ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ৬ নভেম্বর ২০১৪

জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার প্রস্তুতি

বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় অধ্যায়-১ ঔপনিবেশিক যুগ ও বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রাম অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর : ১) বাংলার রাজ দরবারের ভাষা ফার্সি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর। উত্তর : সেনদের হটিয়ে দিয়ে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি নামক এক ভাগ্যান্বেষী তুর্কি সেনাপতি বাংলা দখল করেন। এ সূত্রে বাংলা পারস্য সভ্যতার সংস্পর্শে আসে। ১৩৩৮ সালে ফকরুদ্দিন মোবারক শাহ বাংলার স্বাধীন সুলতানি প্রতিষ্ঠা করেন যা ২শ’ বছর স্থায়ী হয়েছিল। সুলতানদের কেউই বাঙালি ছিলেন না। তাদের ভাষা ছিল ফার্সি। সেই সূত্র ধরে শাসনকার্যের সুবিধার জন্য বাংলার রাজদরকারের ভাষাও হয় ফার্সি। ২) পুঁজি পাচার বলতে কী বোঝ? বাংলা থেকে পুঁজি পাচারের কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ কর। উত্তর : দেশের অর্থসম্পদ ব্যাপক হারে দেশের বাইরে চলে যাওয়ারকে পুঁজি পাচার বলে। বাংলার শাসনকালে বিভিন্ন অজুহাতে শাসকদের বাংলার অর্থসম্পদ পাচার করতে শুরু করে। ইতিহাসে এগুলোই পুঁজিপাচার হিসেবে খ্যাত। বাংলা থেকে পুঁজি পাচারের দুটি ঘটনা নিম্নে উল্লেখ করা হলো : ১. দিল্লিতে আকবরের পরে তার পুত্র জাহাঙ্গীর মসনদে বসার পর যুদ্ধবিগ্রহ, বিলাস, বিনোদন ও শিল্প-সাহিত্যের জন্য বাংলার কোষাগার হতে অর্থসম্পদ নিতে শুরু করেন। ১৬৭৮ সালে সুবেদার শায়েস্তা খান একেবারে নগদ ৩০ লাখ টাকা ও ৪ লাখ টাকার সোনা দিল্লিতে পাঠান। ২. সুবেদার সুজাউদ্দিন তাঁর ১১ বছরের সুবেদারির সময় দিল্লিতে প্রায় ১৪ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা পাঠান। ৩. কী কারণে চতুর্দশ শতাব্দীতে বাণিজ্য বিপ্লবের সূচনা হয়? উত্তর : চতুর্দশ শতাব্দীতে ইউরোপের কোনো কোনো দেশে খনিজ সম্পদের আবিষ্কার, সামুদ্রিক বাণিজ্যের বিস্তার এবং কারিগরি বাণিজ্যিক বিকাশের ফলে অর্থনীতি তেজি হয়ে উঠেছিল। ফলে এ সময় ইউরোপে বাণিজ্য বিপ্লবের সূচনা হয়। ৪. ওয়েস্ট ফেলিয়ার চুক্তি কী? উত্তর : ওয়েস্ট ফেলিয়ার চুক্তি একটি শান্তিচুক্তি। ১৬৪৮ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধরত ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশের মধ্যে এই শান্তিচুক্তি প্রতিষ্ঠা হয়। এটি সম্পাদিত হওয়ার পর শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলে বিভিন্ন ইউরোপীয় জাতি নতুন উদ্যমে বাণিজ্যিক বিকাশের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। ৫. ইউরোপীয় শক্তিগুলো ভারতবর্ষকে বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে বেছে নেওয়ার কারণ কী? উত্তর : বাণিজ্য বিপ্লবের সূচনা হলে ইউরোপীয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও সংগঠনগুলো শক্তিশালী হতে শুরু করে। এর ফলে কাঁচামাল ও উৎপাদিত সামগ্রীর জন্য বাজার সন্ধানও জরুরী হয়ে পড়ে। কাঁচামালের প্রাচুর্য ও বাজার সৃষ্টির জন্য ভারতবর্ষ ছিল আকর্ষণীয় স্থান। আবার বাংলার মিহি কাপড়, সিল্ক এবং মসলা তাদের প্রধান আকর্ষণ হয়ে ওঠে। তাই তারা ভারতবর্ষকে বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে বেছে নেয়। ৬. ভারতবর্ষে আগমনকারী ইউরোপীয় শক্তিসমূহের বর্ণনা দাও। উত্তর : পর্তুগীজ নাবিক ভাস্কো-দা-গামা ভারতের কালিকট বন্দরে পৌঁছে ভারতবর্ষকে বিশ্ববাণিজ্য বিস্তারের প্রতিযোগিতায় নিয়ে আসেন। দক্ষ নাবিক আল বুকার্ক ভারত মহাসাগরের কর্তৃত্ব অধিকার করে পুরো ভারতের বহির্বাণিজ্য করায়ত্ত করে নেন। বাণিজ্য বিস্তারের সূত্র ধরে যেসব ইউরোপীয় শক্তি ভারতবর্ষে আগমন করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছে ১. পর্তুগীজ : পর্তুগীজরা