ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্মৃতিময়তায় মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৯ নভেম্বর ২০১৪

স্মৃতিময়তায় মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী

গৌতম পা-েম ॥ ‘বাঁশি বাজে ওই দূরে’, ‘ওই দূর দূর দূরান্তে’, ‘হেসে খেলে জীবনটা যদি চলে যায়’, ‘জানতাম যদি শুভঙ্করের ফাঁকি’, ‘ হৈ হৈ রঙ্গিলা রঙ্গিলা রে’, ‘তোর রূপ দেখে চোখ ধাঁধে মন ভরে না’ ষাট-সত্তর এবং আশির দশকের জনপ্রিয় এসব গানে আজও চিত্ত প্রসন্ন হয়। এসব অসংখ্য গানের শিল্পী মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী। সম্প্রতি হঠাৎ করেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলা গানের এই কিংবন্তি। প্রকৃতির নিয়মে সবাইকে একদিন চলে যেতেই হবে। কিন্তু শিল্পী মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীর চলে যাওয়াকে যেন মেনে নিতে পারছেন না তাঁর কাছের মানুষ, সমসাময়িক শিল্পীরা। তাঁর সঙ্গে অসংখ্য স্মৃতিই যেন তাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে সোনালী অতীত। রেডিও, চলচ্চিত্র ও রেকর্ডের গানে ষাট-সত্তর ও আশির দশকে দাপটের সঙ্গে তিনি শ্রোতাদের মন জয় করে নিয়েছিলেন। প্রায় সাড়ে তিন হাজার গান গেয়েছেন তিনি। এরমধ্যে ২০৬ টি চলচ্চিত্রের গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে সঙ্গীতাঙ্গন থেকে দূরে ছিলেন তিনি। দুরারোগ্য ব্যাধী তাঁকে বাধ্য করেছে দূরে থাকতে। মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শিল্পী আবদুল হাদী বলেন, ১৯৬০ সালে নেত্রকোনায় এক অনুষ্ঠানে প্রথম পরিচয় হয় মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীর সঙ্গে। তাঁর গানে আমি হতবাক হয়ে যাই। তাঁকে ঢাকায় আসতে বলি। ঢাকায় আসার পর শাহবাগ বেতারে আমাদের আড্ডা হতো। সেই আড্ডায় আরও থাকত শিল্পী আবদুল জব্বার, খন্দকার ফারুক আহমেদ, মাহমুদুন্নবীসহ আরও অনেকে। আমাদেও দুই জনের বয়সের কিছুটা পার্থক্য হলেও বন্ধুত্বেও সম্পর্ক ছিল খুবই গাঢ়। মানুষ হিসেবেও তিনি ছিলেন অসাধারণ। অসুস্থতার কারণে গান থেকে দূরে ছিলেন। শিল্পী আবদুল জব্বার বলেন, মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে অসংখ্য স্মৃতি রয়েছে আমার। বয়সে আমার ছোট, কিন্তু বন্ধুত্ব ছিল অটল। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল প্রদীপ কুমার সিন্হা। পরবর্তিতে ধর্ম পরিবর্তন করে মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী হন। অবসরে চায়ের দোকানে আমাদের আড্ডা হতো। শিল্পী খুরশিদ আলম বলেন, খান আতার হাত ধরে বাংলাদেশ রেডিওতে কাজ শুরু করলেও, নিজের যোগ্যতায় বাংলা চলচ্চিত্রের গানে জায়গা করে নেন। ষাট-সত্তর ও আশির দশকে চলচ্চিত্র, রেডিও ও টিভিতে দাপটের সাথে গান করেন। জাতীয় পুরষ্কার ছাড়াও অসংখ্য পুরষ্কাওে ভূষিত হয়েছেন শিল্পী মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী। হেসে খেলে জীবন কাটালেও শেষ জীবনে আক্রান্ত হলেন দূরারোগ্য ব্যাধিতে। তিনি চলে গেছেন দূর দূরান্তে, কিন্তু তাঁর গানেই তিনি বাঙালি হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন যুগে যুগে।
×