ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বৈষম্য দূর করতে গ্রামের অর্থনীতি শক্তিশালী করতে হবে

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ২ নভেম্বর ২০১৪

বৈষম্য দূর করতে গ্রামের অর্থনীতি শক্তিশালী করতে হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে পরিবার ও গ্রামভিত্তিক সমবায় গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ধনী-গরিবের বৈষম্য দূর করতে হলে গ্রামের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হবে। গ্রামের অর্থের সঞ্চালন বাড়াতে হবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। গ্রামের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতের ব্যবস্থা করতে হবে। আর এটা একমাত্র করতে পারে সমবায়। এই সমবায়ের মাধ্যমেই দেশকে আর্থ-সামাজিকভাবে উন্নত করা সম্ভব হবে। শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘৪৩তম জাতীয় সমবায় দিবস’ ও ‘জাতীয় সমবায় পুরস্কার-২০১২’ প্রদান উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সমবায়ের মাধ্যমে উৎপাদন, বাজারজাত ও ক্ষুদ্রশিল্প গড়ে তোলার মাধ্যমে আমরা নিজেদের দারিদ্র্যমুক্ত করতে পারি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারি। সমবায়ের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদী ভাঙ্গনে অনেক মানুষ গৃহহারা হয়ে যায়। তারাও মানুষ। আমরা একদিকে দেখব বিশাল বিশাল অট্টালিকা, বিদেশ থেকে আনা ফার্নিচার আর ঝাড়বাতি দিয়ে বিলাসবহুল জীবন। অপরদিকে মানুষ একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবে না, রাস্তার পাশে বস্তি, রেললাইনের পাশে বস্তিতে থাকতে হবে, মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে। কিন্তু কেন? এই বৈষম্য কেন থাকবে? এই বৈষম্য আমাদের দূর করতে হবে। তিনি বলেন, সমবায়ের মাধ্যমেই উৎপাদন, বাজারজাত করা ও ক্ষুদ্রশিল্প গড়ে তোলা যায়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সফল সমবায়ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখারও আহ্বান জানান। বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী দশটি ক্যাটাগরিতে ২০১২ সালের জাতীয় সমবায় পুরস্কার বিতরণ করেন। এবার কৃষিভিত্তিক গ্রাম উন্নয়নে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দ্বারিয়াপুর পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড, সঞ্চয় ঋণদানে ঢাকার সম্প্রীতি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেডের সদস্য এমদাদ হোসেন মালিক, দুগ্ধ সমবায়ে পাবনার হাটুরিয়া জগন্নাথপুর প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লিমিটেড, মহিলা সমবায়ে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ মহিলা সমবায় সমিতি লিমিটেড, বহুমুখী সমবায়ে খুলনার দৌলতপুর বাজার বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড পুরস্কার পেয়েছে। এছাড়া মৎস্যজীবী সমবায়ে পুরস্কার পেয়েছে সুনামগঞ্জের সোমা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড, মুক্তিযোদ্ধা সমবায়ে যশোরের শার্শা থানা মুক্তিযোদ্ধা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড, ভূমিহীন সমবায়ে ময়মনসিংহের পাটগুদাম দুলদুল ক্যাম্প ভূমিহীন সমবায় সমিতি লিমিটেড, যুব, বিশেষ শ্রেণী, তাঁতীসহ অন্যান্য পেশাভিত্তিক সমবায়ে পিরোজপুরের সাফা বন্দর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ভোগ্যপণ্য সরবরাহ সমবায় সমিতি লিমিটেড এবং পরিবহন শ্রমিক কর্মচারী সমবায়ে কুড়িগ্রাম জেলা মোটর শ্রমিক সমবায় সমিতি লিমিটেড। বিজয়ীদের হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরস্কার তুলে দেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব এমএ কাদের সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা এবং সমবায় অধিদফতরের মহাপরিচালক মফিজুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন এবং বিভিন্ন সমবায় সমিতির স্টল পরিদর্শন করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ভৌগোলিক সীমারেখায় আমাদের দেশ অত্যন্ত ক্ষুদ্র হলেও জনসংখ্যা অনেক। আমরা বিশাল সমুদ্র সম্পদ পেয়েছি। সেটাকেও যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে সীমিত সম্পদ ও সীমিত জমি দিয়েই ১৬ কোটি মানুষের পেটের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে, আর্থ-সামাজিক উন্নতি করতে হবে। সেটা করতে গেলে সকলকেই সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। পরিবার ও গ্রামভিত্তিক সমবায় গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পরিবার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির সম্পত্তি ভাগাভাগি হয়ে যায়। এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধও সৃষ্টি হয়। আমরা যেমন গ্রাম সমবায় করে দেব, তেমনি পরিবারগুলোও তারা নিজেরাই সমবায় করে নিজেদের সম্পত্তি ব্যবহার করে সমবায়ের মাধ্যমে উৎপাদন করবে। এ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে নিজেদের মধ্যে অংশীদারিত্বের ঝামেলাও কমে যাবে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে ১৯৭২ সালের ৩০ জুন বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন আয়োজিত সমবায় সম্মেলনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তব্য উদ্ধৃত করেন। সেই অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘আমার দেশের প্রতিটি মানুষ খাদ্য পাবে, আশ্রয় পাবে, শিক্ষা পাবে, উন্নত জীবনের অধিকারী হবে- এটা হচ্ছে আমার স্বপ্ন। এই পরিপ্রেক্ষিতে গণমুখী সমবায় আন্দোলনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের ৬৪ জেলার ৬৬ উপজেলায় ‘সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচী’ প্রকল্পের আওতায় ৪ হাজার ২৭৫টি গ্রামে গ্রাম সমবায় সমিতি গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলাকে এই কর্মসূচীর আওতায় আনা হবে। বহুতলবিশিষ্ট ক্লাস্টার ভিজেল গড়ে তোলার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, শহরের মানুষ নাগরিক সুবিধা নিয়ে ফ্ল্যাট বাড়িতে আরাম আয়েশে থাকবে, আর গ্রামের মানুষ অবহেলিত থাকবে- সেটা হতে দেয়া যায় না। সে কারণে আমরা জনপদ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা একটি এলাকায় ফ্ল্যাট বাড়ি তৈরি করব। এটি খামারের মতো হবে। এখানে গরু, মুরগির খামার থাকবে। শাকসবজি চাষাবাদের ব্যবস্থা থাকবে। আর এর মালিক হবে ফ্ল্যাটে যাঁরা বসবাস করবেন তাঁরা। তাহলে গ্রামের মানুষ ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকতে পারবে সঙ্গে সঙ্গে তাদের আয় উপার্জনের ব্যবস্থাও থাকবে। এটাও সমবায়ের মাধ্যমে আমরা করে দেব। জমিগুলোকে ভাগ না করে যৌথভাবে ফসল উৎপাদনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পরিবারগুলো ভাগ হওয়ার সঙ্গে জমিও ভাগ হতে থাকে। দুটি ক্ষেতকে আলাদা করার জন্য আইল ব্যবহার করা হয়। আমাদের সব আইল এক জায়গায় করা হলে আমাদের জেলার মতো বিশাল একটা এলাকা বেরিয়ে আসবে। তাই জমিগুলো ভাগ না করে আমরা যৌথভাবে ফসল উৎপাদন করতে পারি। পরে সেগুলো আমরা ভাগ করে নিতে পারি।
×