পর্তুগালের অধিবাসী। ভাস্কো-দা-গামার নতুন জলপথ আবিষ্কারের অল্পদিন পরেই পর্তুগীজ বণিকগণ এই উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্য কুটি স্থাপন করেন। পরবর্তীতে ইংরেজ আধিপত্য বিস্তার শুরু হলে পর্তুগীজ প্রভাব খর্ব হয়। ২. ওলন্দাজ : হল্যান্ডের অধিবাসীগণ ডাচ বা ওলান্দাজ নামে পরিচিত। পর্তুগীজদের অনুকরণে তারা ভারতে আসে। বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে ১৬০২ সালে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠন করে। তারা মাদ্রাজ্যের নাগাপট্রম, কাশিমবাজার চুঁচুড়া ও বাকুড়ায় বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করেন। তারা এদেশ থেকে রেশমি সুতা, সুতি কাপড়, চাল, ডাল, তামাক ও মসলা রপ্তানি করত। ফরাসি পর্যটক বার্নিয়ের ১৬৬৬ সালে লিখেছেন, ‘ওলন্দাজরা কাশিমবাজার সিল্ক ফ্যাক্টরিতে ৭ থেকে ৮শ’ লোক নিয়োগ করে বছরে ২২ হাজার বেল সিল্ক উৎপাদন করত। ইংরেজদের সাথে টিকে থাকতে না পেরে তারা ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার দিকে চলে যায়। ৩. ইংরেজ : ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড দি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি স্থাপিত হয়। ১৬৫১ সালে হুগলিতে ও ১৬৫৮ সালে কাশিমবাজারে বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করে পরবর্তীতে তারা সৈন্য এনে ব্যবসার অধিকার লাভ করে। এর সাথে স্থানীয় শক্তি ও অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী ইউরোপীয় শক্তির ওপর প্রাধান্য বিস্তার লাভ করে। ঔপনিবেশিক বিজয়ের মাধ্যমে ভারতবর্ষে প্রায় ২শ’ বছরের শাসন শোষণ কায়েম করে। ৪. দিনেমার : ডেনমার্কের লোকদের ডেনিশ বা দিনেমার বলা হয়। ১৬১৬ সালে ডেনিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠন করে এ দেশে আসে। তাঞ্জোরের ট্রাঙ্কুবার এবং পশ্চিম বাংলা শ্রীরামপুরে বাণিজ্য কুঠি গড়ে তুললেও তারা খুব বেশি সুবিধা করে উঠতে পারেনি। ৫. ফরাসি : ইউরোপীয় শক্তিগুলোর মধ্যে সর্বশেষে আসে ফরাসিগণ। ১৬৬৪ সালে তারা ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠন করে। ধীরে ধীরে তারা সুরাট, পন্ডিচেরি, চন্দননগর, মাহে, কারিকল, মসলি পট্টম, বালেশ্বর, কাশিমবাজার প্রভৃতি স্থানে বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করে। তবে ইংরেজদের সাথে তিন দফা যুদ্ধে হেরে তারাও প্রায় এক শ’ বছরের বাণিজ্য গুটিয়ে ইন্দোচীনের দিকে চলে যায়। এভাবে ইউরোপীয় নানা শক্তি বাণিজ্যের সূত্র ধরে ভারতবর্ষে আগমন করে ও অর্থনৈতকি শোষণ করতে থাকে। ৭. বহিরাগত শাসনামলে বাংলার অবস্থা কেমন ছিল? উত্তর : বাংলার ইউরোপীয় শক্তির বিকাশকালীন এদেশের প্রজাদের অবস্থা বেশ শোচনীয় ছিল। মূলত জাহাঙ্গীরের আমল থেকে বাংলা থেকে ক্রমাগত পুঁজি পাচারের ফলে প্রজাদের ওপর শোষণ নিপীড়ন অনেকখানি বেড়ে যায়। সুবেদার শায়েস্তা খানের আমলে জিনিসপত্রের দাম সস্তা হলেও জনগণের অর্থনৈতিক দশা এতটাই খারাপ ছিল যে তাদের ক্রয়ক্ষমতা বলতে আসলে কিছুই ছিল না। তাই চালসহ নিত্য ব্যবহার্য জিনিসের দাম অবিশ্বাস্য রকমের কম হলেও তা প্রজাদের কোনো উপকারে আসেনি। শায়েস্তা খানের কর্মচারীরা সাধারণ মানুষকে এমন শোষণ করতে যে পশুখাদ্যের (মূলত ঘাস) ব্যবসা ও তাদের এক চেটিয়া ছিল। ১৩ বছরের সুবেদারিতে শায়েস্তা খান যে পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছিলেন তা তখনকার বিশ্বে বিরল। তিনি অন্তত ৩৮ কোটি টাকার মালিক ছিলেন। তার দৈনিক আয় ছিল দুই লাখ টাকা। তার ওপর ভারতে মারাঠা শক্তির উদ্ভব হলে তারা বাংলার বারবার হামলা চালাতে থাকে। স্থানীয় ভাষায় এদের বর্গী বলা হতো। তাই বাংলার একটি ছড়া থেকে তৎকালীন সমাজের পরিচয় পাওয়া যায়Ñ খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো/ বর্গী এলো দেশে/ বুলবুলিতে ধান খেয়েছে/খাজনা দেবে কীসে? ৮. ছিয়াত্তরের