ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

’২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মে.ও. বিদ্যুত উৎপাদন হবে

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৬ নভেম্বর ২০১৪

’২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মে.ও. বিদ্যুত উৎপাদন হবে

সোলার হোম সিস্টেমের ৩০ লাখ অতিক্রম অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা হবে। এর মধ্যে ১০ ভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে সংস্থান করা হবে। বুধবার দেশে সোলার হোম সিস্টেমের সংখ্যা ৩০ লাখ অতিক্রম উদ্যাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। এ জন্য আগামী তিন বছরের মধ্যে আরও তিন মিলিয়ন সোলার হোম সিস্টেম গ্রামীণ এলাকায় প্রতিস্থাপন করা হবে। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করে উন্নত জীবন দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদারীপুরের চর জানাজাতের সোলার হোম সিস্টেমের গ্রাহক মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলে এর উপকারিতা সম্পর্কে খোঁজ নেন। ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল) বুধবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সোলার হোম সিস্টেমের সংখ্যা ৩০ লাখ অতিক্রম উদ্যাপন করে। দেশের গ্রামীণ এলাকায় সোলার হোম সিস্টেম জীবন মানের বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় গ্রিড লাইন নেই সেখানের মানুষ বিকল্প উপায়ে সোলার হোম সিস্টেমের মাধ্যমে বিদ্যুত পাচ্ছেন। দেশের বিদ্যুত ব্যবহারকারী ৬২ ভাগ জনগোষ্ঠীর পাঁচ থেকে সাত ভাগ লোক সোলার বিদ্যুতের ওপর নির্ভর করছেন। এখন দুর্গম চরেও সোলার বিদ্যুতের আলো পৌঁছে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের চাহিদা পূরণ করে উন্নত জীবন দেয়াই আমাদের লক্ষ্য। আমরা চাই দ্রুত সম্ভব বিদ্যুত উৎপাদন এবং তা মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে। আগামীতে আমরা প্রত্যেকটি ঘরে বিদ্যুত দিতে চাই। দেশে বিদ্যুত উৎপাদনের পাশাপাশি আঞ্চলিক এবং উপ আঞ্চলিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলো সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুত আমদানির জন্য এবং ওই দুই দেশের বিদ্যুত প্রকল্পে বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর আমরা বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। সবার জন্য বিদ্যুত সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করতে চাই। এর মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তি হতে আসবে ১০ শতাংশ বিদ্যুত। তিনি বলেন, গ্রামের মানুষের কাছে বিদ্যুত এখন মৌলিক চাহিদার মতো হয়ে গেছে। বিগত ২০০৯ সালের পর দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাপক হারে বাড়তে শুরু করেছে। কিন্তু এখনও ৩৮ ভাগ মানুষের কাছে বিদ্যুত পৌঁছায়নি। ডিজেলচালিত পাম্প এবং এবং মিনিগ্রিডগুলো সোলার গ্রিড দিয়ে প্রতিস্থাপন হচ্ছে। নবায়নযোগ্য বিদ্যুত পরিবেশ দূষণ রোধে অবদান রাখতে পারে- মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, কার্বনভিত্তিক শক্তি ব্যবস্থার রূপান্তর করে একুশ শতকের জন্য একটি স্মার্ট, পরিষ্কার ও কার্যকর শক্তি ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার। এ জন্য প্রয়োজন সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগ এবং পরিবেশগত পরিকল্পনা ও প্রযুক্তি রোডম্যাপ। বিগত সময়ে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে প্রথম জাতীয় জ্বালানি নীতি প্রণয়ন এবং ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘রূপকল্প ২০২১’-এ নবায়নযোগ্য শক্তির ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সরকারের নেয়া উদ্যোগের ফলে দেশে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার অনেকগুণে বেড়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার