ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাকিস্তানে প্রশিক্ষিত হুজি নেতা ইব্রাহিম গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৬ নভেম্বর ২০১৪

পাকিস্তানে প্রশিক্ষিত হুজি নেতা ইব্রাহিম গ্রেফতার

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সমরাস্ত্র প্রশিক্ষক হুজি জঙ্গী ইব্রাহিমকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা দল। বুধবার সকালে গোয়েন্দা পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকা থেকে হুজি জঙ্গি মোঃ ইব্রাহিম (৪০) স্বীকার করেছে পাকিস্তানের করাচীতে হুজি জঙ্গীদের সব রকমের ভারি অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। বোমাবিস্ফোরক তৈরি এবং অস্ত্র পরিচালনায় দক্ষ ইব্রাহিম হাইকমান্ডের নির্দেশ পেলেই নাশকতা করতো বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। কড়া নিরাপত্তার কারণে বিস্ফোরক ল্যাব থেকে ‘সামান’ বা বিস্ফোরকের চালান আসতে দেরি হওয়ায় জঙ্গীদের ‘আগস্ট বিস্ফোরণে’র পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। জঙ্গী নির্মূলে কঠোর ভূমিকা পালন এবং একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের মুখোমুখি করার ‘প্রতিশোধ’ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা এবং বর্তমান সরকারের ‘পতন’ ঘটানোর লক্ষ্যে বিপুল বিনিয়োগ করেছে জামায়াত ও জেএমবি। একই সঙ্গে বর্তমান সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে হত্যা করার ভয়ংকর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যে বড় ধরনের নাশকতার ছক করেছে জামায়াত-জেএমবি। ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের এই নীলনক্সা বাস্তবায়নে বাংলাদেশে হুজি, জামায়াত এবং জেএমবি একাত্ম হয়েছে এমন তথ্য জানিয়ে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধতন সদস্য জনকণ্ঠকে বলেন, পাাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)-এর অর্থায়নে দক্ষিণ এশিয়ায় জঙ্গীবাদ বিস্তারে বড় বিনিয়োগ করেছে পাকিস্তান এবং মধ্যপ্রাচ্য। কড়া নিরাপত্তার কারণে বিস্ফোরক ল্যাব থেকে ‘সামান’ আসতে দেরি হওয়ায় জঙ্গীদের আগস্ট বিস্ফোরণের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এ তথ্য স্বীকার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার যুগ্ম-কমিশনার মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, আমরাও নিশ্চিত হয়েছি আগস্টে তাদের বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা ছিল। বাংলাদেশ থেকে জঙ্গীদের পাকিস্তানের করাচীতে নিয়ে ছোট অস্ত্র থেকে শুরু করে একে-৪৭ এর মতো ভারি অস্ত্রসহ সব ধরনের অস্ত্র, গোলাবারুদ তৈরি এবং পরিচালনার প্রশিক্ষণ দেয়া হয় নিয়মিত। সেই ধারাবাহিকতায় হুজির অপারেশন শাখার প্রধান মোঃ খাইরুল বাশার ওরফে ইব্রাহিমসহ কয়েকজনের দল এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার করাচীতে যান। করাচীতে নেমে আরও ৭-৮ ঘণ্টা গাড়িতে করে যাবার পর উঁচু পাঁচিলঘেরা একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয় ইব্রাহিমকে। সম্প্রতি তিনি দেশের বাইরে থেকে জঙ্গী প্রশিক্ষণ নিয়ে আসেন। সেই প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে ঢাকায় বিস্ফোরক তৈরির স্বয়ংক্রিয় ফ্যাক্টরি এবং চট্টগ্রামের একটি মাদ্রাসায় জঙ্গীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয় পাকিস্তান ফেরত হুজি জঙ্গীরা। বিস্ফোরক তৈরির জন্যে