ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তবে কী ঝুলে গেল খুলনা টেস্ট?

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৬ নভেম্বর ২০১৪

তবে কী ঝুলে গেল খুলনা টেস্ট?

মাসাকাদজা (১৫৪ অপ:)-চাকাবভার (৭৫ অপ:) ব্যাটে লড়াছে জিম্বাবুইয়ে, ৩৩১/৫ মিথুন আশরাফ, খুলনা থেকে ॥ এত সুন্দর খেলা হলো। অথচ শেষপর্যন্ত ঝুলে গেল বাংলাদেশ-জিম্বাবুইয়ের মধ্যকার দ্বিতীয় টেস্ট। টেস্টে যে কোন সময় অঘটন ঘটে। কিন্তু বিশেষ কোন ‘অঘটন’ না ঘটলে খুলনা টেস্ট যে ড্র’র দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তা বলাই যায়। এমনটি হয়েছে শামসুর রহমান শুভর একের পর এক ক্যাচ মিসেই। বাংলাদেশকে কী বিপাকেই না ফেললেন শুভ। হ্যামিল্টন মাসাকাদজার একের পর এক ক্যাচ মিস করে দলকে বিপর্যস্ত অবস্থায় ফেলে দিয়েছেন। তামিম ইকবাল (১০৯) ও সাকিব আল হাসানের (১৩৭) জোড়া শতকের বিপরীতে সেই মাসাকাদজাই (১৫৪*) শেষপর্যন্ত জিম্বাবুইয়েকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তার সঙ্গে আছেন চাকাবভা (৭৫*)। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৪৩৩ রানের জবাবে তৃতীয় দিন শেষে প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটে ৩৩১ রানও করে ফেলেছে জিম্বাবুইয়ে। পিছিয়ে রয়েছে ১০২ রানে। বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় একটি ম্যাচের মৃত্যু বোধ হয় শুভর হাত ধরেই হতে চলেছে। ব্যাটিংয়ে দলকে তো ভাল কিছু দিতে পারছেনই না, আবার ফিল্ডিংয়েও ক্যাচ মিস করছেন। এ ক্রিকেটার যে কেন দলে থাকার যোগ্য, তা কাররই বোধগম্য নয়। দ্বিতীয় দিনে শতক করার পর একজন সাদামাটা উদযাপন করলেন। শুধু মিষ্টি হাসি দিলেন। আর ব্যাট উঁচু করে ধরলেন। তিনি বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবাল। আরেকজন শতক উদযাপন করতে গিয়ে একটি নতুন স্টাইলই তৈরি করে ফেললেন। ফুটবলে দেখা গেলেও ক্রিকেটে যা এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। দুই হাত দিয়ে ‘হৃদয়’ বানিয়ে গ্যালারির দিকে হাত উঁচু করে ধরলেন। তিনি বাংলাদেশ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এই দুইজনের জোড়া শতকে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে বড় স্কোরও করে ফেলল। কিন্তু শামসুর রহমান শুভ দুর্দান্ত এ সাফল্যে যেন ঘি ঢেলে দিলেন। মাসাকাদজার দুটি ক্যাচ মিস করলেন। মাসাকাদজা এ সুযোগ পেয়ে দলকে শুধু ফলোঅন থেকেই বাঁচাননি। নিয়ে গেছেন আরও বহুদূর। দলকে হার থেকেও বাঁচিয়ে দিয়েছেন, বলাই চলে। ম্যাচ থেকে এখন ফল বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। যদি ‘অঘটন’ কিছু না ঘটে। আজ জিম্বাবুইয়ে চতুর্থদিনে খেলতে নামবে। যদি আরও বড় কিছু করে জিম্বাবুইয়ে অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে অনেক এগিয়ে যায়, তাহলে আর ড্র ছাড়া বিকল্প থাকবে না। কিন্তু যদি প্রথম সেশনেই