ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভোলার চরাঞ্চলে পাকছে ধান, বাড়ছে শঙ্কা

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ৬ নভেম্বর ২০১৪

ভোলার চরাঞ্চলে পাকছে ধান, বাড়ছে শঙ্কা

হাসিব রহমান, সিকদার চর থেকে ফিরে ॥ সিকদার চর। দুর্গম এক জনপদের নাম। হামলা মামলা নির্যাতন চরবাসীর নিত্য সঙ্গী। প্রায় ১৩শ’ একর জমির ধান লুট করতে বছরের পর বছর ধরে চলছে বর্বর নির্যাতন। ঘটেছে এসিড নিক্ষেপের মতো লোমহর্ষক তা-ব লিলা। ২ যুগ ধরে মামলা হামলা চললেও প্রায় দুই হাজার ভূমিহীন মানুষ কোন প্রতিকার পাচ্ছে না। চরে প্রায় ৫শ’ অসহায় পরিবারকে জিম্মি করে ভূমি বন্দবস্ত দেয়ার নামে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ধান কাটার মৌসুম আসার ২ মাস আগেই ভোলার সর্ব দক্ষিণ চরফ্যাশন উপজেলার নজরুল নগর ইউনিয়নের সিকদার চরে লাঠিয়াল জোতদারদের হুঙ্কার শুরু হয়ে গেছে। চর দখলে নিতে চলছে নানা প্রস্তুতি। চরে গেলে ভেসে আসে ভূমিহীনদের চাপাকান্নার আওয়াজ। সরেজমিনে জেলা শহর থেকে একশ’ কিলোমিটার দূরবর্তী উত্তাল বুড়াগৌরঙ্গ নদী পাড়ি দিয়ে সিকদার চরে গেলে এসব ঘটনার সত্যতা মেলে। ভূমিহীনরা জানান, ধানকাটার আগে পুলিশের একটি ক্যাম্প স্থাপন না করলে বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে বুধবার ভোলা জেলা প্রশাসক মোঃ সেলিম রেজার দৃষ্টি আর্কষণ করা হলে তিনি বলেন, ওই চরে ভূমিবন্দবস্ত দেয়া বন্ধ। যেসব কৃষক ধান আবাদ করেছে তারাই ধান কটতে পারে তার নিশ্চয়তা দেয়া হবে। চরফ্যাশন উপজেলার পশ্চিমে বুড়াগৌরঙ্গ নদীর ওপারে প্রায় ৩০ বছর আগে জেগে ওঠে সিকদার চর। সোমবার দুপুরে সিকদার চরে গেলে স্থানীয়রা জানান, চরে জনবসতি গড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই মালিকানা দাবি করে চরফ্যাশনের নজরুল নগর এলাকার বাসিন্দা শাজাহান ও স্বপন গ্রুপ আদালতে মামলা দায়ের করে। চরবাসীও নিজেদের স্বার্থে ঐক্যের লক্ষ্যে গঠন করে সিকদার চর ভূমিহীন সমবায় সমিতি। তারাও সরকারের কাছে খাস জমি হিসেবে বন্দবস্তের আবেদন করে। নানা জটিলতায় ভূমিহীনদের বন্দবস্ত আটকে যায়। এরই মধ্যেই চলে ভূমিহীনদের উচ্ছেদে নানা চেষ্টা ষড়যন্ত্র। ভূমিহীনদের নেতা মন্নান মেলকার জানান, ভূমিহীনদের জন্য তিনি এবং ওই চরের মালেক মেম্বার সংগ্রাম শুরু করেন। ২০০৫ সালের ২৮ নবেম্বর চর থেকে উৎখাতের জন্য রাতের আঁধারে তাকে ও তার স্ত্রী খুরশিদা বেগমের উপর এসিড নিক্ষেপ করা হয়। এক পর্যায়ে তাকে হত্যার চেষ্টা পর্যন্ত করা হয়েছে। এ ঘটনার জন্য ওই সময় তাদের প্রতিপক্ষ শাজাহান ও স্বপন গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলা করে। পরে মন্নান মেলকার জানতে পারেন নেতৃত্বে স্বার্থে পরিকল্পিতভাবে তারই সহযোগী মালেক মেম্বার ভাড়াটে লোকজন দিয়ে এসিড নিক্ষেপ করিয়েছে। তারপর থেকে ভূমিহীনদের ঐক্যে ফাটল ধরে। মন্নান মেলকারকে কোণঠাসা করে মালেক মেম্বার শুরু করে চাঁদাবাজি। যারা টাকা দেয় তারা জমিতে ফসল ফলাতে পারে। টাকা না দিলে ধান ঘরে তুলতে পারে না কৃষক। ভূমিহীন বশার গাজি জানান, জমি বন্দবস্ত করিয়ে দেয়ার কথা বলে মালেক মেম্বার ৭০ হাজার টাকা নেয়। উল্টো ঘর পুড়িয়ে তাদের নামে মামলা দিয়ে উৎখাত করা হয়। নুর হোসেনের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা নেয়। আরও ২০ হাজার টাকা না দেয়ায় তাকে উৎখাত করা হয়। ফজর আলী ঢ়াড়ি ৫৬ শতাংশ জমিতে আমন ধান আবাদ করে। ধান কাটার আগে তার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা দাবি করেছে। টাকা না দিলে ধান নিয়ে যাবে বলে হুমকি দিচ্ছে। এসব ঘটনার প্রতিকার চেয়ে সম্প্রতি ভোলা প্রেসক্লাবে মন্নান মেলকার গ্রুপ সাংবাদিক সম্মেলন করলে মালেক বাহিনীর লোকজন আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। সোমবার সন্ধ্যার আগে কথা হয় মুজিব নগর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে সদস্য মালেক মেম্বারের সঙ্গে। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই চরের ৫০০ ভূমিহীন পরিবার ২ একর করে জমি বন্দবস্ত পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। মামলার কারণে তা এখনও কাগজ পায়নি।
×