ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাটসম্যানদের আরও দায়িত্ব নিতে হবে

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ২৯ অক্টোবর ২০১৪

ব্যাটসম্যানদের আরও দায়িত্ব নিতে হবে

মিরপুর টেস্টের উইকেটকে দুষলেন আতহার স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ প্রতিটি বল সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করা এবং খুঁটিনাটি দেখার চোখটা তাঁরই। অনেক সময় ম্যাচের আগে উইকেট দেখে তাঁরও চুলচেরা বিশ্লেষণ দিয়েছেন। বাংলাদেশ দলের সাবেক ক্রিকেটার আতহার আলী খান এখনও জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার হিসেবে দেশ ও দেশের বাইরে পরিচিত মুখ। পেশাগত দায়িত্বে থাকলেও দেশমাতৃকার টানে ভুলে যান সেসব, রক্ত ছলকে ওঠে স্পন্দিত হয় দেশের সাফল্য কামনা করে। অবশেষে স্বস্তি পেয়েছেন আতহার দীর্ঘ প্রায় এক বছর পর কোন টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিরুদ্ধে দলকে জিততে দেখে। অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমসহ দলের সব ক্রিকেটারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ১৬ কোটি মানুষকে উচ্ছ্বাসে ভাসানোর জন্য। তবে ১০১ রান তাড়া করতে গিয়ে দলকে যে কষ্টার্জিত জয় তুলে আনতে হয়েছে সে জন্য তিনি দুষেছেন উইকেটকে। বরাবরের মতোই তাঁর দাবি আন্তর্জাতিক ম্যাচে যদি এমন উইকেটে খেলতে হয় সেক্ষেত্রে অন্তত একটি ভেন্যুতে ঠিক এমন চরিত্রের উইকেটে ঘরোয়া আসর খেলার সুযোগ দেয়া উচিত ক্রিকেটারদের। নয় তো নিজেদের ঘরের মাঠে খেলা হলেও প্রতিপক্ষরাই বাংলাদেশকে কোণঠাসা করবে বলে আশঙ্কা তাঁর। তবে আগামী দুই টেস্টে ব্যাটসম্যানদের আরও দায়িত্ব নিয়ে বড় ইনিংস খেলার ওপর জোর দিলেন তিনি। দৈনিক জনকণ্ঠের সঙ্গে আলাপচারিতায় সফরকারী জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ দলের প্রথম টেস্টে জয় এবং সিরিজ নিয়ে কথা বলেছেন আরও। জনকণ্ঠ ॥ দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশ জিতেছে, এটাকে আপনি কিভাবে দেখছেন? আতহার ॥ বাংলাদেশ দলকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। প্রত্যেকটি খেলোয়াড়কে ধন্যবাদ জানাতে চাই। অনেকদিন পরে আমরা একটি টেস্ট র‌্যাঙ্কিং জাতির সঙ্গে টেস্ট ম্যাচ জিততে পেরেছি। এই আশাটা অনেকদিনের পূর্ণ হয়েছে এবং বলব আমাদের প্রাপ্যটা আমরা পেয়ে গেছি। অবশ্যই অতিরিক্ত ভাল লাগছে। জনকণ্ঠ ॥ বাংলাদেশ যখন রান তাড়া করতে গিয়ে বিপদে পড়েছিল তখন আপনার অনুভূতিটা কেমন ছিল? আতহার ॥ ওই সময় দুঃচিন্তা, নাটকীয়তা এবং মনে হচ্ছিল থ্রিলার ছবির মতো অবস্থা। কারণ কি হয় না হয় ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না। অনেক স্নায়ুক্ষয়ী খেলা দেখেছি, কিন্তু এদিন আমার রক্তচাপটা সম্ভবত অনেক বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু বিশ্বাসও ছিল যে আমাদের দেশের মাটির মান রেখে এবং দেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য তাঁরা জিতে দেখাতে পারবে। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে। যেহেতু লক্ষ্যটা বেশি ছিল না। শূন্য রানে তিনটা উইকেট পড়ার পড়েও মনে হচ্ছিল এটা আমাদের করা উচিত। জনকণ্ঠ ॥ মাত্র ১০১ রানের টার্গেটে এমন অবস্থাকে আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন? আতহার ॥ শুধু ১০১ রানের বিষয় নয়, আমরা একটু অন্য দৃষ্টিকোন থেকে দেখি। প্রথম দিনেই কিন্তু ৯০ ওভারের আগে খেলা শেষ হয়ে যায়। তিনদিনে মোট ৩৭ উইকেট পড়ে। এটা আমি দোষ বলব না। আমার মনে হয় ব্যাটসম্যানদের জন্য এটা ছিল কঠিন একটা উইকেট। ব্যাটিং করার জন্য কষ্টকর, বোলারবান্ধব উইকেট ছিল। শুধু স্পিনার নয়, আমি যদি বিশ্লেষণ করি বাংলাদেশের পক্ষে অধিকাংশ উইকেট কিন্তু স্পিনাররাই নিল। আর জিম্বাবুইয়ের দিক থেকে দেখলে তাঁদের পেসাররাই কিন্তু উইকেটগুলো নিয়েছে। টার্ন এ্যান্ড বাউন্স যেমন ছিল, গতিও ছিল। এ ধরনের উইকেটের কারণেই আমি মনে করি শুধু আমরাই নই জিম্বাবুইয়ের ব্যাটসম্যানরাও সংগ্রাম করেছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে এ ধরনেই উইকেটে আমরা আন্তর্জাতিক ম্যাচে কেন খেলছি? যদি খেলতেই হয় তাহলে ঘরোয়া আসরে এ ধরনেই পিচে আমরা খেলি না কেন? আমি কিন্তু ৫ থেকে ৭ বছর ধরেই বলে আসছি এ ধরনের উইকেট ঘরোয়া আসরে আমরা চাই। অনেক ভেন্যু আছে একটায় অন্তত এ ধরনের পিচ তৈরি করি। বোলাররা উৎসাহ পাবে এবং ব্যাটসম্যানরা শিখবে কিভাবে খেলতে হবে। নিজেদের মাটিতে, যেখানে ঘরোয়া সুবিধা নেয়ার কথা সেখানে অন্তত আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেখতে চাই না। ব্রেন্ডন টেইলর বলেছেন উইকেট ভাল ছিল। কারণ তাঁরা এমন উইকেটে অভ্যস্ত। কাজেই আবার যদি আমরা তাঁদের এ ধরনের উইকেটে খেলার সুযোগ দেই তাহলে তাঁরা জেতারও সুযোগ পেয়ে যাবে। জনকণ্ঠ ॥ এ জয়টা বাংলাদেশ দলের মধ্যে কি কোন পরিবর্তন আনবে বলে মনে করেন? আতহার ॥ শেষ লাইনটা কিভাবে ধরব এমন একটা কথা কিন্তু ক্রিকেটে আছে। সেটা ধরতে পেরে আশা যা ছিল সেটা আমরা করতে পেরেছি। কিন্তু বাংলাদেশ দলকে মনে রাখতে হবে পরের দুই টেস্টে এর চেয়ে ভাল কিন্তু খেলতে হবে এবং বিশেষ করে সেটা ব্যাটসম্যানদের। আর কিছু পরিবর্তন দেখতে চাইব। পরিবর্তন মানে টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানরা যেন আরও দায়িত্ব নিয়ে খেলে। যারা সেট হয়ে যাচ্ছেন তাঁরা উইকেট থ্রো করে চলে আসছেন। আরও লম্বা সময় তাঁদের খেলা দরকার। সে জন্য অবশ্য ভাল পিচ দরকার, তাহলে আমরা আরও রান করতে পারব। তবে মনে রাখতে হবে টেস্ট জিততে হলে আমাদের ২০ উইকেট তুলে নিতে হবে। আমি মনে করি আমাদের সেই বোলিং শক্তিটা আছে। জনকণ্ঠ ॥ তাইজুলের দুর্দান্ত নৈপুণ্য, জুবায়েরের অভিষেক ও সাকিবের প্রত্যাবর্তন নিয়ে আপনার মতামত? আতহার ॥ তাইজুল বিষয়ে বলতে গেলে আমি প্রধান নির্বাচককে ধন্যবাদ দেব। তাঁকে দলে সুযোগ করে দেয়ার পর সাকিবের অনুপস্থিতিতে প্রথম ম্যাচেই কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজে ৫ উইকেট নিল। আর এখন ৮ উইকেট নিয়ে প্রমাণ করল তিনি ভাল একজন স্পিনার। আমার মনে হয় দীর্ঘপরিসরের ম্যাচের জন্য আমরা ভাল একজন খেলোয়াড় পেয়েছি। বাংলাদেশ দলে বৈচিত্র্য দরকার। আমাদের প্রচুর বাঁহাতি স্পিনার আছে। কিন্তু কোনদিন ডানহাতি লেগস্পিনার ছিল না, সেটা আমরা দেখতে পারলাম। আরও উন্নতি দেখার বিষয় আছে। অনেক কিছু করতে হবে। কিন্তু এটা যদি সে ধরে রাখতে পারে ভাল গাইডেন্স পায় টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে তাহলে আমার মনে হয় ভয়ঙ্কর হুমকি হয়ে উঠবে প্রতিপক্ষের জন্য। সাকিবের কথা বলার নাই। সে ক্ল্যাসিক খেলোয়াড়। তিনি বাংলাদেশের নাম্বার ওয়ান খেলোয়াড়।
×