যখন দায়িত্ব গ্রহণ করে তখন দেশে সোলার হোম সিস্টেমের সংখ্যা ছিল তিন লাখেরও কম। মাত্র সাড়ে পাঁচ বছরে তা প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে। পল্লী অঞ্চলের প্রায় দেড় কোটি মানুষ সৌরবিদ্যুত সুবিধা পাচ্ছেন। পল্লী অঞ্চলের জনগণের দোরগোড়ায় বিদ্যুত সুবিধা পৌঁছে দেয়ার ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কুটির শিল্প ও অন্যান্য পেশায় কর্মরত জনসাধারণ তাদের কর্মঘণ্টা বৃদ্ধির মাধ্যমে সৌরবিদ্যুতের সুফল ভোগ করছেন বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমানে ১২ হাজার টাকায় ২০ ওয়াটের একটি সোলার হোম সিস্টেম কেনা যায়, যা দিয়ে তিনটি বাতি এবং একটি মোবাইল চার্জার চালানো যায়। সরকার ইডকলের মাধ্যমে অনুদান ও সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করেছে। মাসিক কিস্তিতে এই সিস্টেম কেনার সুযোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি পরিবারের বাতি জ্বালানোর জন্য যে কেরোসিন খরচ হতো তার চেয়েও কম খরচে তিনি বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহার করতে পারছেন। সোলার হোম সিস্টেম কর্মসূচী ছাড়াও ইডকলের মাধ্যমে বায়োগ্যাস কর্মসূচী, উন্নত চুলা কর্মসূচী, সৌরবিদ্যুতচালিত সেচপাম্প ও মিনি-গ্রিড প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সৌরবিদ্যুতচালিত সেচ-পাম্প স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে বলেও বক্তব্যে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। আমাদের দেশে সৌর সেচপাম্পের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ১৪ লাখ ডিজেলচালিত সেচ-পাম্প রয়েছে। এগুলোর জন্য বিপুল পরিমাণ ডিজেল আমদানি করতে হয় এবং এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। সৌর সেচ-পাম্প কর্মসূচীতে অংশগ্রহণের জন্য আগ্রহী প্রতিষ্ঠান এবং সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সৌর সেচপাম্প স্থাপনের জন্য আমরা ইডকলের মাধ্যমে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানকে অনুদান ও সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করেছি। আগামী তিন বছরে ইডকলের মাধ্যমে আরও ৩০ লাখ পরিবারকে সৌরবিদ্যুত সুবিধার আওতায় আনার লক্ষ্যের কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। চর জানাজাতের মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স ॥ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদারীপুরের চর জানাজাতের মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বলেন, সৌরবিদ্যুতের সংযোগ নেয়ার আগে তার ছেলে-মেয়েরা সন্ধ্যার পরে আর লেখাপড়া করতে পারত না। তার প্রতিদিন দুই থেকে তিন কেজি কেরাসিন লাগত। এমনকি প্রতিদিন পাঁচ টাকা খরচ হতো মোবাইল চার্জ দিতে। মনোয়ারা বেগম বলেন, এখন আমার মেয়ে অনেক রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পারে। আমি সারাদিন ঘরের কাজ করে রাতে সেলাই মেশিনে কাজ করি। আমাকে আর কেরাসিন কিনতে হয় না। মোবাইল চার্জ করার জন্য কাউকে পয়সাও দিতে হয় না। মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে স্থানীয় সাংসদ নূর-ই আলম চৌধুরী লিটনও উপস্থিত ছিলেন। ওই এলাকায় বিমানবন্দরের জন্য স্থানীয়রা তাদের জায়গা দিতে প্রস্তুত রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানান আওয়ামী লীগের সাংসদ সদস্য। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলে ওই এলাকার উন্নয়ন হবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ও ইডকলের চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ মেজবাহউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্ট তৌফিক-ই-ইলাহী, বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি জোহানেস জুট বক্তব্য দেন। ইডকলের নির্বাহী পরিচালক মাহমুদ মালিক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
×