ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বর্ণাঢ্য আনুষ্ঠানিকতা নববধূ নিয়ে মিনিস্টার্স এ্যাপার্টমেন্টে রেলমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১ নভেম্বর ২০১৪

বর্ণাঢ্য আনুষ্ঠানিকতা নববধূ নিয়ে মিনিস্টার্স এ্যাপার্টমেন্টে রেলমন্ত্রী

মীর শাহ আলম, কুমিল্লা ॥ বর্ণাঢ্য আয়োজন আর উৎসবমুখর পরিবেশে অবশেষে শুক্রবার সম্পন্ন হলো রেলপথমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক মুজিবের বহুল আলোচিত বিয়ে। একই সঙ্গে দেশের ইতিহাসে প্রথম মন্ত্রী হিসেবে কারও কুমার জীবনের ইতি ঘটল। বিকেলে ৫ লাখ ১ টাকা দেনমোহরের ভিত্তিতে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকতা শেষে সন্ধ্যা ৬টার দিকে গ্রামের মেঠোপথ পেরিয়ে নববধূ হনুফা আক্তার রিক্তাকে নিয়ে রেলপথমন্ত্রী সড়ক পথে ঢাকার বেইলী রোডের মিনিস্টার্স এ্যাপার্টমেন্টের উদ্দেশে রওয়ানা করেন। জানা যায়, শুক্রবার বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে জাতীয় পতাকা সুশোভিত পাজেরো গাড়িতে চড়ে মন্ত্রীবর মুজিবুল হক ফুল দিয়ে অপরূপে সাজানো গাড়িতে করে পৌঁছান কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ১০নং গল্লাই ইউনিয়নের মিরাখলা গ্রামে। তাকেসহ বরযাত্রীদের ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে বরণ করে কনেপক্ষ। তার পরনে ছিল গাঢ় সোনালী রঙের শেরওয়ানি ও কিছুুটা সাদা রঙের উপর সোনালী কাজের টুপি, হাতে রুমাল। এ সময় তার গাড়িতে ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু এমপি, যুবলীগ নেতা শাহিনুল হক শাহীনসহ তার নিকটাত্মীয়রা। কিন্তু বর মন্ত্রী হলেও সরাসরি ঢুকতে পারেননি বিয়ের অনুষ্ঠানস্থ বরের আসনে। পথে বাদ সাধে ১২-১৩ বছরের ৬ শিশু খাদিজা, আলো, ময়না, দীনা, শাওন ও হেলাল। দৃষ্টিনন্দন প্রধান ফটকে মন্ত্রীবরকে আগলে দাঁড়ায় তারা। তাদের ৫ হাজার ১ টাকা নজরানা দিয়ে শিশুদের থেকে ছাড়া পেলেন মন্ত্রীবর মুজিবুল হক। পরে একটু এগিয়ে গাড়ি থেকে নেমে তিনি হেঁটে গিয়ে বসলেন বরের আসনে। ৩টি প্যান্ডেল করা হয়েছে মেহমানদের আপ্যায়নের জন্য। বাড়ির পূর্বাংশে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানাতে একটি, পশ্চিমাংশে অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য একটি এবং দুই প্যান্ডেলের মাঝে আরও একটি প্যান্ডেলে বর ও ভিআইপিদের জন্য একটি প্যান্ডেল করা হয়েছে। অতিথিদের কাচ্চি বিরিয়ানী, চিকেন রোস্ট, জালি কাবাব, আলু বোখারা, চাটনী, বোরহানী, মিনারেল ওয়াটার ও কোল্ড ড্রিংকস দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। বরকে দেয়া হয় আস্ত খাসির রোস্ট। বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে পড়ান স্থানীয় মসজিদের ইমাম কারি আবদুল লতিফ। নিকাহ্ রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করেন গল্লাই ইউনিয়নের কাজী মাওলানা ছিদ্দিকুর রহমান। ৫ লাখ ১ টাকা মূল্যের কাবিনে বর ও কনে স্বাক্ষর করেন। এ বিয়েতে উকিল করা হয় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ডিএমডি আবুল হাসেম। বিয়ের কাবিনে বরপক্ষে সাক্ষী রাখা হয় মন্ত্রীর পিএস গোলাম কিবরিয়া, চৌদ্দগ্রামের ৪নং শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহজালাল মজুমদার, চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান এবং কনেপক্ষে গল্লাই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল করিম। এ সময় কনের পরনে ছিল সোনালী রঙের শাড়ির উপর পুঁতির কাজ করা লেহেঙ্গা। অনুষ্ঠানে অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহিলা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী, জাতীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশ্রাফ, তাজুল ইসলাম, সাবেক এমপি নাসিমুল আলম চৌধুরী নজরুল, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আফজল খান এ্যাডভোকেট, জেলা পরিষদ প্রশাসক আলহাজ ওমর ফারুক, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি সফিকুর রহমান, রেলওয়ের মহাপরিচালক মোঃ তফাজ্জল হোসেন, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোল, পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তী, পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজন অংশ নেয়। কনের (হনুফা আক্তার রিক্তা) বাড়ি মিরাখোলার সবুজ ঘেরা ছোট একটি গ্রামে। যে গ্রামে লোকসংখ্যা প্রায় ১৭শ’র মতো। কিন্তু বিয়ের দিন শুধু কনের বাড়িটি ঘিরেই লোকসংখ্যা পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে ৪ হাজার। চান্দিনার কুটম্বপুর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে কনের বাড়িতে আসার সময় রাস্তার দুই পাশে ছিল সব বয়েসী মানুষের উপচেপড়া ভিড়। একটিবারের জন্য বরের হাত ছুঁতে রাস্তা ধরে দাঁড়িয়ে ছিল শত শত লোক। যাদের অধিকাংশই ব্যস্ত ছিলেন মোবাইল ফোনে ছবি ও ভিডিও করতে।
×