ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শতক- সাকিবের অলরাউন্ড নৈপুণ্য

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৬ নভেম্বর ২০১৪

শতক- সাকিবের অলরাউন্ড নৈপুণ্য

স্পোর্টস রিপোর্টার, খুলনা থেকে ॥ শুরুতে ‘ফ্লাইং কিস’ দিলেন। এরপর জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে শতক (১৮০ বলে ১৩৭ রান) করার পর দুই হাত দিয়ে গ্যালারির উদ্দেশ্যে ‘হৃদয়’ দেখিয়ে দিলেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট শতকটি এমনভাবেই উদযাপন করলেন। ক্রিকেটে যা প্রথমবার দেখা গেল। ধারণা করা হচ্ছে, সহধর্মিণী শিশিরকে প্রায় তিনবছর পর করা এ শতক উদযাপন দেখিয়েছেন সাকিব। বিয়ের পর যে প্রথম শতক হাঁকালেন। তবে শতক করার পর নিজের ফেসবুক পেজে ভক্ত-সমর্থকদের এ শতক উদযাপনের কথা জানিয়ে দিয়েছেন সাকিব। লিখেছেন, ‘আপনাদের ভালবাসা আর সমর্থনের কারণেই আজকের এই আমি। এই সেঞ্চুরিটি আপনাদের সবার জন্যই উৎসর্গ করা হলো। চলুন একত্রে একটি সুন্দর ও ইতিবাচক বাংলাদেশের পথে এগিয়ে চলি।’ দুঃসময়ে যে ভক্তরা সাকিবকে সমর্থন জুগিয়ে চলেছেন, তারই প্রতিদান দিলেন এ অলরাউন্ডার। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে খুলনা টেস্টে বাংলাদেশ ভাল অবস্থানে আছে। অন্তত হার হবে না, এটা মোটামুটি নিশ্চিত হয়েই আছে। সাকিবও সেই কথাই যেন তৃতীয় দিনের খেলা শুরুর আগে জিটিভিকে বলতে চাইলেন, ‘শতক পেয়ে অনেক ভাল লাগছে। দলও ভাল অবস্থাতেই আছে। এখন এখান থেকে দ্রুত জিম্বাবুইয়েকে বেঁধে রাখতে পারলে ভাল হবে।’ সাকিব ফেসবুকে ও জিটিভিতে কথা বলেছেন। কিন্তু যেখানে দিন শেষে সেরা এ তারকাকে দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসার কথা, সেই কাজটিই করেননি সাকিব। তা যে ঠিক হয়নি, সবাই একমত। কিন্তু কেন আসেননি সাকিব? এমন প্রশ্নও উঠছে। বিসিবির মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমাম জানিয়েছেন, ‘এটি আসলে টিম ম্যানেজম্যান্টের সিদ্ধান্ত, এর বেশি কিছু আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। খেলোয়াড়দের রিফ্রেস হতে সময় লাগবে তাই হয় তো ম্যানেজম্যান্ট দ্রুত কোচকে পাঠিয়েছেন।’ এ নিয়ে কোচ হাতুরাসিংহেও একই কথা বলেছেন, ‘এটি টিম ম্যানেজম্যান্টের সিদ্ধান্ত। তারাই নির্ধারণ করেছেন যে কে এখানে আসবে।’ দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন সঙ্কট? কোচকে প্রশ্ন করতেই উত্তর আসে, ‘সব ঠিক আছে। দলে খেলার অবস্থা দেখেও তো এটা বোঝা যায়।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সাকিব খানিকটা ইনজুরিতে পড়েছেন। দ্রুত তাঁর সেরে ওঠার জন্যই কাজ চলছিল। তাই সাকিব সংবাদ সম্মেলনে আসতে পারেননি। কী হয়েছে সাকিবের? জানা গেছে, সকালে ব্যাটিংয়ের সময় নাকি একটা বল পায়ে লাগে। চোট পান সাকিব। মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতি হয় যখন সাকিব তখন চোটের জায়গাতে বরফ দেন। দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করতেই সাকিবের স্থানে ‘আইস বাথ’ দেয়া হয়। এসব করতে করতে সময়ও অনেক চলে যায়। আর সংবাদ সম্মেলনে আসা হয়নি। এ সিরিজে অংশ নেয়ার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। কিন্তু সাকিব শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ থাকায় খেলতে পারেননি। দুই মাসের বেশি সময় ক্রিকেট খেলা থেকে দূরে থাকার পর অবশেষে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে খেলতে নেমে দ্বিতীয় টেস্টেই শতক হাঁকিয়ে দিয়েছেন সাকিব। দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি কেন সেরা। এ শতকের আগে ২০১১ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে শতক করেছিলেন সাকিব। ১৯ ইনিংস পর আবার সাকিব শতক পেলেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে যে ১৪৪ রান করেছিলেন, সেটিই সাকিবের টেস্ট ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ইনিংস। মনে করা হচ্ছিল, সেই ইনিংসটি অতিক্রম করবেন সাকিব। কিন্তু পারলেন না। ১৮০ বলে ১৮ চার ও ২ ছক্কায় ১৩৭ রান করতেই আউট হয়ে যান এ অলরাউন্ডার। ওয়েলারের বলে বোল্ড হয়ে যান। আরও চারটি শতক হতে পারত সাকিবের। শতকের এত কাছে গিয়েও পারেননি। ‘নার্ভাস নাইনটিজে’ই আউট হয়ে যান। প্রথম শতক পাওয়ার আগে দুইবার, দ্বিতীয় শতক পাওয়ার আগে একবার ও তৃতীয় শতক পাওয়ার আগে একবার ‘নার্ভাস নাইনটিজে’ আউট হন সাকিব। ৮০’র ঘরে আউট হন তিনবার। এ নিয়ে সাকিব তৃতীয় টেস্ট শতক করলেন। ২০০৭ সালের মে মাসে টেস্ট অভিষেক হওয়ার প্রায় ৩ বছর পর ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ১০০ রান করেন সাকিব। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট শতক পান। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে শতক পেতে প্রায় ২ বছর অপেক্ষা করতে হয়। এবার যখন আবারও শতক পেলেন, সেটি পেতেও অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রায় ৩ বছর! এর মধ্যে আবার সাকিবের বিয়েও হয়েছে। বিয়ের পর প্রথম শতক করেছেন।
×