ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ সাক্ষী সন্তোষ কুমারের জবানবন্দী

জব্বার নিজ হাতে আমার বড় ভাই সখানাথকে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ৭ নভেম্বর ২০১৪

জব্বার নিজ হাতে আমার বড় ভাই সখানাথকে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা পলাতক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১৯তম সাক্ষী সন্তোষ কুমার খরাতী জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে তিনি বলেছেন, জব্বার ইঞ্জিনিয়ার আমাদের নলী গ্রামে আক্রমণ চালায়। এ সময় আসামি নিজহাতে আমার বড় ভাই সখানাথ খরাতীকে গুলি করে হত্যা করে। জবানবন্দী শেষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। রবিবার নতুন সাক্ষীর জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুস সুবহানের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। রবিবার তৃতীয় দিনের মতো যুক্তিতর্কের জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এ আদেশগুলো প্রদান করেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পিরোজপুরের আসামি পলাতক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সাক্ষ্য অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার ১৯তম সাক্ষী জবানবন্দী দিয়েছেন। রবিবার ২০তম সাক্ষীর জবানবন্দীর জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছে। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি জাাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। প্রসিকিউশনের ১৯তম সাক্ষী তাঁর জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম সন্তোষ কুমার খরাতী। আমার বর্তমান বয়স আনুুমানিক ৬৩ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম-নলী, থানা-মঠবাড়িয়া, জেলা-পিরোজপুর। আসামি আব্দুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ার ১৯৭১ সালে মুসলিম লীগের একজন নেতা ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় এলাকায় রাজাকার বাহিনী গঠন করেন। ওই রাজাকার বাহিনী আসামি আব্দুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ারের নির্দেশে মঠবাড়িয়া এলাকায় হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে। সাক্ষী তাঁর জবানবন্দীতে আরও বলেন, ১৯৭১ সালের ২২ মে (৭ জ্যৈষ্ঠ) আনুমানিক সকাল ৯টার দিকে আসামি আব্দুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ারের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনীর লোকজন আমাদের নলী গ্রামে আক্রমণ চালায় এবং আসামি আব্দুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ার আমার আপন বড় ভাই সখানাথ খরাতীকে গুলি করে হত্যা করে। আসামি আব্দুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ারের নির্দেশে রাজাকার নুর হোসেন (বর্তমানে মৃত) আমাদের গ্রামের নিশিকান্ত বিশ্বাস ও সুরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসকে গুলি করে হত্যা করে। ওই ঘটনার সময় আমি আমার ভাই সখানাথ খরাতীর সঙ্গে ছিলাম। আসামি আব্দুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ারের নির্দেশে রাজাকাররা আমাদের গ্রামের জিতেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, গণেশ চন্দ্র মিস্ত্রি, নেপাল চন্দ্র মিস্ত্রি, উপেন্দ্রনাথ মিস্ত্রি, বসন্ত হালদারসহ সর্বমোট ১১ জনকে গুলি করে হত্যা করে। ঘটনার সময় আমরা আত্মরক্ষার্থে গ্রামের পার্শ্ববর্তী খালের অপর পাশে আশ্রয় গ্রহণ করি। এর পর আসামি আব্দুল জব্বারের নির্দেশে রাজাকাররা আমাদের গ্রামের বাড়িঘর লুটপাট ও ৬০ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। আসামি আব্দুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ার ও রাজাকাররা সন্ধ্যার সময় গ্রাম থেকে চলে গেলে আমরা গ্রামে ফিরে এসে মৃত দেহগুলোকে মাটিচাপা দেই। আব্দুস সুবহান ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুস সুবহানের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। রবিবার তৃতীয় দিনের জন্য যুক্তিতর্কের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ প্রদান করেছে। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলাম। আসামি আব্দুস সুবহানের বিরুদ্ধে নয়টি অভিযোগের মধ্যে তিনটি অভিযোগের ওপর যুক্তিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন বৃহস্পতিবার যুক্তিতর্ক করেন। গত ৭ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সুবহানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন দুই তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও মোঃ নূর হোসাইনসহ প্রসিকিউশন পক্ষের ৩১ জন সাক্ষী। গত ২৭ মার্চ ট্রাইব্যুনাল-১ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তর করেন। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ষড়যন্ত্রসহ ৮ ধরনের ৯টি মানবতাবিরোধী অপরাধে সুবহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে ট্রাইব্যুনাল। ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সকালে টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপ্রান্ত থেকে সুবহানকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
×