ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ রোল মডেল ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:০২, ৭ নভেম্বর ২০১৪

দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ রোল মডেল ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বাংলাদেশ অতীতের তুলনায় অনেক বেশি ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে মন্তব্য করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রস্তুত থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল। এছাড়া প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ রোধ করে সরকার দেশকে সম্মানজনক জায়গায় নিয়ে গেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই বার বার দুর্যোগ আসবে। এজন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে প্রারম্ভিক বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল।’ তিনি বলেন, প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ সবকিছু মোকাবেলাতেই আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। ভৌগোলিক কারণে দুর্যোগ আসবে; তা মোকাবেলা করেই বাঁচতে হবে। ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ ‘ভূমিকম্পপ্রবণ’ এলাকা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বলেন, ‘ভূমিকম্পের কথা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। যত উন্নতি, তত ভূমিকম্পের প্রবণতা বাড়বে।’ প্রতিটি বড় আবাসিক প্রকল্প বা স্থাপনায় জলাধার রাখার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। বন্যা মোকাবেলায় পানির গতিধারা ঠিক রাখার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘জলাধার যেন উন্মুক্ত থাকে। পানির গতিধারা যেন ঠিক থাকে।’ প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ‘ফায়ার স্টেশন’ নির্মাণে সরকারের পরিকল্পনার কথাও প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন। অতীতে ‘বিল্ডিং কোড’ না মেনে দালান নির্মাণের অনুমতি দেয়া হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যত্রতত্র দালান করে ফেলে। আর পরবর্তীতে ডিজাস্টার দেখা দেয়। উদ্ধারের কোন ব্যবস্থাই রাখা হয়নি।’ দুর্যোগ মোকাবেলা ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সংশ্লিষ্টদের যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনেরও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। অতীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটলে বিদেশ থেকে সহায়তা নেয়ার প্রবণতা বেশি ছিল মন্তব্য করে ১৯৯৮ সালের বন্যা মোকাবেলায় তখনকার আওয়ামী লীগ সরকারের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। ‘সে সময় ৫৯ দিন দেশের ৭০ ভাগ এলাকা পানির নিচে ছিল। একটি মানুষও না খেয়ে মরেনি। বন্যায় আমরা একটি মানুষকেও মরতে দেইনি। ইচ্ছা থাকলে মানুষকে রক্ষা করা যায়; তা ’৯৮ সালে আমরা প্রমাণ করেছি। আমরা জানি, কোন্ অবস্থায় কি করলে কি মোকাবেলা করা যায়।’ ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় নতুন আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। ‘জনপ্রতিনিধিরা চান তাঁর নিজ এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি হোক। কিন্তু আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করতে হবে যেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারেÑসেটা খেয়াল করেই আশ্রয়কেন্দ্র বানাতে হবে।’ উপকূলীয় এলাকায় বনায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে নারিকেল বা তাল জাতীয় গাছ লাগানোর জন্যও কর্মকর্তাদের তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। সারাদেশে তিন হাজার ৭৫১ আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সত্যিকার ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করতে হবে। তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।’ ‘ভবন নির্মাণের সময় আগে কখনোই নিরাপত্তার ব্যবস্থা হয়নি, বতর্মান সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া শুরু করেছে।’
×