ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গোলামের জানাজা, আশাহত সফর ও শুভদিন

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৩০ অক্টোবর ২০১৪

গোলামের জানাজা, আশাহত সফর ও শুভদিন

স্বদেশ রায় কুখ্যাত রাজাকার ও নারী ধর্ষণকারী সাঈদীর সাজার পরিমাণ সুপ্রীমকোর্ট থেকে কমে যাওয়া, গোলাম আযমের জানাজা দেশের জাতীয় মসজিদে পুলিশ প্রহরায় হওয়ার পরে, গোটা জাতির সঙ্গে নিজেও কিছুটা হতাশ ছিলাম। এই হতাশার সময়ে নিজামীর মামলার রায়ের দিন আসে। কিছুটা দ্বিধান্বিত হলেও একটি বিশেষ স্থানে ভর করে নিশ্চিত ছিলাম নিজামীর ফাঁসি হবে। এই বিশেষ স্থানটি মাননীয় বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম। কারণ, বিচারপতি ইনায়েতুর রহিমকে যাঁরা জানেন, তাঁরা জানেন তিনি আপাদমস্তক সৎ ও দক্ষ একজন বিচারক। আমাদের দেশে সততার সংজ্ঞা ভুল দেয়া হয়। অনেক শিক্ষিত মানুষকে বলতে শুনেছি, জামায়াতের অমুক ব্যক্তি খুব সৎ। বিএনপির অমুক লোকটি খুব সৎ। এই ধরনের কথা যাঁরা বলেন, তাঁদের করুণা করা ও ঘৃণা করা ছাড়া আর কিছু করার নেই। কারণ, একটা লোক জামায়াত করে, সে কীভাবে সৎ হবে, সে নিজের দেশ মানে না, দেশের সংবিধান মানে না, দেশের জন্য যাঁরা আত্মদান করেছে তাঁদের সম্মান করে না, সে নারী ধর্ষককে সমর্থন করে, হত্যাকে সমর্থন করে, সে কীভাবে সৎ হবে? এর থেকে বড় দুর্বৃত্ত একটি দেশে আর কারা হতে পারে? তেমনি যে বিএনপি করে তার শুরুটা মিথ্যে দিয়ে। দিনের মতো সত্য বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, এই সত্যকে যে মানে না, সেখানে মিথ্যেকে হাজির করে। যে মিথ্যে বলে, মিথ্যে বিশ্বাস করে, সে কীভাবে সৎ হবে? সততা বিচার করতে গেলে দেখতে হয়, একটি মানুষের দেশ ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা কতটুকু। বিচারপতি ইনায়েতুর রহিমের এই দায়বদ্ধতা শতভাগ। তাই হতাশার কুয়াশা আকাশে জমা হলেও সূর্য হিসেবে আশা ছিল ইনায়েতুর রহিম ও তাঁর নেতৃত্বের বিচারপতিগণ। এর আগে জাতি সে উদাহরণ পেয়েছে, কারণ সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক তাঁর প্রমাণ রেখেছেন, একজন বিচারপতি ওয়াহাব মিঞা সাঈদীকে বেকসুর খালাস দেন, প্রধান বিচারপতি ও বাকি দু’জন বিচারপতি আমৃত্যু জেল দিলেও বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক তাঁর ফাঁসির রায় বহাল রাখেন। সাঈদীর ফাঁসির রায় বহাল রাখার ভিতর দিয়ে শতভাগ সততা, দেশ ও মানুষের প্রতি আনুগত্য প্রমাণ করেছেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। সাবেক বিচারপতি নাঈমুদ্দিন, সাবেক প্রধান বিচারপতি কামালউদ্দিন হোসেন ও সাবেক প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমান শেলী তাঁদের অনেক বক্তৃতায় বলে গেছেন, কোর্টের রায় নিয়ে সমালোচনা করা যায়। তাছাড়া ইন্ডিয়া, ইংল্যান্ড ও আমেরিকার পত্রপত্রিকায় দেখি রায় নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হয়। সুপ্রীমকোর্টের দেয়া সাঈদীর রায় কোন মতে সমালোচার উর্ধে নয়। এখানে বিচারপতিরাও সমালোচনার উর্ধে নন। বরং এই রায়ের ভিতর দিয়ে ভবিষ্যত বাংলাদেশের জন্য একটি দিকও বেরিয়ে এসেছে, যা হলো