ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

খাদ্যে বিষ ও ভেজাল ভয়াবহ পর্যায়ে, দৃশ্যমান শাস্তি চাই

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ৯ নভেম্বর ২০১৪

খাদ্যে বিষ ও ভেজাল ভয়াবহ পর্যায়ে, দৃশ্যমান শাস্তি চাই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ খাদ্যে বিষ বা ভেজাল প্রয়োগকারীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান বিচারের মাধ্যমে দৃশ্যমান শাস্তি প্রয়োজন বলে মনে করছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি খায়রুল হক। তিনি বলেন, খাদ্যে বিষ মেশানোর বিরুদ্ধে এক ডজন আইন রয়েছে। কিন্তু প্রয়োগ নেই। খাদ্যে বিষক্রিয়া বর্তমানে ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গেছে। বাজারে বিষমুক্ত খাদ্য আর অবশিষ্ট নেই। সব ধরনের খাবারে এখন বিষ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। শনিবার রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে বিষমুক্ত খাদ্য নিশ্চিতে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তৃতাকালে এসব কথা বলেন। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন পবা এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে বিচারপতি খায়রুল হক আরও বলেন, আগে খাবার ভেজালের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে সে অবস্থায় নেই। কেমিকেল মিশিয়ে খাবার বিষক্রিয়ায় পরিণত করা হচ্ছে। এক সময় দুধে পানি মিশিয়ে বিক্রি করা হলেও এখন দুধের মধ্যে দুধই পাওয়া যায় না। শ্লো পয়জনিংয়ের মাধ্যমে ধীরে ধীরে মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। যে কোন আইনেই এ ধরনের হত্যাকা- অপরাধ বলে বিবেচিত। ধীরে ধীরে কাউকে হত্যা করা অথবা মুহূর্তে কাউকে হত্যার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তিনি বলেন, বর্তমানে মেতি, তিলের তেল আর গোলমরিচ ছাড়া কোন খাবার বিষমুক্ত নয়। খাবারে বিষাক্ততা ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় চুপ করে বসে থাকলে চলবে না। সমাজে অসুস্থ মানুষ হয়ে বসবাস করা যায় না। তিনি বলেন, এসব কিছুর পরও কি সরকার চুপ করে বসে থাকবে। তারা কি বিষাক্ত খাদ্য প্রতিরোধে জেগে উঠবে না? এটাই কি রাষ্ট্র ব্যবস্থা। এর জন্যই ৩০ লাখ মানুষ মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দিয়েছিল। বিষ খাওয়ার জন্য কি দেশ স্বাধীন হয়েছিল। উন্নয়নে মনোযোগ দিতে গিয়ে মানুষের কথা ভুলে গেলে চলবে না। মানুষের সুস্বাস্থ্যের কথা বাদ দিয়ে পদ্মা সেতু করে কোন লাভ হবে না। তিনি বলেন, ভাবতেই অবাক লাগে ট্যানারি বর্জ্য থেকে পোল্টি ফিড তৈরি করা হচ্ছে। এটা কত ভয়াবহ। অথচ কেউ এদিকে নজর দিচ্ছে না। তাহলে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর কী করছে। তারা যদি এ বিষয়ে মনিটরিং না করে তাহলে প্রতিষ্ঠানটি রেখে লাভ কি?। তারা সেখানে বসে কী কাজ করে। তিনি ফরমালিন আমদানিতে মনিটরিং না করায় এনবিআরের সমালোচনা করে বলেন, এনবিআর এখন নিজেরাই বিষাক্ত হয়ে পড়ছে। ফরমালিন নিষিদ্ধ হলেও কেন এনবিআর তা আনতে অনুমতি দেয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে কোন খাবারই খেতে পারব না। তিনি বলেন, দেশে সুশাসন না থাকার ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। একজন প্রধানমন্ত্রী হয়ে তাকে সব বিষয়ে দেখভাল করতে হচ্ছে। এমপি বা মন্ত্রীদের এ বিষয়ে কোন জবাবদিহিতা নেই। আদালতের আইনের প্রতি উপজেলায় একটি ফুড কোর্ট বসানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে ফুড কোর্ট স্থাপন করা হলেও এখনও ফুড এনালাইসিস নিয়োগ দেয়া হয়নি। সাধারণ মানুষের সুস্বাস্থ্যের জন্য সরকার কতটুকু ভাবছে? সবাই যদি দুধ, ফলমুল খাওয়া বাদ দেয়া তাহলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। বর্তমানে খাদ্যে বিষক্রিয়া সিরিয়াস পর্যায়ে চলে গেছে। এখনই ব্যবস্থা নেয়া না হলে আমাদের ভবিষ্যত অন্ধকার বলে উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, খাদ্যে যারা বিষ মেশায় তারা সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। আর অভিযানের মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। যারা বিষ মেশানোর সঙ্গে জড়িত থাকে না। প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, বিষমুক্ত খাদ্যের অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। গত ৪৩ বছরেরও সংবিধানের মানুষের খাদ্যের অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। বিষযুক্ত খাবারে মানুষের মর্যাদা নষ্ট করে। এখনই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে কেন বাজারে বিষাক্ত খাবার বিক্রি করা হয়। তিনি বলেন, মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখতে হবে। আর তখই রাষ্ট্রের সঙ্গে মানুষের প্রকৃত যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এটা হলে কেউ আর খাদ্যে ভেজাল মেশাতে পারবে না। আইন কমিশনের সদস্য বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর বলেন, সংশোধিত নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এ ভেজাল মেশানোর দায়ে শাস্তির পরিমাণ কম করা হয়েছে। এটা সংশোধন করা প্রয়োজন।
×