সমাজের অংশগ্রহণের প্রক্রিয়া ইত্যাদি সকল বিষয় অবিলম্বে বাংলাদেশ সরকারকে ঘোষণা করতে হবে। তা না হলে, এ বিষয়ে বাংলাদেশের অর্জিত সুনাম ও নেতৃত্ব ক্ষুণœ হতে পারে। উল্লেখ্য, আগামী ১-১২ ডিসেম্বর পেরুর রাজধানী লিমায় ইউএনএফসিসিসির ২০তম আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম (বিসিজেএফ), বাংলাদেশ ইনডিজিনাস পিপলস নেটওয়ার্ক অন ক্লাইমেট চেঞ্জ এ্যান্ড বায়োডাইভার্সিটি (বিপনেটসিসিবিডি), ক্লাইমেট চেঞ্জ ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (সিসিডিএফ), কোস্টাল লাইভলিহুড এনভায়রনমেন্ট একশন নেটওয়ার্ক (ক্লিন), ক্যাম্পেইন ফর সাসটেইনেবল রুরাল লাইভলিহুড (সিএসআরএল), ফোরাম ফর এনভায়রনমেন্ট জার্নালিস্টস ইন বাংলাদেশ (এফইজেবি) এবং ইক্যুইটি এ্যান্ড জাস্টিস ওয়ার্কিং গ্রুপ, বাংলাদেশ (ইক্যুইটিবিডি)। ইক্যুইটিবিডি’র রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিসিজেএফের কাওসার রহমান এবং অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বল্পোন্নত দেশের নেগোশিয়েটর এবং এফইজেবির কামরুল ইসলাম চৌধুরী, বাপার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন, উন্নয়নধারা ট্রাস্টের আমিনুর রসুল বাবুল এবং ইক্যুইটিবিডির মোস্তফা কামাল আকন্দ। বাপার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন বলেন, ‘সরকার আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনে দুর্বল নেগোসিয়েশন টিম পাঠিয়ে পশ্চিমা বিশ্বকে ‘ওয়াক-ওভার’ দেয়ার চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে সরকার ধনী দেশগুলোকে সহায়তা করতে চায়। জলবায়ু সম্মেলন নিয়ে পরিবেশমন্ত্রীর নিস্পৃহাই এটা প্রমাণ করে।’ তিনি বলেন, জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের অতীতের সুনাম রক্ষা করার ব্যাপারে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে। গ্রহণযোগ্যতা, সকলের অংশগ্রহণ ও স্বচ্ছতাই বাংলাদেশকে এই নেতৃত্বের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। এ বিষয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের আচরণ ও উদ্দেশ্য পরিষ্কার নয় বলে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। আব্দুল মতিন, জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের অতীতের সুনাম ও নেতৃত্ব অক্ষুণœ রাখার জন্য প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এফইজেবির চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে ফাস্ট স্টার্ট ফাইন্যান্স (এফএসএফ) থেকে খুব নগণ্য সহযোগিতা পেয়েছে। জলবায়ু উদ্বাস্তু বিষয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তি বা তহবিল দাবি করতে হলে বাংলাদেশকে কিছু জাতীয় ব্যবস্থাপনা প্রদর্শন করতে হবে। তিনি বলেন, লিমায় জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয় ও ক্ষতি (লস এ্যান্ড ডেমেজ) ইস্যুতে নির্বাহী কমিটি গঠন করা হবে। ওই কমিটিতে স্বল্পোন্নত দেশের অন্তত দুই জন প্রতিনিধি যাতে অন্তর্ভুক্ত হয় বাংলাদেশকে তার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে গ্রুপের পক্ষ থেকে মূল বক্তব্য পাঠ করেন বিসিজেএফ’র সভাপতি কাওসার রহমান। তিনি তার বক্তব্যে যেসব দাবি তুলে ধরেন, সেগুলো হলো (১) জলবায়ু সম্মেলনে যোগদানের পূর্বেই বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে লিখিত নেগোসিয়েশন পেপার প্রকাশ করতে হবে। (২) মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই দেশে এবং সম্মেলন স্থলে স্বচ্ছতার সঙ্গে এতে সুশীল সমাজ ও সাংবাদিকরা কিভাবে অংশগ্রহণ করবে তার রূপরেখা ঘোষণা করতে হবে। (৩) বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলকে অবশ্যই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ (এমভিসি) এবং স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) স্বার্থ তুলে ধরতে হবে, উন্নত দেশ, জি-৭৭ বা চীনের স্বার্থ নয়। (৪) লস এ্যান্ড ড্যামেজের ভিত্তিতে বাংলাদেশকে অবশ্যই একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, অর্থায়ন ও তার গঠন প্রস্তাব করতে হবে। (৪) প্রতিনিধি দলকে অবশ্যই উন্নত দেশ, উন্নয়নশীল দেশ এবং স্বল্পোন্নত দেশের জন্য ভিন্ন ভিন্ন তাপমাত্রা বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা প্রস্তাব করতে হবে এবং (৫) প্রতিনিধি দলকে অবশ্যই আইএনডিসি (ইনটেনডেড ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কনট্রিবিউশন) সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ও স্বল্পোন্নত দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার ব্যাপারেও দর কষাকষি করতে হবে।
×