বাংলাদেশে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে একটা কনভেনশন অন্তত থাকা দরকার যে, স্বাধীনতার বিরোধিতার সঙ্গে যে ব্যক্তির বা তাঁর পরিবারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল তাকে বাংলাদেশে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে না। কারণ, তার কাছ থেকে দেশ কখনও সঠিক বিচার পাবে না। যেমন সাঈদী যে হত্যা ও ধর্ষণ করেছিল ও করিয়েছিল এগুলো সাধারণ হত্যা ও ধর্ষণ হিসেবে দেখার কোন সুযোগ নেই। সে এই দেশ সৃষ্টিকে ঠেকানোর জন্যে, দেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে মানুষ যাতে যোগ না দেয় এই জন্য হত্যা ও ধর্ষণ করে মানুষকে ভীত করে তুলতে চেয়েছিল। তাই সাঈদীর হত্যাকা- সাধারণ হত্যাকা-ের থেকে অনেক জঘন্য ও পরিকল্পিত। এ কারণে এখানে তার মৃত্যুদ-ের বাইরে কোন সাজা হতে পারে না। এখানে দেখা যাচ্ছে, একজন বিচারপতি তাকে বেকসুর খালাস দিয়েছে। আমাদের সমাজ গবেষক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের উচিত ওই বিচারকের নিজের ও পরিবারের ঠিকুজি খোঁজ করা। নিঃসন্দেহে রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতার ঘাটতির উপাদান তার নিজের ও পরিবারের ভিতর পাওয়া যাবে। এই রক্তে প্রবাহিত ঘাটতি ছাড়া কোনমতেই সাঈদীকে কোন সৎ বাঙালী বিচারক বেকসুর খালাস দিতে পারে না। ঠিক তেমনি ওই সুপ্রীমকোর্টের আরেক বিচারপতি এখনও বিচারপতি থাকতে পারে কিনা এ বিষয়টি নিয়ে জাতীয় সংসদে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত। কারণ, একজন বিচারপতি যখন এজলাসে বসে স্বীকার করেন, আমি একাত্তরে শান্তি কমিটির মেম্বর ছিলাম, তারপরে ওই বিচারপতি আর বাংলাদেশের সুপ্রীমকোর্টে কেন কোন কোর্টে বিচারপতি থাকতে পারেন কিনা এটা দেশের জাতীয় সংসদকে বিবেচনা করা উচিত। একাত্তরের শান্তি কমিটি বাংলাদেশের গণহত্যার মাস্টার মাইন্ড গোলাম আযমের সৃষ্টি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে শক্তি সংগঠিত করার জন্য টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করে গোলাম আযম এই শান্তি কমিটি গঠন করে। আর সেই শান্তি কমিটির মেম্বর বাংলাদেশের সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি হবেন এবং তিনি এজলাসে বসে শান্তি কমিটির পক্ষে সাফাই গাইবেন, এরপরেও দেশের সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি থাকবেন এটা কীভাবে হয়? দেশের জাতীয় সংসদ যদি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নেয় তাহলে এই জাতীয় সংসদও কিন্তু দেশের মানুষের প্রতি, দেশের স্বাধীনতার প্রতি তাদের কর্তব্যে অবহেলা করবে। যাহোক, সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের দেশ ও জাতির প্রতি এই নির্মোহ দায়বদ্ধতা সাঈদীর রায় ঘিরে সৃষ্ট হতাশার মাঝেও একটি আশা দিয়ে গিয়েছিল। এই আশা ছিল, বিচারপতি যদি সততার সঙ্গে দেশের প্রতি ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ হন তাহলে নিজামীর ফাঁসি হবে। এক্ষেত্রে বিচারপতি ইনায়েতুর রহিমের ওপর শতভাগ আস্থা রাখা রায়। তাঁর চরিত্রের দৃঢ়তা, দেশের প্রতি ও মানুষের প্রতি সৎ দায়বদ্ধতাই ছিল ভরসা। সেটা প্রমাণিত হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে বিচারকগণ জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছে। তবে অন্যদিকে কলঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। দেশের জাতীয় মসজিদে পুলিশ প্রহরায় কুখ্যাত গোলাম আযমের জানাজা হওয়া শুধু জাতির জন্য কলঙ্ক বা অপমান নয়, জাতির সমস্ত অহঙ্কার, সমস্ত বীরত্বকে ধুলোয় মিশিয়ে দেয়া। ‘বাঁধনের এক পাটি জুতো’ না থাকলে কুখ্যাত গোলাম আযমের এই জানাজা ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে আমাদের এই প্রজন্মকে ঘৃণার সামগ্রী হিসেবে উপস্থিত করত। এখন শুধু ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে এইটুকু সান্ত¡না যে একটি ছেলে অন্তত তখনও বেঁচে ছিল। আর একটি জাতিতে একজন বেঁচে থাকাও যে কত বড় তার প্রমাণ বাঁধন। সেদিন বাঁধনকে দেখে মনে হলো, জানি না বাঁধন কতটা রবীন্দ্রনাথকে পড়েছে তবে মনে হলো আমাদের এই সময়ের বাঙালীর ভিতর বাঁধনের মতো রবীন্দ্রনাথকে কেউ আত্মস্থ করতে পারেনি। আমরা বার বার গাই, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো- কিন্তু সেই চলার সাহস আমরা কেউ বুকে ধরতে পারিনি। বাঁধন পেরেছে। এখন বার বার প্রশ্ন আসছে, বাঁধনকে কেন এই জাতিকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরের লজ্জা থেকে বাঁচানোর জন্য দায়ভার নিতে হলো? অনেকে এর যোগসূত্র খুঁজছেন প্রধানমন্ত্রীর ইউনাইটেড আরব এ্যামিরাটস সফর নিয়ে। কারণ, গোলাম আযমের জানাজা ছিল প্রধানমন্ত্রীর ইউনাইটেড আরব আমিরাত সফরের দিনে। যারা ইউনাইটেড আরব আমিরাত সম্পর্কে জানেন, তারা সকলে জানেন, ওই দেশটি মূলত পাকিস্তানী জঙ্গীদের একটি ঘাঁটি। এমনকি ভারতের জঙ্গী দাউদ ইব্রাহিম থেকে শুরু করে সারাবিশ্বের জঙ্গীদের একটি নিরাপদ স্থান। বিশেষ করে, পাকিস্তানী আইএসআইয়ের সঙ্গে যোগসূত্র আছে এমন জঙ্গীদের জন্য এটা অভয়ারণ্য। এ কারণে বাংলাদেশের পাকিস্তানী আইএসআই নিয়ন্ত্রিত জামায়াত ও বিএনপির সঙ্গে এ দেশটির ঘনিষ্ঠতা অনেক বেশি। তাদেরই পরামর্শে বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দেয়ার জন্য তারা বাংলাদেশের ভিসা বন্ধ, শ্রমিক নেয়া বন্ধসহ অনেক কিছু করছে। জামায়াত ও বিএনপির জঙ্গী, তারেক রহমান অনেক কিছুর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ। যাহোক বাংলাদেশ সরকার চেয়েছিল, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন। আর এই সম্পর্ক উন্নয়নের স্বার্থেই হয়তো ছাড় দেয়া হয়েছিল গোলাম আযমের জানাজার বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীকে। সরকারে থাকলে কখনও কখনও এমন ভুল সব সরকারই করে। যেমন ১৯৭৪ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের অক্ষমতা দেখে বঙ্গবন্ধু আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করেছিলেন। সেবার জাতিসংঘ অধিবেশন থেকে ওয়াশিংটন যাবার জন্য বঙ্গবন্ধু সাংবাদিক নির্বাচনের ক্ষেত্রে এমন এক সাংবাদিক নির্বাচন করেছিলেন, যিনি পাকিস্তান ও আমেরিকার খুব ঘনিষ্ঠ। ১৯৭৫-এর পনেরো আগস্টের পর ভারতীয় পার্লামেন্টে মিস গান্ধী ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রের তথ্য উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা- নিয়ে