কারিগরি বিশেষজ্ঞ নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছিল বলে গোয়েন্দা হেফাজতে জানিয়েছে হুজির অপারেশন উইংয়ের নেতা ইব্রাহিম। গোয়েন্দা সূত্রে আরও প্রকাশ, সাম্প্রতিক সময়ে অর্থের লেনদেন নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে মতভেদ হওয়ার কারণে হুজি জঙ্গীরা চারটি ধারায় বিভক্ত হয়। হরকাত-উল-জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি বি) জঙ্গীদের এই চারটি ধারার নেতৃত্বে রয়েছে মুফতি রউফ, মুফতি হান্নান, মুফতি সাঈদ এবং মুফতি আবু জাফর। উপদলে বিভক্ত হলেও নাশকতার পরিকল্পনায় পিছিয়ে নেই নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হুজি। যত মতবিভেদই থাকুক না কেন এমনই তথ্য নিশ্চিত হয়েছেন গোয়েন্দারা। মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, আমরাও নিশ্চিত হয়েছি আগস্টে তাদের বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা ছিল। তবে আমাদের হেফাজতে আটক জঙ্গীদের স্বীকারোক্তিতে জেনেছি আগস্ট নাশকতার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যাওয়ায় হতাশায় ভুগতে থাকে হুজির জঙ্গীরা। ইব্রাহিম স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার কোমলমতি শিশুদের জঙ্গীবাদে প্ররোচিত করতো বলে আদালতে তার রিমান্ডের আবেদন করেছ পুলিশ। গোয়েন্দা সূত্রে প্রকাশ, গত ফেব্রুয়ারিতে আল জাজিরা নেতা আইমান আল জাওয়াহিরির দক্ষিণ এশিয়া আল-কায়েদা জঙ্গী দল গঠনের বক্তব্যের ভিডিও প্রকাশের পর থেকে ভারত বাংলাদেশ মায়ানমারের সীমান্ত ব্যবহার করে দক্ষিণ এশিয়ার জেএমবি জামায়াত হুজি জঙ্গীরা আরও শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানান গোায়েন্দারা। জনকণ্ঠকে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ভারতে আত্মগোপন করে আছে জেএমবির ফারুক, বোমা মিজানসহ চার শীর্ষ জঙ্গী। এই শীর্ষ জঙ্গীদের খোঁজে ভারতীয় গোয়েন্দারা বড় অংকের পুরস্কার ঘোষণা করেছে । মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, ইব্রাহিমসহ অন্য জঙ্গীদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে এদের আরও পরিকল্পনার কথা জানা সম্ভব হবে। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, জঙ্গীরা সীমান্ত এলাকা ব্যবহার করে আন্ত:রাষ্ট্রীয় জঙ্গীবাদের সম্প্রসার ঘটাচ্ছে। এদের দমন করতে হলে আন্ত:রাষ্ট্রীয় আলোচনা এবং তথ্যের আদান-প্রদান জরুরী। তা না হলে এই জঙ্গীদের দমন করা সুদূর পরাহত। জঙ্গী ইব্রাহিমকে মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার উপপুলিশ পরিদর্শক এসএম রাইসুল ইসলাম। সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মোল্লা সাইফুল ইসলাম হুজি জঙ্গী ইব্রাহিমের ছয়দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। এর আগে গত শনিবার পোস্তগোলা সেতু এলাকা থেকে মোঃ আবদুল্লাহ, মোঃ রিদওয়ান ও মোঃ সাইফুল ইসলাম নামে তিন হুজি সদস্যকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের মধ্যে মোঃ আবদুল্লাহ, মোঃ রিদওয়ান দুইজন জঙ্গী প্রশিক্ষণ নিতে পাকিস্তানে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। র‌্যাব সদস্যরা গত ২৮ নভেম্বর খিলগাঁও এলাকা থেকে এক হুজি সদস্যকে আটক করে। তার আগে ২৪ ও ২৫ অক্টোবরও উত্তরা, টিকাটুলী ও নারায়ণগঞ্জ থেকে বিস্ফোরক, ডেটোনেটর ও বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ হরকাতুল জিহাদের চার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
×