জিম্বাবুইয়ে গুটিয়ে যায়। বাংলাদেশ চতুর্থদিনেই জিম্বাবুইয়ে থেকে অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারে। পঞ্চমদিন প্রথম সেশনে একটা বড় স্কোর দাঁড় করাতে পারে। এরপর ইনিংস ঘোষণা করে দিয়ে জিম্বাবুইয়েকে অলআউট করে দিতে পারে, তাহলে ফল বের হওয়া সম্ভব। আবার বাংলাদেশেরও হারের সম্ভাবনা তখন উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। জিম্বাবুইয়ে প্রথম সেশনে অলআউট হলে যদি বাংলাদেশও দ্রুত গুটিয়ে যায়। দ্বিতীয় দিন এত সুন্দর একটা দিন মিলল। প্রথমবারের মতো দুই বন্ধু ‘তামিম-সাকিব’ মিলে বড় জুটি গড়লেন। আবার দুইজনই শতক উপহার দিলেন। তামিম করলেন টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চম শতক। চার বছর পর সেই শতক আসল। আর সাকিব করলেন তৃতীয় শতক। তারও তিন বছর পর শতক আসল। দুইজনই ক্যারিয়ার শুরু করেন একসঙ্গেই। পথচলাও একসঙ্গেই। জাতীয় দলেও দাপটের সঙ্গেই খেলছেন। কিন্তু মাত্র ৩টি জুটিই এর আগে এই দুইজন গড়তে পেরেছিলেন। ৩৮, ৪ ও ৪২ রানের জুটিগুলো ছিল। কিন্তু এবার চতুর্থ উইকেটে ১৩২ রানের জুটি গড়ে ফেলেছেন এই দুইজন। তামিম-সাকিব ছাড়া যেন দ্বিতীয় টেস্টে আর কেউই নেই। প্রথমদিন ধীরস্থিরে এগিয়ে গিয়ে ৩ উইকেটে ১৯৩ রান করেছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দিনে তামিম-সাকিবের শতকে বাকি ৭ উইকেটে ২৪০ রান যোগ করে। মাহমুদুল্লাহ ৫৬, তাইজুল ৩২, শাহাদাত ১৮ রান করেন। বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হতেই জিম্বাবুইয়ে প্রথম ইনিংসে খেলতে নেমে ১ উইকেটে ৫৩ রান করে দ্বিতীয় দিন শেষ করে। মাসাকাদজা ১৫ রানে ও চারি ২১ রানে অপরাজিত থাকেন। সেখান থেকে তৃতীয় দিনে ব্যাট হাতে নামেন দুইজন। চারি ২৫ রানে আউট হয়ে গেলেও মাসাকাদজা ঠিকই অপরাজিত থাকেন। তবে বাংলাদেশ বোলাররা মাঝপথে জিম্বাবুইয়েকে ঘিরে ধরে। ১৮৯ রানেই ৫ উইকেট হারায় জিম্বাবুইয়ে। টেইলর ৩৭, এরভিন ১৭ ও চিগুম্বুরাকে ১ রানে আউট করা গেছে। তাইজুল ২টি ও সাকিব ৩টি উইকেট নিয়ে জিম্বাবুইয়ে ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপও প্রয়োগ করেন। কিন্তু মাসাকাদজাকেই যে সাজঘরে ফেরানো যায়নি। মাসাকাদজার সঙ্গে চাকাবভা যোগ দেন। দুইজন মিলে জিম্বাবুইয়েকেই এখন এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। মাসাকাদজাকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছেন চাকাবভা। ১৪২ রানের জুটিও গড়ে ফেলেছেন দুইজনই। আজ ম্যাচের চতুর্থদিনে মাসাকাদজা ও চাকাবভা ব্যাট হাতে নামবেন। দলকে ম্যাচ থেকে বাঁচাতে নামবেন। যদি জিম্বাবুইয়ে মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতির পরও খেলতে থাকে তাহলে ম্যাচটি ঝুলেই যাবে। এখনও যে আড়াই ইনিংস বাকি। দুই দলের একটি করে দুই ইনিংস ও জিম্বাবুইয়ে ৫ উইকেট হারানোয় অর্ধেক ইনিংস। নিশ্চিত ড্র’র পথেই তাহলে এগিয়ে যাচ্ছে খুলনা টেস্ট।
×