যে বিবৃতি দেন সেখানে ওই সাংবাদিকের নাম ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে। আর ওয়াশিংটন সফর যে কতটুকু সফল হয়েছিল তার প্রমাণ তো ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের বিভীষিকাময় হত্যাকা-ে আমেরিকার ভূমিকা। এ নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। অন্যদিকে বর্তমান সরকার প্রধানের ইউনাইডেট আরব আমিরাত (ইউএই) সফর শেষ হওয়ার আগেই মির্জা ফখরুলের নাচুনিই বলে দিয়েছে সরকার গোলাম আযমের জানাজায় ছাড় দিলেও বিএনপি-জামায়াত সরকারকে ছাড় দেয়নি। তারা তাদের বন্ধু ইউএইয়ের সঙ্গে ঠিকই যোগাযোগ রেখেছিল, তাদের মূলদেশ পাকিস্তানও তাদের পক্ষে ছিল। যে কারণে সফর শেষ হওয়ার আগেই রাজাকার পুত্র মির্জা নাচতে শুরু করে দিলেন সফর ব্যর্থ হয়েছে। অর্থাৎ তারা সফল হয়েছেন। বাস্তবেও এটা সত্য, সরকারপ্রধানের এই সফর শতভাগ ব্যর্থ না হলেও একটি আশাহত সফর। যেজন্য এ সফর ছিল সেই জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে সত্যিকার অর্থে কোন লাভ হয়নি। তিনটি চুক্তি হয়েছে, যা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। আসলে প্রত্যেকটা সরকার তাদের নানান হিসাব-নিকাশ থেকে কাজ করে। তাদের কাছে নতুন তথ্য উপাত্ত আসে সেগুলো বিশ্লেষণ করে তারা সিদ্ধান্ত নেয়। হয়ত তেমনি হিসাব করেই ইউএই সফরের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল না তা মনে হয় এখন আর বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। বরং এই ভুলের সঙ্গে ইতিহাসের অন্য ভুল মিলিয়ে দেখে ভবিষ্যত চিন্তা করা উচিত। যেমন ১৯৭৪-এর বাস্তবতায় বঙ্গবন্ধুর ওয়াশিংটন সফর ভুল ছিল। কিন্তু একই ধরনের ভুলে সব সময়ই একই ধরনের উপাদান থাকে। বঙ্গবন্ধুর ১৯৭৪-এর আমেরিকা সফরে আমেরিকা ও পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ এক সাংবাদিককেই নির্বাচন করা হয়েছিল। কারণ, ব্যাখ্যা করার দরকার নেই। এখনও প্রধানমন্ত্রীর পাশে পাকিস্তান ও জামায়াতের ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক। এই ছোট ছোট মিলগুলোই অনেক বড় কিছু বুঝতে সহজ করে দেয়। সেগুলো মিলিয়ে দেখলে ভাল করবেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ চীন, জাপান, জাতিসংঘ অধিবেশনে গিয়ে একাধিক সফলতার পরে কেন এই ইউএইতে আশাহত হওয়া? অন্তত সহজ বিষয়টি, কারণ শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে ইউএইয়ের বন্ধুত্ব কখনও এভাবে হবে না। ইউএই বাস্তবে বকলমে একটি পাকিস্তান। শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে পাকিস্তানের বন্ধুত্ব হয় না। তবে হ্যাঁ, আরব বিশ্ব শেখ হাসিনার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে বাধ্য হবে। তার জন্য কোন পাকিস্তানী বা জামায়াতকে ছাড় দেয়ার দরকার নেই। বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, পশ্চিমা বিশ্ব ও এশীয় শক্তিদের এখন বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার দরকার। এর কোন বিকল্প নেই। অন্যদিকে আরব বিশ্ব আমেরিকার হাতের একটি খেলনা। আমেরিকার ইচ্ছে ছাড়া সৌদি মরুভূমিতে একটি বালু কণাও নড়ে না। তাই