ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সোহাগপুর বিধবাপল্লীর নিরাপত্তা ও সাক্ষী সুরক্ষা দাবি

উলফার কাছ থেকে জামায়াতের অস্ত্র সংগ্রহ, তোলপাড়

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ৯ নভেম্বর ২০১৪

উলফার কাছ থেকে জামায়াতের অস্ত্র সংগ্রহ, তোলপাড়

রফিকুল ইসলাম আধার, শেরপুর, ৮ নবেম্বর ॥ চূড়ান্ত রায়ে ফাঁসির দ-ে দ-িত যুদ্ধাপরাধ কামারুজ্জামানের রায় কার্যকরের ঠিক আগমুহূর্তে শেরপুর সীমান্তে অসমের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফা ও জামায়াতের মধ্যকার গোপন বৈঠক অস্ত্র ক্রয় চুক্তিসহ উলফার কাছ থেকে জামায়াতের অস্ত্র সংগ্রহের খবরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। মিডিয়া ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত এই খবরটি শনিবার জানাজানি হওয়ার পর থেকে শেরপুরে বিশেষ করে সোহাগপুর বিধবা পল্লীতে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র বরাত দিয়ে শুক্রবার প্রিন্ট মিডিয়া ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ‘পরেশ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন উলফা জামায়াতের জন্য বাংলাদেশে অস্ত্র পাচার করছে। এ জন্য চুক্তি করতে গত ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশের শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার মধুটিলা ইকোপার্কে একটি গোপন বৈঠক হয়েছে। এতে জামায়াত ও বিএনপির কিছু নেতা এবং উলফার পক্ষ থেকে তাদের দু’জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে জামায়াত নেতারা ছোট অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং এজন্য উলফা প্রতিনিধিদের কাছে ২০ লাখ টাকা পরিশোধ করেন।’ প্রকাশিত খবরটি শনিবার সীমান্তবর্তী শেরপুর অঞ্চলে জানাজানি হওয়ার পর থেকে স্থানীয় প্রশাসন, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, মুক্তিযোদ্ধা, প্রগতিশীল সামাজিক-সাংস্কৃিতক ব্যক্তিত্ব এবং বিশেষ করে সোমবার মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে চূড়ান্ত বিচারে মৃত্যদন্ড বহাল থাকা কামারুজ্জামানের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের মাঝে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গণহত্যা ও ধর্ষণের যে অপরাধের দায়ে কামারুজ্জামানের মৃত্যুদন্ড বহাল রয়েছে, সেই ঘটনাস্থল সীমান্তবর্তী সোহাগপুর গ্রাম থেকে উলফা-জামায়াতের গোপন বৈঠকস্থল মধুটিলা ইকোপার্কের দূরত্ব মাত্র কয়েক মাইল। সঙ্গত কারণেই ওই খবরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে আতঙ্ক বিধবা পল্লীতে বসবাসকারী রাষ্ট্রপক্ষের ৪ সাক্ষীসহ বেঁচে থাকা ৩৩ বীরাঙ্গনা ও তাদের স্বজনদের মধ্যে। তারা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ ব্যাপারে সাক্ষী সুরক্ষাসহ নিরাপত্তা বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা প্রথম থেকেই রয়েছে দায়সারা। শনিবার বিকেলে সোহাগপুর বিধবাপল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। বিধবাপল্লীর বীরাঙ্গনাসহ স্বজনদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। তাদের বসতবাড়ির দিকে অপরিচিত লোকজনকে এগোতে দেখলেই তারা আঁতকে উঠছেন। অন্যদের পাওয়া গেলেও রাষ্ট্রপক্ষের (ক্যামেরা ট্রায়াল) ৩ সাক্ষী করফুলী বেওয়া, হাসেন বানু ও হাফিজা বেওয়ার খোঁজ মেলেনি। তারা নাকি নতুন আতঙ্কে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। ওইসময় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী শহীদ ছফির উদ্দিনের ছেলে মোঃ আলাল উদ্দিন বলেন, কামারুজ্জামানের সাফাই সাক্ষী আরশাদ আলী ও আত্মগোপনে থাকা কাদির ডাক্তারের লোকজনের ঘন ঘন আনাগোনার কারণে তাদের আতঙ্ক বেড়ে গেছে। দু’দিন আগের রাতেও কালো একটি মাইক্রোবাসে সশস্ত্র অবস্থায় কিছু লোক এসে আমাকেসহ সাক্ষীদের বাড়িঘরের খোঁজ নিয়ে গেছে। যাওয়ার সময় বলে গেছে, কাউকেই ছাড়ব না। আমরা এখন খুব ভয়ে আছি। রাষ্ট্রপক্ষের অপর সাক্ষী ও সোহাগপুর শহীদ পরিবার কল্যাণ সমিতির সভাপতি জালাল উদ্দিনকে পাওয়া যায় পার্শ্ববর্তী এক চেহলাম অনুষ্ঠানে। তিনি বলেন, চূড়ান্ত রায়ে খুশি হওয়ার পরও আমরা বিধবাপল্লীর শহীদ পরিবারের স্বজনরা কামারুজ্জামানের পক্ষের লোকজনের ভীতি ছড়ানোর কারণে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছি। এখন শুনছি কামারুজ্জামানের লোকজন নাকি এই সীমান্ত পথেই অস্ত্র কিনছে। আমরা প্রথম থেকেই প্রশাসনের কাছে এখানে একটি নিরাপত্তা ক্যাম্প বসানোর দাবি করে আসছি। কিন্তু মাঝে-মধ্যে টহল তৎপরতা ছাড়া তাদের দেখা যায়নি। অবশ্য শনিবার দুপুরে এলাকায় ১৫ সদস্যের একটি পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে। অন্যদিকে আত্মস্বীকৃত আল-বদর সদস্য কামারুজ্জামানের নির্যাতন সেলের দারোয়ান ও রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী মোহন মুন্সি, সাক্ষী মজিবর রহমান পানু ও অধ্যক্ষ সৈয়দ আব্দুল হান্নানের নিরাপত্তার বিষয়েও খবর পাওয়া যায়নি আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিশেষ তৎপরতা বাড়ানোর। ওই অবস্থায় শেরপুর জেলা সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সভাপতি আমজাদ হোসেন ও জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সদস্য সচিব হারেজ আলী গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত সোহাগপুর বিধবাপল্লীসহ কামারুজ্জামানের মামলার সাক্ষীদের নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে শেরপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকীর হোসেন বলেন, দ্রুতই সাক্ষী সুরক্ষায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বিধানের ব্যবস্থা নেয়া হবে। এজন্য রবিবার সভা আহ্বান করা হয়েছে। পুলিশ সুপার মেহেদুল করিম, ‘শেরপুর সীমান্তে জামায়াত-উলফার গোপন বৈঠক এবং অস্ত্র ক্রয়ের একটি খবর’ গণমাধ্যমে দেখেছেন স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি সরকারের কোন এজেন্সি জানে বলে তার জানা নেই। অন্য কোন এজেন্সির জানা থাকলে স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকার সুবাদে তাকেও অবহিত করা হতো। তবে সোহাগপুর বিধবাপল্লীর নিরাপত্তায় পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনসহ সাক্ষীসুরক্ষায় তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে বলেও তিনি জানান।
×