মন্বন্তর কী? উত্তর : দেওয়ানি লাভের পর বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা ইংরেজদের হাতে চলে যায়। রাজস্বের দায়িত্ব পেয়ে ইংরেজরা প্রজাদের ওপর অতিরিক্ত করের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে তা আদায়ে প্রচ- চাপ সৃষ্টি করে। এর ওপর পরপর তিন বছর অনাবৃষ্টির ফলে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। তখন বাংলা ১১৭৬ সন। এটি ইতিহাসে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত। এই দুর্ভিক্ষে প্রায় এক কোটি লোক মারা যায় যা সেকালের বাংলার জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ, ধারণা করা হয় প্রকৃত মৃতের সংখ্যা এরও অধিক। ৯। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বলতে কী বোঝায়? উত্তর : চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বলতে অনুগত জমিদারদের সাথে জমির ইজারা সংক্রান্ত দীর্ঘস্থায়ী বন্দোবস্তকে বুঝায়। বাংলার গভর্নর লর্ড কর্নওয়ালিস কর্তৃক জমি বন্দোবস্তের নতুন ব্যবস্থা গৃহীত হয়। এ লক্ষ্যে তিনি প্রথমে অনুগত জমিদারদের সাথে ১০ বছরের দশসনা বন্দোবস্ত করেন ১৭৯০ সালে। এই দশসনা পরবর্তীতে ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হিসেবে রূপ লাভ করে। ১০. বাংলার পরাজয় ও ঔপনিবেশিক শক্তির বিজয়ের কারণগুলো কী কী? উত্তর : পাল বংশের পর থেকেই বাংলায় বহিরাগত শাসন চলতে থাকে। বহিরাগত শাসকদের ক্রমাগত পুঁজি পাচার, অর্থনৈতিক শোষণ, অতিরিক্ত করের বোঝা বাংলার জনগণের আর্থিক দুর্দশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শাসকদের শোষণ, বর্গীদের হামলা, দুর্ভিক্ষের ফলে জনজীবন দুর্বিষহ। নবাব আলীবর্দীর মৃত্যুর পর তার ২২ বছর বয়সী নাতি, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সিংহাসনে বসেন, সিরাজের বড় খালা ঘসেটি বেগম, সিপাহসালার মীর জাফর খান, ক্ষমতালোভী স্বার্থন্বেষী বণিকগণ ইংরেজদের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। এর ফলে পলাশীর যুদ্ধে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব তথা বাংলার পরাজয় ঘটে। এ ছাড়া ২শ’ বছরের শোষণে শাসকদের প্রতি বিমুখ ও উদাসীনতা, স্বাধীনতার অবসান সম্পর্কে ধারণার অভাব। বাংলার শাসকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ইংরেজদের ধূর্ত পরিকল্পনা বোঝার মতো রাজনৈতিক-সামাজিক শক্তির অভাবেই বাংলার পরাজয় ও ঔপনিবেশিক শক্তির বিজয়ের প্রধান কারণ। ১১. ব্রিটিশবিরোধী অন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতি কি? উত্তর : ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল সমগ্র ভারতবর্ষে। বাংলার সেই আন্দোলন বেশ অগ্রসর ও জোরালো ছিল। বাঙালির স্বদেশ চেতনার আবেগ জোরদার হবার কালে স্বদেশী আন্দোলন, স্বরাজ আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, সশস্ত্র যুদ্ধ বিগ্রহ ইত্যাদি ঘটে। এসব নিরবচ্ছিন্ন ও ধারাবাহিক আন্দোলনের ফলেই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটে। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের নেতৃত্বে দ্বন্দ্বে বাংলার হিন্দু-মুসলমান পরিচয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ফলে ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগ দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভক্তির ফর্মুলা প্রদান করে এবং এর সূত্র ধরেই ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি নতুন রাষ্ট্রের সূচনা ঘটে, যা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত ফল। ১২. ঔপনিবেশিক আমলে আধুনিক শিক্ষার প্রভাব ব্যাখ্যা কর। উত্তর : ইংরেজরা তাদের শাসন পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে দেশীয়দের মধ্য থেকে ইংরেজী শিক্ষিত একটি অনুগত শ্রেণি তৈরিতে মনোযোগ দেয়, যার ফলে কলকাতা মাদ্রাসা, সংস্কৃত কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অসংখ্য শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। আধুনিক শিক্ষার ফলে স্থানীয় মানুষের মধ্যে নতুন চেতনার স্ফুরণ ঘটতে থাকে। প্রচলিত বিশ্বাস, সংস্কার, বিধান সম্পর্কে বাস্তবধর্মী চেতনার বিকাশ ঘটল। আধুনিক শিক্ষা ও জাগরণের ফলে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ ঘটেছিল সেই সাথে স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা ও গণতান্ত্রিক অধিকার রোধেরও উন্মেষ ঘটতে থাকে। স্বদেশী আন্দোলনে আগ্রহ বৃদ্ধি পায় এবং সমগ্র বাংলায় ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে দেশপ্রেম ও রাজনৈতিক চেতনায় জোয়ার আসে। ১৩. মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা কর। উত্তর : মুসলমান সমাজের দাবি-দাওয়া, শিক্ষা, রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য ঢাকায় ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। মুসলমানদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এই দল গঠন করেন। ভারতের মুসলমানদের রাজনৈতিক অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা ইত্যাদি ছিল মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য। এ দলটির উদ্দেশ্য ছিল চাহিদাও প্রয়োজন সরকারের নিকট ব্যক্ত করা, সরকারের সঙ্গে মুসলমানদের সুসম্পর্ক গড়ে তোলা। ১৪. দ্বৈতশাসন বলতে কী বোঝ? উত্তর : রবার্ট ক্লাইভ দ্বিতীয়বারের মতো বাংলায় ১৭৬৫ সালে গভর্নর হয়ে আসে। অন্যদিকে কোম্পানি সম্রাটকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় রাজস্ব আদায়ের জন্য ২৬ লক্ষ টাকা দিয়ে ক্ষমতা দখল করে। এইভাবে কোম্পানি রাজ্যের রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব বা দেওয়ানি লাভ করে। কোম্পানির হাতে রাজস্ব ও প্রশাসন ধরে রেখে ক্ষমতাহীন নবাবকে সিংহাসনে রাখে। সিংহাসনে নবাবকে প্রশাসন কার্যের জন্য বসিয়ে রাখার আড়ালে কোম্পানির হাতে রাজস্বর দেওয়ানি ও দায়িত্ব থাকার সময়কে ইতিহাস দ্বৈত শাসন নামে চিহ্নিত করা হয়। দুই ধরনের শাসনকে একইসঙ্গে কার্যকর করে রবার্ট ক্লাইভ যে শাসন ব্যবস্থা জারি রেখেছিলেন তাই মূলত দ্বৈতশাসন। ১৫. ভাগ কর শাসন করÑনীতি কী? ব্যাখা কর। উত্তর : ব্রিটিশ সরকারের সময়ে লর্ড কার্জন বাংলায় রাজনৈতিক সচেতনতার বিষয়ে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তিনি আশঙ্কা করেছিলেন বাঙালি মধ্যবিত্ত ও বুদ্ধিজীবীরা ক্রমশ জাতীয়তাবাদ ও রাজনীতি-সচেতন হয়ে উঠছে বাংলার একতা বিনষ্ট করে শাসন কার্যে সফলতা আনার লক্ষ্যে তিনি ভাগ কর ও শাসন কর নীতি প্রয়োগ করে বাংলাকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন এতে বাঙালিরা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং বাংলা থেকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন শক্তিহীন হয়ে পড়বে। ১৬. সিপাহি বিদ্রোহ বলতে কী বুঝ? উত্তর : কোম্পানি শাসনের প্রায় এক শ’ বছর পরে ১৮৫৭ সালে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সিপাহিদের মধ্যে বিদ্রোহ দেখা দেয়। সিপাহিদের বিদ্রোহ বাংলার তথা ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্বাধীনচেতা সমর্থকগোষ্ঠীর সমর্থন পায়। গুলির কার্তুজে গরু ও শুকরের চর্বি মেশানো থাকায় তা একই সঙ্গে হিন্দু মুসলিম উভয় ধর্মের সৈনিকদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে। ফলে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সিপাহি বিদ্রোহ ঘটে। বাংলার সিপাহি মঙ্গল পান্ডে ও হাবিলদার রজব আলী এ বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন। উন্নত অস্ত্র ও দলীয় পৈশাচিক বাহিনীর দ্বারা তারা এ বিদ্রোহ দমন করে। তবে উপমহাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে সিপাহি বিদ্রোহ ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য অংশ।
×