গণতান্ত্রিক বিশ্বে শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের নেতৃত্ব যত দৃঢ় হবে, আরব বিশ্ব ততই বাধ্য হবে শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে। এখানে পাকিস্তানীদের ছাড় দেয়ার কোন দরকার নেই। আর গণতান্ত্রিক বিশ্বে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দৃঢ় করবে এই যুদ্ধাপরাধীর বিচার। এই নিজামীদের ফাঁসি কার্যকর করা। এ নিয়ে আর বেশিদিন অপেক্ষা করা উচিত নয়। বিচার শেষ ও রায় কার্যকর করে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হবে। এরা যতদিন থাকবে ততদিন জেএমবি, হুজি ইত্যাদি এমনকি আইএস এসব পথে তারা দেশকে নেয়ার চেষ্টা করবে। তাই যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর, জঙ্গী দমনের জন্যে অবিলম্বে পুলিশের ভিতর বা আলাদা করে হলেও একটি জঙ্গী দমন বাহিনী বা ইউনিট সৃষ্টি করে দ্রুত জঙ্গী দমনের কাজগুলো করা দরকার। পাশাপাশি মনে রাখা দরকার, বিএনপি জঙ্গীর বাইরে কিছু নয়। খালেদা জিয়া জঙ্গী আশ্রয়দাতা। তাই তাদের জঙ্গী কার্যক্রমও দমন করতে হবে এ সরকারকে। এগুলো সাফল্যের সঙ্গে করলে অন্যদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতি যে গতিতে এগিয়ে চলেছে, তাতে গণতান্ত্রিক বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান আরও দৃঢ় হতে খুব বেশি সময় লাগবে না। এই সত্য পথ থাকতে গোলাম আযমের জানাজার কালিমা জাতির কপালে দিতে সহায়তা করার কোন দরকার ছিল না সরকারের। সহায়তা বলছি এ কারণে, এই জানাজার জন্য সরকার একা দায়ী নয়। জাতি হিসেবে আমরাও কিন্তু রাজাকারদের সঙ্গে আপোস করেছি। তা না হলে ওইদিন যদি ১০ হাজার মানুষ সকাল থেকে কুখ্যাত ওই নারীধর্ষক, খুনীর জানাজা ঠেকাতে জাতীয় মসজিদের সামনে জড়ো হতো, কার সাধ্য ছিল ওখানে ওই পাকিস্তানী রাজাকারের জানাজা করে। গোলাম আযমের জানাজার সপক্ষে কি মিডিয়ায় ওকলাতি হয়নি? তাই সরকারের কাঁধে সব দোষ না চাপিয়ে নিজেদের দায়ও নিজেদের নিতে হবে। গণজাগরণ মঞ্চের তরুণ-তরুণীরা কাদের ইন্ধনে তিন ভাগে ভাগ হয়ে আছে? এই বিভক্তি রাজাকার ও নব্যরাজাকারদের সহায়তা করছে। যত দ্রুত সম্ভব গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক তরুণদের এক হওয়া দরকার। ওখানে উগ্রতা কমাতে হবে, হঠকারিতা কমাতে হবে। তরুণ প্রজন্মের মনে রাখা উচিত তারা যুদ্ধে নেমেছে। কারও কারও মাথায় দেখছি হঠকারী বামবুদ্ধি অর্থাৎ সরকার মানেই সে খারাপ। এ সব ভুল থেকে বেরিয়ে এসে এক হতে হবে। মনে রাখা দরকার, তরুণ প্রজন্মের ঐক্য কাদের মোল্লার ফাঁসি নিশ্চিত করেছিল। এই ঐক্যই সকল যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি নিশ্চিত করবে। বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী আল-বদর প্রধান নিজামীর ফাঁসির রায় হওয়ার দিনটি একটি শুভদিন। কারণ, এ দিনে জাতি তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারল। তাদের উদ্দেশে বলতে পারলো, দেখ আমরা তোমাদের হত্যাকারীর বিচার করে ফাঁসির রায় দিয়েছি। এখন বুদ্ধিজীবীদের রক্তের শপথ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সমগ্র তরুণ সমাজের ঐক্য সূচনা হোক এই কামনা করি এ শুভদিনে।
×